ব্রিটিশ স্যোশাল ওয়ার্কার এজেন্সিগুলির বিরুদ্ধে বিদেশী কর্মীদের শোষণের অভিযোগ উঠেছে। অনেক বিদেশি কর্মী যুক্তরাজ্যে কাজের জন্য এসেছে কিন্তু তারা চুক্তি মোতাবেক বেতন পাচ্ছে না। ঋণের দায়ে জর্জরিত হয়ে পড়েছে অনেক বিদেশি স্বাস্থ্যসেবা কর্মী যারা না ঋণ পরিশোধ করতে পারছে, না নিজেদের জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে পারছে।
১১ টি বিভিন্ন কেয়ার প্রোভাইডারদের জন্য কাজ করা কয়েক ডজন লোক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছে, তারা ইউকে কেয়ার হোমসে কাজ পাওয়ার জন্য এজেন্টদের ঘুষ প্রদান করেছে। তাদের সাথে এজেন্টদের চুক্তি ছিল কাজ পাইয়ে দেওয়া কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো কাজ দেওয়া হতো না।
অনেক বিদেশি কর্মী জানান এখনও তারা তাদের নিজ দেশে বিশাল ঋণের বোঝা পরিশোধের জন্য চাপে রয়েছেন। নিজেদের জীবন বাঁচাতে ন্যূনতম মজুরির নীচে কাজ করে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
আগামী মাসে সাধারণ নির্বাচনে কারা জয়লাভ করবে সেটার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে বলে মতামত জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, টোরি ইমিগ্রেশন আইনে অনেক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে যার মধ্যে রয়েছে কেয়ার ওয়ার্কারদের পরিবার নিয়ে আসায় নিষেধাজ্ঞা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরিবার আনার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার কারণে বিদেশি শ্রমিকেরা আরো বেশি বিপদে পতিত হয়েছেন। উভয়ে কাজ করার সুযোগ থাকায় একটি সংসার স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারে যা বন্ধ করে দেয় বর্তমান সরকার। আবার কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় একটি ছোট পরিবার কেয়ার ওয়ার্কার ভিসায় বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন কিন্তু চাকুরির অভাবে দারিদ্রতার সাথে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। বিদেশি কেয়ার ওয়ার্কার তাদের ভিসার মর্যাদা হারানোর ভয়ে তাদের নিয়োগকর্তাদের ছেড়ে যেতেও ভীত।
রয়্যাল কলেজ অফ নার্সিং (আরসিএন) যুক্তরাজ্যের বড় তিনটি দলের আছে চিঠি লিখেছে। আরসিএন সংসদের নতুন অধিবেশনে অভিবাসী কেয়ার ওয়ার্কারদের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা চায়। কারণ তারা মনে করে এই বিষয়ে পুরো জাতির উপর প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। যা ব্রিটিশদের জন্য হয়েছে চরম লজ্জার ও কেলেঙ্কারীর।
আরসিএন -এর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিকোলা রেঞ্জার বলেন, “ অভিবাসী কেয়ার ওয়ার্কারদের উপর শোষণ চালানো হল চরম লজ্জার এবং এই ধরনের ঘটনার জন্য দায়ী যুক্তরাজ্যের ভুল ব্যবস্থাপনা।”
ডেভিড নিল, তিনি কনজারভেটিভ সরকারের সীমান্ত পরিদর্শক ছিলেন। তিনি কেয়ার ভিসা সিস্টেম সম্পর্কে বিপদাশঙ্কা উত্থাপন করেছিলেন। তিনি বলেন, ” কেয়ার ওয়ার্কার ভিসা ব্যবস্থার দিকে তাকানোর সাথে সাথেই আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে সেখানে শোষণ চলছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, ” আমার বিভিন্ন কেয়ারহোম পরিদর্শনের সুযোগ হয়েছিল। পরিদর্শনকালে আমি উইন্ড্রুশ কেলেঙ্কারির কথা ভাবছিলাম এবং এখানে এর প্রতিধ্বনি দেখতে পেয়েছি।”
দাতব্য প্রতিষ্ঠানের অ্যান্টি-ট্র্যাফিকিং অফিসার জোহানা হোয়াইট বলেন, “ আমি দেখতে পাচ্ছি যে যুক্তরাজ্য মানবপাচারের এক কেন্দ্র হয়ে উঠেছে যেখানে আধুনিক যুগের দাসত্বের সূচকগুলি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।”
উল্লেখ্য যে, কনজারভেটিভ সরকার সীমান্ত পরিদর্শক ডেভিড নিলকে বরখাস্ত করেছিল। নিল বরখাস্ত হবার কিছুদিন পরেই তার প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। প্রতিবেদনে পরিষ্কার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছিল যে হোম অফিস কেয়ার ভিসা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত তদারকি করছে না।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০৪ জুন ২০২৪