যুক্তরাজ্যের ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে এক আশ্রয়প্রার্থীর গ্রেপ্তার এবং আদালতে হাজিরার পর এসেক্সের এপিং শহরে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দ্য বেল হোটেলের সামনে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এক পর্যায়ে রূপ নেয় সহিংস সংঘর্ষে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ধূসর জামা পরা এক ব্যক্তি এক দাঙ্গা পুলিশ কর্মকর্তার মুখোমুখি হলে তাকে ঢাল দিয়ে সজোরে আঘাত করা হয়। আঘাতের ফলে তার দাঁত পড়ে গেছে বলে দাবি করেন ওই ব্যক্তি। ঘটনাস্থলে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পেছনে হেঁটে যেতে দেখা যায়, মুখ চেপে ধরে।
ওই ব্যক্তি পরে জানান, তিনি শান্তভাবে কথা বলার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু পুলিশ সদস্য তাকে সরাসরি ঢাল দিয়ে মুখে আঘাত করেন। তিনি দাবি করেন, আঘাতে তার দাঁত পড়ে গেছে এবং সেগুলো তার পকেটে রয়েছে।
সহিংসতার সময় বিক্ষোভকারীদের পুলিশের দিকে বিভিন্ন ধরনের বস্তু নিক্ষেপ করতেও দেখা যায়। পুলিশের ভ্যানে লাথি ও ঘুষিও মারা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশাল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং এলাকা ঘিরে কড়া নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়।
একজন বিক্ষোভকারীকে দাঙ্গা পুলিশের একটি ভ্যানে চাপা দেওয়ার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ফুটেজে দেখা যায়, তিনি রাস্তা ছাড়তে ব্যর্থ হওয়ায় ভ্যানটি সোজা তাকে ধাক্কা দেয়।
এসেক্স পুলিশের সহকারী চিফ কনস্টেবল স্টুয়ার্ট হুপার জানান, সহিংসতায় জড়িতদের চিহ্নিত করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে আটজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন এবং দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে ৬৫ বছর বয়সী ডিন ওয়াল্টারসকে “দাঙ্গার” অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এই সংঘর্ষের পেছনে মূল কারণ ছিল ৩৮ বছর বয়সী অভিবাসী ইথিওপীয় নাগরিক হাদুশ গারবেরস্লাসি কেবাতুর এক কিশোরীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের ঘটনা। তার বিরুদ্ধে তিনটি যৌন নিপীড়ন, একটি অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীকে যৌন কার্যকলাপে প্ররোচিত করা এবং একটি সহিংসতাহীন হয়রানির অভিযোগ আনা হয়েছে।
কেবাতু এপিংয়ের বেল হোটেলে অবস্থান করছিলেন, যা হোম অফিসের তত্ত্বাবধানে আশ্রয়প্রার্থীদের আবাস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে যুক্তরাজ্যজুড়ে প্রায় ২১০টি হোটেল এভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করছে।
সরকার জানিয়েছে, এই হোটেল-নির্ভর আশ্রয়ব্যবস্থা ধীরে ধীরে বন্ধ করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের একজন মুখপাত্র বলেন, “বিক্ষোভের অধিকার আছে, কিন্তু তা সহিংসতায় রূপ নিলে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, চলতি বছরেই আশ্রয় হোটেলে বসবাসকারী অন্তত ৩৩৯ জন অভিবাসী বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়েছেন, যা এ ধরনের হোটেল ব্যবস্থাপনার কার্যকারিতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
সূত্রঃ দ্য সান
এম.কে
২০ জুলাই ২০২৫