যুক্তরাজ্যের নতুন সরকারের ‘সিটি মিনিস্টার’ টিউলিপ সিদ্দিকের সময়টা এমনিতেই ভালো যাচ্ছে না। বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্কের কারণে লেবার পার্টির এই এমপির উপর চাপ আরও বেড়েছে।
টানা ১৫ বছর দেশ শাসনের পর গত সোমবার (৫ আগস্ট) ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা টিউলিপ সিদ্দিকের খালা।
বাংলাদেশে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সহিংসতায় ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এর জেরে ৭৬ বছর বয়সি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন।
ভারতে যাওয়ার পর গুঞ্জন উঠেছিল শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চাইতে পারেন। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো দেশ কিছু জানায়নি।
অন্যদিকে, বিশ্ব মানবাধিকার সংগঠনগুলো শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে হত্যা ও গুমসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে।
যদিও ২০১৫ সালে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশ সরকারের কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি হ্যাম্পস্টেড এবং হাইগেটের এমপি টিউলিপের বিরুদ্ধে।
কিন্তু লন্ডনের সিটি মিনিস্টার হিসেবে নতুন লেবার সরকারে তার ভূমিকা নিয়ে আগে থেকেই তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছিল। এরপর আবার শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্য হওয়ায় বর্তমানে তার ওপর চাপ কয়েক গুণ বেড়েছে।
এ ব্যাপারে টিউলিপ সিদ্দিক কোনো মন্তব্য করেননি। এমনকি তিনি বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বা তার খালার পরিস্থিতি সম্পর্কেও প্রকাশ্যে মন্তব্য করেননি।
এদিকে, ফরেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট এনমেটেনা অ্যাডভাইজারি-এর প্রতিষ্ঠাতা ও এর একজন ফেলো ম্যাক্স হেস বলেছেন, ‘টিউলিপ বেশ কয়েক বছর ধরে লেবার পার্টির এমপি। বাংলাদেশি গণমাধ্যমগুলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সত্যি সত্যি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্য আশ্রয় নিলে বিষয়টি খুব অস্বস্তিকর হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘লেবার পার্টির একটি ভাল ভেটিং প্রোগ্রাম (তদন্ত প্রক্রিয়া) থাকার কথা ছিল। তাই কীভাবে এতদিন কেউ ভাবেনি যে, ভবিষ্যতে এটি নিয়ে কোনো সমস্যা হতে পারে?’
২০১৯ সালে চ্যানেল ফোর-এর এক অনুসন্ধানে উঠে আসে যে, টিউলিপ সিদ্দিকের পুনঃনির্বাচনকে সমর্থন করার জন্য আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখা একটি প্রচারণা চালাচ্ছে।
অনুসন্ধানকারীরা দুইবার যুক্তরাজ্যের এমপি নির্বাচিত হতে টিউলিপকে সাহায্যের জন্য তার আওয়ামী লীগকে ধন্যবাদ দেওয়ার ভিডিও প্রমাণ পেয়েছে।
এছাড়া ২০১৩ সালে ক্রেমলিনে ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তোলা তার খালা হাসিনার একটি ছবিতেও টিউলিপ সিদ্দিককে দেখা যায়।
পলিটিকো যুক্তরাজ্যের শ্রম সদর দপ্তরকে টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে সাবেক বাংলাদেশি সরকারের সম্পর্ক এবং তার মন্ত্রীত্বের বিষয়ে উঠা জল্পনা সম্পর্কে তার অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল। তবে তারা এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
এমনকি বর্তমানে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত দলের সঙ্গে তার যোগসূত্র সহকর্মী লেবার এমপিদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আরেক সংসদ সদস্য রূপা হক সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাসিনা সরকারকে ‘স্বৈরাচারী সরকার’ বলে অভিহিত করেছেন।
ব্রিটেনের পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ল্যামি সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে শেখ হাসিনার সরকারের ব্যাপারে জাতিসংঘের তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
সূত্রঃ পলিটিকো
এম.কে
১০ আগস্ট ২০২৪