13.9 C
London
March 6, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের পর আমেরিকানদের যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব আবেদনের হিড়িক

গত ২০ বছরে যুক্তরাজ্যে নাগরিকত্বের জন্য আবেদনকারীদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্বের জন্য রেকর্ড সংখ্যক আমেরিকান আবেদন করছেন, এমনটাই দেখা যাচ্ছে হোম অফিসের সদ্য প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৪ সালে ৬,১০০-র বেশি মার্কিন নাগরিক যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছে, যা ২০০৪ সালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি—এটাই সবচেয়ে পুরনো তথ্য যা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত।

২০২৪ সালের শেষ তিন মাসে নাগরিকত্বের জন্য রেকর্ড সংখ্যক আবেদন জমা পড়ে, যা গত ২০ বছরে কোনো একক ত্রৈমাসিকে সর্বোচ্চ। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত, অর্থাৎ ট্রাম্পের ৪ নভেম্বরের পুনর্নির্বাচনের সময়কালে, ১,৭০৮টি আবেদন জমা দেওয়া হয়।

এই তথ্য প্রকাশের সময় যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন এবং ইউরোপের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে টানাপোড়েন চলছিল, যেখানে নিরাপত্তা ও বাণিজ্য বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।

গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং যুক্তরাজ্যের সরকারকে পরামর্শ প্রদানকারী মাইগ্রেশন অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য সের্হি পার্দোস-প্রাদো বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতিই সম্ভবত ২০২৪ সালে এই রেকর্ড সংখ্যক আবেদন বৃদ্ধির প্রধান কারণ।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা জানি যে, অভিবাসন গন্তব্য দেশগুলোর নাগরিকত্ব গ্রহণের সিদ্ধান্তে মূলত প্রবাসীদের নিজ দেশের পরিস্থিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মার্কিন কর্মীরা রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনকে যে অনিশ্চয়তার ইঙ্গিত হিসেবে দেখছে, সেটাই এই প্রবণতার ব্যাখ্যা হতে পারে। নাগরিকত্ব মার্কিন কর্মীদের জন্য একটি কম খরচের বীমার মতো, যা ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, তাদের সুরক্ষা দিতে পারে।”

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইগ্রেশন অবজারভেটরির পরিচালক ম্যাডেলিন সাম্পশন বলেন, তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত কয়েক বছরে আবেদনকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ২০২৪ সালে এই বৃদ্ধির হার ছিল একটু বেশি।

কিছু অভিবাসন আইনজীবী মনে করেন, ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার ও বিজয়ের কারণে এই সংখ্যা বেড়েছে। আইন সংস্থা ফারার অ্যান্ড কো-র অংশীদার এলেনা হিনচিন জানান, “নির্বাচনের আগে থেকেই যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্বের প্রতি আমেরিকানদের আগ্রহ বাড়তে দেখেছি।”

তবে ম্যাডেলিন সাম্পশন বলেন, দীর্ঘমেয়াদী বৃদ্ধি সম্ভবত যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী মার্কিনিদের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণেই ঘটেছে। যারা দীর্ঘদিন ধরে এখানে বাস করছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই এখন নাগরিকত্বের জন্য যোগ্য হয়ে উঠেছেন।

তিনি আরও বলেন, “তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে নাগরিকত্বের জন্য আবেদনকারীদের সংখ্যা বেড়েছে, তবে কেন এটি ঘটেছে, সে সম্পর্কে সরাসরি কোনো প্রমাণ নেই। এটি মার্কিন রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পর্কিত কি না, তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন।”

তিনি স্পষ্ট করেন যে, এটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে মানুষ সরাসরি যুক্তরাজ্যে চলে আসার ইঙ্গিত দেয় না, বরং যারা ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্যে আছেন, তারা দীর্ঘমেয়াদে থাকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

“আমরা এখন পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ পাইনি যে, মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে যুক্তরাজ্যে আসার প্রবণতা বেড়েছে। এটি শুধুমাত্র নাগরিকত্বের আবেদনের হার বৃদ্ধির প্রতিফলন,” বলেন তিনি।

এর আগে খবর পাওয়া গিয়েছিল যে, যুক্তরাষ্ট্রে কিছু ডেমোক্র্যাট ভোটার ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের পর যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।

মিশেল ক্যাল, যিনি ১৯৯৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, তিনি জানুয়ারিতে জানান, ট্রাম্পের শাসনে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কারণে তিনি তার পরিবার নিয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরে যেতে চান।

মিসেস ক্যাল, যার একজন ট্রান্সজেন্ডার সন্তান আছে, বলেন, ট্রাম্পের “দুই লিঙ্গ” নীতির কারণে তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র তার পরিবারের জন্য নিরাপদ নয়।

মিসেস ক্যাল বলেন, “ আমরা একবার ট্রাম্পের শাসনামল পার করেছি, তখন আমরা প্রতিবাদ করেছি, লড়াই করেছি।”

সূত্রঃ দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট

এম.কে
০৫ মার্চ ২০২৫

আরো পড়ুন

প্রথম কার্য দিবসে কী করলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

ইউক্রেনীয়দের ঘরে জায়গা দিলে মাসে ৩৫০ পাউন্ড দেবে ব্রিটিশ সরকার

যুক্তরাজ্যে চালকের ভুলে শিশুর মৃত্যু, তবে ভিন্ন দাবি করছেন চালকের আইনজীবী