হ্যাম্পশায়ারের অ্যালডারশট শহরে একটি হোটেলের সামনে অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে স্থানীয় জনগণ। বুধবার (১৬ জুলাই) প্রায় ৩০ জন মানুষ ‘স্টপ দ্য বোটস’ এবং ‘স্টপ দ্য ইনভেশন’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদে অংশ নেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দৃশ্যমান হয় এই ঘটনাবলি, যা সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের অনুসৃত এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকেও প্রচার হয়।
এটাই প্রথম নয়—গত বছরের গ্রীষ্মেও একই হোটেলের সামনে বিক্ষোভ হয়। সেবার সাউথপোর্টে তিন কিশোরীর হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী উত্তেজনার মধ্যেই স্থানীয় ও বাইরের উসকানিদাতা ব্যক্তি ও গোষ্ঠী এই বিক্ষোভে অংশ নেয়। প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, “ডিপোর্ট দেম, ডোন্ট সাপোর্ট দেম।” স্থানীয় এমপি অ্যালেক্স বেকার সে সময় অভিযোগ করেছিলেন, বাইরের লোকজনই পরিবেশকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে।
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের হার বেড়েই চলেছে। জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ইতিমধ্যে ২২,০০০-এর বেশি মানুষ অনুপ্রবেশ করেছে। শুধু গত সপ্তাহেই ১,৩৭৫ জন এই পথ পাড়ি দিয়েছে, যা চলতি বছরকে রেকর্ড সংখ্যক অনুপ্রবেশের পথে নিয়ে যাচ্ছে।
আশ্রয়প্রার্থীদের থাকার জন্য হোটেল ব্যবহারের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ বেড়েই চলছে। বর্তমানে প্রায় ৩২,০০০ অভিবাসী হোটেলে অবস্থান করছেন, যার কারণে সরকারের বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন পাউন্ড খরচ হচ্ছে। এই খরচ এবং সামাজিক উদ্বেগের প্রেক্ষিতে লেবার সরকার ঘোষণা দিয়েছে, তারা ২০২৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগেই হোটেল ব্যবস্থার অবসান ঘটাবে।
সম্প্রতি এসেক্সের এপিং এলাকায় এক আশ্রয়প্রার্থী শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে অভিযুক্ত হলে ওই হোটেলের সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পাল্টা বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ ঘটে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে এবং সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশ মোতায়েন করতে হয়।
এপ্রিল মাসে ক্যামব্রিজশায়ারের একটি হোটেলে ১৪৬ জন পুরুষ অভিবাসীকে রাখার সিদ্ধান্ত স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে। স্থানীয়দের অভিযোগ ছিল, নারীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত, কিন্তু হোম অফিস তাদের উদ্বেগকে অগ্রাহ্য করেছে।
এই পটভূমিতে গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মধ্যে একটি “ওয়ান ইন, ওয়ান আউট” চুক্তির ঘোষণা এসেছে, যেখানে একদিকে একজন অনুপ্রবেশকারী আসলে অপরজনকে ফেরত পাঠানোর নীতি গ্রহণ করা হবে। তবে, এই চুক্তি বাস্তবায়নের আগে তা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনার ও আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
অ্যালডারশটের সাম্প্রতিক বিক্ষোভ ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি অভিবাসন ইস্যুতে জনমনে গভীর উদ্বেগ ও বিভাজন স্পষ্টভাবে তুলে ধরছে।
সূত্রঃ দ্য এক্সপ্রেস
এম.কে
১৭ জুলাই ২০২৫