TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যের এসাইলাম আইনে বড় পরিবর্তনঃ লর্ড ডাবস বললেন ‘এটি লজ্জাজনক’

ব্রিটিশ সরকারের প্রস্তাবিত আশ্রয় নীতি পরিবর্তন নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে লেবার পার্টির জ্যেষ্ঠ সদস্য ও সাবেক শিশু-শরণার্থী লর্ড আলফ ডাবস অভিযোগ করেছেন যে, হোম সেক্রেটারি শবানা মাহমুদ “শিশুকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার” করতে চাইছেন। তিনি বলেন, সরকারের এই পরিকল্পনা মানবিক মূল্যবোধ ও ব্রিটিশ ঐতিহ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

১৯৩৯ সালে নাৎসি দখলদারিত্ব থেকে পালিয়ে ছয় বছর বয়সে ব্রিটেনে আশ্রয় পাওয়া ডাবস বিবিসি রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, শিশুদের জড়িয়ে এই ধরনের নীতি প্রণয়ন “লজ্জাজনক” এবং শরণার্থী আইনের ইতিহাসে এক অমানবিক নজির। তিনি বলেন, পরিবারভিত্তিক পুনর্মিলনের ক্ষেত্রে শিশুদের অধিকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।

সোমবার ঘোষিত হোম অফিসের খসড়া নীতিতে বলা হয়েছে, আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে নাবালক সন্তানসমেত পরিবারগুলোর আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। সরকারের যুক্তি—বর্তমান ব্যবস্থায় কিছু অভিভাবক শিশুদের নৌকায় ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায় পাঠিয়ে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে। নীতিপত্রে আরও বলা হয়, পরিবার ফেরাতে অনীহা থাকার কারণে “বিপজ্জনক প্রণোদনা” তৈরি হয়েছে।

তবে লর্ড ডাবস এই যুক্তি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, শিশুদের নিরাপত্তা ও সুস্থতা বিবেচনায় না নিয়ে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া সঠিক নয়। বরং এটি সমাজে বিভাজন ও উত্তেজনা বৃদ্ধি করবে বলে তিনি সতর্ক করেন। তার মতে, স্থায়ী আশ্রয়ের সুযোগ সীমিত করে দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তা তৈরি করলে স্থানীয় জনগণের মধ্যেও নেতিবাচক মনোভাব বাড়বে।

শবানা মাহমুদের প্রস্তাবিত পরিবর্তনের মধ্যে স্থায়ী আশ্রয় বাতিল করে ২০ বছর আবাসের পর স্থায়ী হওয়ার সুযোগ দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। বর্তমানে এই সময়সীমা পাঁচ বছর। ডাবস মনে করেন, এত দীর্ঘ অনিশ্চয়তা শরণার্থীদের সমাজে একীভূত হওয়ার পথকে আরও কঠিন করবে।

এদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে কমিউনিটিজ সেক্রেটারি স্টিভ রিড বলেন, “সহানুভূতি একপক্ষের একচেটিয়া বিষয় নয়।” তিনি দাবি করেন, বিপজ্জনক সমুদ্রপথে শিশুর মৃত্যু ঠেকাতে কঠোর নীতি জরুরি। অভিবাসন হোটেল ব্যবস্থা এবং এর ফলে সৃষ্ট অসন্তোষ দূর করতেও এসব পরিবর্তন প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অন্যদিকে, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর, আন্তর্জাতিক রেসকিউ কমিটি (আইআরসি) ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা মনে করে, দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তা ও কঠোর শর্ত শরণার্থীদের দুরবস্থা আরও বাড়াবে, ফলে সমন্বয় ও সামাজিক সম্প্রীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ইউএনএইচসিআরের যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি ভিকি টেন্যান্ট বলেন, শরণার্থীদের অর্থনৈতিক অভিবাসী হিসেবে দেখা উচিত নয়। বরং তাদের স্থিতিশীলতা, পরিবার পুনর্মিলন ও নিরাপদ ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দিতে হবে। আর আইআরসির মতে, সরকার ঘোষিত নীতিগুলো সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে আরও জটিলতা তৈরি করবে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অভিবাসন অধিকার পরিচালক স্টিভ ভালডেজ-সাইমন্ডস বলেন, “এই পরিকল্পনা নিষ্ঠুর, বিভাজন সৃষ্টিকারী এবং মৌলিক মানবিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

ব্রিটিশ রাজার সঙ্গে দেখা করে তালগোল পাকালেন বাইডেন

যুক্তরাজ্যের সুপার মার্কেটে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়ার অভিযোগ

কারাগারের ভিড় কমাতে কঠোর পদক্ষেপঃ বিদেশি অপরাধীদের দ্রুত ফেরত পাঠানো হবে