ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর দায়ে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। বাদ যায়নি রুশমিত্র বেলারুশও। এমনকি প্রয়োজন পড়লে চীনের উপরও নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র।
ইউক্রেনে যুদ্ধ করার জন্য চীন রাশিয়াকে অস্ত্র দিলে এই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সঙ্গে আলোচনাও করছে যুক্তরাষ্ট্র।
বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন চার মার্কিন কর্মকর্তা এবং অন্যান্য সূত্রের মতে, বেইজিং যদি ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে সামরিক সহায়তা দেয় তবে যুক্তরাষ্ট্র চীনের উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে।
একইসঙ্গে চীনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাবনা সম্পর্কে ওয়াশিংটন তার ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সঙ্গে কথা বলছে বলেও মার্কিন কর্মকর্তা ও সূত্রগুলো জানিয়েছে। যদিও এসব আলোচনা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
চীনের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যেকোনও নিষেধাজ্ঞা বা বিধিনিষেধের জন্য সমর্থন সমন্বয় করার জন্য বিভিন্ন দেশের, বিশেষ করে ধনী গোষ্ঠী জি-৭ এর সমর্থন যোগাড় করার উদ্দেশ্যেই এই আলোচনা করা হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম জানায়, প্রয়োজন হলে চীনের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন সুনির্দিষ্টভাবে ঠিক কী ধরনের নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব করবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। এছাড়া নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনা নিয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই আলোচনা বা কথোপকথন আগে প্রকাশ করা হয়নি।
এছাড়া মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এই বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে। যদিও মার্কিন এই সংস্থাই মূলত নিষেধাজ্ঞা আরোপের কাজটি করে থাকে।
মিত্রদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ ইউরোপ এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা চীনের জন্য কঠিন করে তুলেছে।
ওয়াশিংটন এবং তার মিত্ররা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দাবি করে আসছে, ইউক্রেনে যুদ্ধ করার জন্য রাশিয়াকে অস্ত্র দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে চীন। যদিও বেইজিং এই দাবি অস্বীকার করছে। এছাড়া নিজেদের এই দাবির পক্ষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সহযোগীরা প্রকাশ্যে কোনও প্রমাণ হাজির করেননি।
এর আগে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সহায়তার বিষয়ে চীনের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে যুক্তরাষ্ট্র। বেইজিং মস্কোকে অস্ত্র সরবরাহ করার বিষয়টি বিবেচনা করছে জানিয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছিলেন, এ বিষয়ে ওয়াশিংটন উদ্বিগ্ন।
আর তাই চীন যদি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনে বস্তুগত তথা সামরিক সহায়তা প্রদান করে তাহলে দেশটিকে পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে অ্যান্টনি ব্লিংকেন সেসময় শীর্ষ চীনা কূটনীতিক ওয়াং ইকে সতর্ক করে দেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আক্রমণের কয়েকদিন আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে দেখা করার জন্য বেইজিং সফর করেছিলেন। তবে ঠিক সেই সময়ই রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ট্যাংকগুলো ইউক্রেনের সীমান্তে জড়ো হচ্ছিল।
উভয় নেতা সেসময় চীন-রাশিয়ার অংশীদারিত্বে ‘কোনও সীমা’ না রাখার ব্যাপারে সম্মত হন। এছাড়া ইউক্রেন আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্কও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
অবশ্য চীন এখন পর্যন্ত রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে নিজেকে নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করে আসছে। তবে ইউক্রেনের উপর রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে সেটির নিন্দাও জানায়নি বেইজিং। এমনকি রাশিয়ার আগ্রাসনকে ‘আক্রমণ’ বলা থেকেও বিরত রয়েছে চীন।
এম.কে
০৩ মার্চ ২০২৩