গাজা সংকট ঘিরে লেবার পার্টির ভেতরে গভীর বিভক্তি প্রকাশ্যে এসেছে। দলের ৫৯ জন এমপি প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের অবস্থানের বিরুদ্ধে গিয়ে ফিলিস্তিনকে অবিলম্বে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এই এমপিরা বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ল্যামিকে পাঠানো এক চিঠিতে গাজায় চলমান পরিস্থিতিকে সরাসরি “জাতিগত নিধন” বলে উল্লেখ করেছেন। চিঠিতে তারা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সাম্প্রতিক ঘোষণার কড়া সমালোচনা করেছেন, যেখানে গাজার সব বাসিন্দাকে রাফার ধ্বংসস্তূপে একটি ক্যাম্পে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
লেবার নেতৃত্ব যদিও বলে আসছে—“সঠিক সময় ও সর্বোচ্চ প্রভাব” তৈরি হলে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে, কিন্তু এমপিরা বলছেন, এই সময়ক্ষেপণ কার্যত দখলদারিত্বকে মদত দিচ্ছে। তারা সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বসতিগুলোর ওপর বাণিজ্যিক অবরোধ আরোপ এবং এককভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য।
চিঠিতে এমপিরা বলেছেন, “আমরা যদি এখনই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি না দিই, তাহলে আমাদের দ্বি-রাষ্ট্র নীতিই প্রশ্নবিদ্ধ হয়।” তারা আরও বলেন, রাফাহ পরিকল্পনা ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ এবং এর প্রকৃত অর্থ হলো—“গাজার জাতিগত নিধন”।
এটি একইসঙ্গে কেয়ার স্টারমারের জন্য বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। কারণ এই চিঠির মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, দলের অভ্যন্তরে একটি শক্তিশালী অংশ তার নেতৃত্ব মানছে না। ম্যাক্রোঁ যখন যুক্তরাজ্যে এসে প্রকাশ্যে ফিলিস্তিন স্বীকৃতির দাবি জানাচ্ছেন, তখন নিজ দলের এমপিরাও সেই একই সুরে কথা বলছেন।
এমপিদের এই অবস্থান সরকার ঘোষিত শান্তিপ্রক্রিয়ার অপেক্ষার নীতিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করছে। আগেও একটি চিঠি পাঠানো হয়েছিল, তবে এবারই প্রথম এই ৫৯ এমপি প্রকাশ্যে নামসহ বিবৃতি দিয়েছেন।
চিঠির আয়োজক ছিল Labour Friends of Palestine and the Middle East। স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন দলের প্রভাবশালী মুখ ক্লাইভ লুইস, ডায়ান অ্যাবট, ডন বাটলার, তনময় সিং ধেসি এবং স্টেলা ক্রিসি।
ফ্রান্স ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যসহ মিত্রদের ওপর চাপ দিচ্ছে সম্মিলিতভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ স্পষ্ট করে বলেছেন—“শান্তির একমাত্র পথ হচ্ছে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া”।
লেবার সরকারের পক্ষ থেকে এখনো সেই চাপ মোকাবিলায় দৃশ্যমান কোনো কৌশল নেই। স্টারমার একদিকে ইউরোপীয় মিত্রদের প্রত্যাশা, অন্যদিকে নিজ দলের বিদ্রোহের মাঝে পড়ে যাচ্ছেন—যার ইঙ্গিত দিচ্ছে, তার নেতৃত্ব ক্রমেই চ্যালেঞ্জের মুখে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১২ জুলাই ২০২৫