TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

টিকটকে বিলিয়ন ভিউয়ের এআই-বন্যাঃ অভিবাসীবিরোধী ও যৌনায়িত কনটেন্টে ভরে যাচ্ছে প্ল্যাটফর্ম

টিকটকে এআই-নির্মিত কনটেন্টের ব্যাপক বিস্তার উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে। একটি নতুন গবেষণায় পাওয়া গেছে, অন্তত ৩৫৪টি এআই-কেন্দ্রিক অ্যাকাউন্ট মাত্র এক মাসে ৪৩ হাজার পোস্ট প্রকাশ করে সংগ্রহ করেছে ৪.৫ বিলিয়ন ভিউ। এই কনটেন্টের বড় অংশই অভিবাসীবিরোধী বার্তা, যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ ভিডিও ও ভুয়া সংবাদ–যা প্ল্যাটফর্মের অ্যালগরিদমকে ব্যবহার করে ভাইরাল হতে তৈরি করা হয়েছিল।

 

এআই ফরেনসিক্স নামের ফ্রান্সভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জানায়, এসব অ্যাকাউন্ট মূলত দিনে বহুবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে পোস্ট করে টিকটকের ভাইরাল হওয়ার ব্যবস্থাকে কাজে লাগায়। একটি অ্যাকাউন্ট দিনে ৭০টি পর্যন্ত পোস্ট করেছে, আর বেশিরভাগ অ্যাকাউন্টই বছরের শুরুতে চালু করা হয়—যা সংগঠিত বট-নেট অপারেশনের ইঙ্গিত বহন করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, সবচেয়ে সক্রিয় অ্যাকাউন্টগুলোর অর্ধেকই নারীদেহকে কেন্দ্র করে কনটেন্ট ছড়াচ্ছিল। এতে অতিরঞ্জিত ও যৌনায়িত নারী চরিত্র—এমনকি নাবালিকার মতো দেখতে এআই-নারী—ব্যবহার করা হয়েছে। ফেক নিউজ-ধরনের ভিডিওতেও অভিবাসীবিরোধী বর্ণনা ছড়ানো হচ্ছিল, যেখানে স্কাই নিউজ বা এবিসির মতো বাস্তব সংবাদমাধ্যমের লোগো ব্যবহার করে তা বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা হয়।

টিকটক জানিয়েছে, প্ল্যাটফর্মে অন্তত ১.৩ বিলিয়ন এআই-তৈরি পোস্ট রয়েছে, যদিও দৈনিক ১০ কোটির বেশি আপলোডের তুলনায় এ সংখ্যা এখনও কম বলে দাবি তাদের। তবে গবেষকেরা বলছেন, মোট এআই কনটেন্টের অর্ধেকের বেশি লেবেল করা নেই, আর মাত্র ২% পর্যন্ত টিকটকের অফিসিয়াল এআই লেবেল পেয়েছে—যা ভুল তথ্য ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ায়।

গবেষণায় আরও প্রকাশ পেয়েছে, এসব অ্যাকাউন্ট অনেক সময় টিকটকের মডারেশন নীতিমালা ভঙ্গ করেও মাসের পর মাস ধরা পড়ে না। প্রতিবেদন প্রকাশের পর কয়েক ডজন অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলা হয়েছে, যা গবেষকদের মতে প্ল্যাটফর্মের তদারকির দুর্বলতার প্রমাণ।

অনেক কনটেন্ট আবার “স্লপ”—অর্থাৎ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অসংগতিপূর্ণ এআই ভিডিও, যেমন—প্রাণীরা অলিম্পিকে প্রতিযোগিতা করছে বা নবজাতক শিশুরা কথা বলছে। এগুলো মানুষের ফিড ভরাট করে ব্যবহারকারীর মনোযোগ বিভ্রান্ত করার জন্য তৈরি।

টিকটক বলেছে, তারা ক্ষতিকর এআই কনটেন্ট সরায়, বট অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে এবং উন্নত লেবেলিং প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছে। তবে গবেষকদের মতে, এ পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। তারা মনে করেন, এআই কনটেন্ট আলাদা বিভাগে রাখা বা বাধ্যতামূলক ও স্পষ্ট লেবেলিং করা জরুরি, যাতে মানব-তৈরি ও এআই-তৈরি কনটেন্টের বিভাজন স্পষ্ট থাকে।

এআই ফরেনসিক্স সতর্ক করে বলেছে, “মানুষ ও এআই-নির্মিত কনটেন্টের সীমারেখা বিপজ্জনকভাবে অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এটি প্ল্যাটফর্মে ভুয়া তথ্য, যৌনায়িত কনটেন্ট ও অনৈতিক এআই ব্যবহার আরও বাড়িয়ে দেবে।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যের কেন্টে হোম অফিস অভিবাসী কর্তৃক আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে

বর্ণবৈষম্যের স্বীকার হওয়ায় হোম অফিসের উপর মামলা করেছেন একজন বৃটিশ নাগরিক

ব্রিটিশ মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেলেন রুশনারা আলী