11.1 C
London
November 5, 2024
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)শীর্ষ খবর

নৌকা ফেরাও, শরনার্থী আইন আসছে ব্রিটেনে

শুধু রাজার স্বাক্ষরটুকু করা বাকি তারপরেই ব্রিটেনের নতুন শরণার্থী নীতি পরিণত হবে আইনে।

সোমবার গভীর রাতে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসে দীর্ঘ বিতর্কের পরে এই শরণার্থী বিল পাশ হয়েছে। এই বিলের কড়া সমালোচনা করে জাতিসংঘ বলেছে, আর্ন্তজাতিক মঞ্চে শরণার্থীদের পুনর্বাসন নিয়ে যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ব্রিটেন, নতুন বিলটি তার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। ব্রিটেনের কনজারভেটিভ সরকার বরাবরই কড়া শরণার্থী নীতির পক্ষে প্রশ্ন করে এসেছে।

ঋষি সুনকের পূর্বসূরি বরিস জনসন প্রথম ‘রোয়ান্ডা প্ল্যান’-এর ঘোষণা করেছিলেন। জুন মাসে সেই পরিকল্পনা বাতিল করে দেয় মানবাধিকার বিষয়ক ইউরোপীয় আদালত। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ঋষি সুনক ‘নৌকা ফেরত পাঠাও’ নামের বিলটি পার্লামেন্টে পেশ করেন।

বিলে বলা হয়েছে, ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে যে সব শরণার্থী ছোট ছোট নৌকা করে ব্রিটেনের উপকূলে এসে পৌঁছন তাদের ব্রিটেনে শরণার্থীর মর্যাদা দেয়া যাবে না। ব্রিটেনের পছন্দ মতো কোনো ‘তৃতীয়’ দেশ যেমন আফ্রিকার অত্যন্ত দরিদ্র দেশ রোয়ান্ডায় পাঠিয়ে দেয়া হবে। নিজের দেশে আইনে পরিণত হওয়ার পরে ব্রিটেনকে ফের এই আইন ইউরোপীয় আদালতে পেশ করতে হবে।

সুনাক সরকার জানিয়েছে, গত বছরের রায়ের বিরুদ্ধে আগামী মাসেই আদালতে আপিল করবে তারা।

এই বিলটি নিয়ে পার্লামেন্টে বেশ কিছুদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্স শেষ পর্ষন্ত কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব করে বিলটি হাউস অব লর্ডসে পাঠায়। সূত্রের খবর, বিশেষ পরিবর্তন না করেই শেষ পর্যন্ত বিলটি পাশ করে দিয়েছে হাউস অব লর্ডস।
উল্লেখ্য, পার্লামেন্টের এই উচ্চকক্ষের প্রতিনিধিরা অর্থাৎ ‘লর্ড’রা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নন। ২০১৮ থেকে ব্রিটেনে এসে পৌঁছনো শরণার্থীর সংখ্যা দ্রুত হারে বেড়ে চলেছে। গত বছর ৪৫ হাজারেরও বেশি শরণার্থী ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে ব্রিটেনে এসে পৌঁছেছিলেন। এই সংখ্যাটা তার আগের বছরের থেকে ৬০ শতাংশ বেশি। নতুন বিল পেশ করে সুনাক সরকার দাবি করেছিল, অতিমারি ও ব্রেক্সিট-পরবর্তী ব্রিটেনের অর্থনীতি সচল করতে কড়া হাতে শরণার্থী সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, আগামী ভোটে এই শরণার্থী নীতিই কনজারভেটিভ দলের জেতার অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে।

মঙ্গলবার জাতিসংঘ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করে একটি যৌথ বিবৃতি জারি করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দফতরের প্রধান ভোল্কার টার্ক এবং শরণার্থী বিষয়ক দফতরের প্রধান ফিলিপো গ্র্যান্ডির স্বাক্ষরিত এই যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক মহলের কাছে সাহায্যের প্রত্যাশী যে সব শরণার্থী, ব্রিটেনের এই আইন তাদের উপরে নিদারুণ প্রভাব ফেলবে। এত দিন ধরে একটি আইনি কাঠামোর সাহায্যে শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানো যেত। ব্রিটেনের নতুন আইন সেই কাঠামো সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেবে। এর ফলে শরণার্থীদের আরো বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে ঠেলা দেয়া হল।’

আজই ডর্সেটের পোর্টল্যান্ড বন্দরে পাঁচ শ’-রও বেশি শরণার্থী নিয়ে একটি নৌকা এসে পৌঁছেছে। এ ধরনের শরণার্থীর ভবিষ্যৎ কী হবে, এখনো স্পষ্ট নয়। ‘রোয়ান্ডা প্ল্যান’ যেহেতু এখনো বাস্তবায়িত হয়নি এবং অন্য কোনো দেশের সাথেও ব্রিটেনের শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়ে কোনো চুক্তি হয়নি তাই এখনই শরণার্থীদের ব্রিটেন থেকে বের করে দিতে পারবে না সুনাক সরকার। তবে তাদের সরকারিভাবে ‘শরণার্থী’ পরিচয় দিয়ে সরকারি সুযোগ সুবিধাও দিতে রাজি নয় ব্রিটেন। ফলে বেআইনিভাবে এ দেশে ঢোকা মানুষ, বিশেষত শিশু ও মহিলাদের, আরো বিপজ্জনক পরিস্থিতির সামনে পড়তে হতে পারে। এর ফলে শরণার্থী মহিলা ও শিশুদের পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা বহু গুণ বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা এ দেশের মানবাধিকার কর্মীদের।

 

এম.কে
১৯ জুলাই ২০২৩

আরো পড়ুন

চীনকে টেক্কা দিতে জি-৭ নেতাদের নতুন পরিকল্পনা

যুক্তরাজ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্মেলনের ফাঁকে সুনাক,মাস্ক বৈঠক

পূর্ব লন্ডনে বক্সিং তারকার ঘড়ি ছিনতাই