যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম নার্সিং ইউনিয়ন রয়্যাল কলেজ অব নার্সিং (RCN) বলেছে যে, সরকার অভিবাসী কেয়ার কর্মীদের প্রতি দুর্ব্যবহারের তদন্তে গড়িমসি করছে। সংস্থাটি এখনও নিম্ন মজুরি, নিম্নমানের বাসস্থান ও অবৈধ ফি নিয়ে শত শত অভিযোগ পাচ্ছে।
RCN-এর সাধারণ সম্পাদক নিকোলা রেঞ্জার অভিবাসন মন্ত্রী ইভেট কুপারকে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছেন, বিদেশি কেয়ার কর্মীদের প্রতি নিপীড়নের তদন্ত দ্রুত শুরু করতে।
সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা অনৈতিক নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ও এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। RCN-এর মতে, তারা এখনো প্রতি বছর ১০০-র বেশি ফোন কল পায়, যেখানে নার্সরা অভিযোগ করেন যে তারা অবিচারের শিকার হচ্ছেন।
রেঞ্জার তার চিঠিতে লিখেছেন,
“RCN গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে অনেক আন্তর্জাতিক নার্সিং কর্মী শোষণের শিকার হচ্ছেন। আমাদের সদস্যরা অভিযোগ করেন যে, তারা দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, চাকরি ছাড়ার জন্য অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধের চাপ, নিম্নমানের ও গাদাগাদি করে থাকা বাসস্থান এবং অবৈধভাবে চাকরি পেতে ফি দিতে বাধ্য হচ্ছেন।”
গত বছরের জুনে, দ্য গার্ডিয়ান প্রকাশ করে যে, যুক্তরাজ্যে কেয়ার সেক্টরে কাজ করতে আসা অভিবাসীদের প্রতি ব্যাপক দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এর পরই কুপার তদন্তের প্রতিশ্রুতি দেন।
তদন্তে দেখা যায় যে, ডজনেরও বেশি অভিবাসী নার্সকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভিসার জন্য হাজার হাজার পাউন্ড দিতে বাধ্য করা হয়েছে। কিন্তু যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর পর তারা যথাযথ কাজ পাননি বা খুবই কম কাজ পেয়েছেন।
কিছু অভিবাসী কর্মী একটি কক্ষে, এমনকি একই বিছানায় অন্য কর্মীদের সঙ্গে থাকার জন্য বাধ্য হয়েছেন, কারণ তাদের পক্ষে অন্যথায় টিকে থাকা সম্ভব হয়নি।
এই সংকটের মূল কারণ হলো আগের সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্ত, যেখানে কেয়ার কর্মীদের জন্য ভিসা স্পনসরশিপ সহজ করা হয়েছিল। এটি করা হয়েছিল সোশ্যাল কেয়ার খাতে কর্মী সংকট মোকাবিলার জন্য।
কুপার তখন বলেছিলেন,
“এটি একটি লজ্জাজনক বিষয়। এসব অভিযোগের পূর্ণ তদন্ত হওয়া উচিত, যেন ন্যূনতম মান বজায় থাকে এবং শোষণকারী নিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”
বর্তমান লেবার সরকার জানিয়েছে যে, এই তদন্তটি একটি নতুন কর্মসংস্থান নিয়ন্ত্রক সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হবে। তবে এই সংস্থা গঠনের প্রক্রিয়া এখনও চলছে, যা কয়েক মাস বা বছর লেগে যেতে পারে।
রেঞ্জার তার চিঠিতে বলেছেন,
“বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী, যদি ‘এমপ্লয়মেন্ট রাইটস বিল’ পাস হয়, তবে এই সংস্থা ২০২৬ সালের আগে কার্যকর হবে না। এরপর তদন্ত শুরু হলেও, এটি শেষ হতে আরও কয়েক মাস লাগবে।”
“এর মধ্যে এই শোষণমূলক চর্চা চলতে থাকবে, বরং আরও বাড়বে। আমি স্বরাষ্ট্র দফতর এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থাগুলোকে এখনই প্রতিশ্রুত তদন্ত শুরুর আহ্বান জানাচ্ছি, যেন ভুক্তভোগীরা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কারণে উপেক্ষিত না হয়।”
RCN-এর মতে, ২০২০ সালে অভিবাসী কেয়ার কর্মীদের কাছ থেকে মাত্র ১২টি অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে এটি বেড়ে ১১০-তে পৌঁছেছে।
অনেকেই অভিযোগ করেছেন যে, চাকরি ছাড়তে চাইলে তাদের “রিপেমেন্ট ফি” দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। নিয়োগকর্তারা বলছেন, তাদের নিয়োগের সময় হওয়া ব্যয়ের জন্য কর্মীদের এই টাকা দিতে হবে।
একজন নার্স RCN-কে জানিয়েছেন, তার চাকরি ছাড়ার জন্য £২৫,০০০ পরিশোধ করতে বলা হয়েছে— যা RCN-এর ইতিহাসে সর্বোচ্চ বলে জানা গেছে।
সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে এ বিষয়ে মন্তব্য চাওয়া হয়েছে। যদিও হোম অফিস কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেছে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০৭ মার্চ ২০২৫