TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

প্রত্যাবাসনের যোগ্য হয়েও যুক্তরাজ্যে ১৯,৪৯১ বিদেশি অপরাধীঃ আট বছরে প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি

প্রত্যাবাসনের যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যে বর্তমানে রেকর্ড সংখ্যক বিদেশি অপরাধী অবস্থান করছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কারাদণ্ড শেষে মুক্তি পাওয়া ১৯,৪৯১ জন বিদেশি অপরাধী, যাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো উচিত ছিল, তারা এখনো যুক্তরাজ্যের ভেতরে রয়েছে।

 

এই সংখ্যা ২০১৭ সালের তুলনায় ভয়াবহভাবে বেড়েছে। সে সময় একই অবস্থায় বিদেশি অপরাধীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৫,৯৩৩ জন। অর্থাৎ আট বছরের ব্যবধানে এই সংখ্যা প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দেশটির অভিবাসন ও প্রত্যাবাসন ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলছে।

এই পরিসংখ্যান প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার ও তার নেতৃত্বাধীন লেবার সরকারের জন্য বড় ধরনের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার একাধিকবার বিদেশি অপরাধীদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, তালিকায় এমন অপরাধীরাও রয়েছেন যারা পাঁচ বছরের বেশি সময় আগে কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও এখনো নিজ দেশে ফেরত যাননি।

গত তিন বছরেই এই সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার বৃদ্ধি পেয়েছে। স্যার কিয়ার স্টারমার ডাউনিং স্ট্রিটে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রায় ১ হাজার নতুন বিদেশি অপরাধী এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে, যা সরকারের ঘোষিত কঠোর নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন সমালোচকরা।

গত আগস্টে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যয় সাশ্রয়ের অজুহাতে সাজা ঘোষণার পরপরই বিদেশি অপরাধীদের অপসারণের পরিকল্পনা ঘোষণা করে। সে সময় তৎকালীন বিচারমন্ত্রী এবং বর্তমান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী শাবানা মাহমুদ এই উদ্যোগকে সীমান্ত ব্যবস্থার সংকট মোকাবিলায় একটি “বৈপ্লবিক পদক্ষেপ” হিসেবে আখ্যা দেন।

দ্রুত প্রত্যাবাসনের আইনি ক্ষমতা গত সেপ্টেম্বরে কার্যকর হলেও বাস্তবে এর কোনো ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। বরং বিদেশি অপরাধীরা মানবাধিকার ও আপিলসংক্রান্ত বিভিন্ন আইনি পথ ব্যবহার করে বহিষ্কার ঠেকাতে সক্ষম হচ্ছে।

সরকারের এই ব্যর্থতা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন শ্যাডো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ক্রিস ফিলিপ। তিনি বলেন, প্রত্যাবাসনের যোগ্য প্রতিটি বিদেশি অপরাধীকেই দেশ থেকে বহিষ্কার করা উচিত। তার বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়িয়েছে।

প্রত্যাবাসন ব্যর্থতার একাধিক আলোচিত উদাহরণ ইতোমধ্যে সামনে এসেছে। জার্মান মাদক ব্যবসায়ী সালেহ হামিদ ভাষাগত সমস্যার অজুহাতে নিজ দেশে ফেরত যাওয়া এড়িয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যদিকে, অভিবাসী জেসন ফুরতাদো—যিনি পরে একটি স্কুলছাত্র হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান—তাকে চুরি ও ট্রাফিক অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর নয় বছর আগেই প্রত্যাবাসনের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল।

এই পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সরকার বিদেশি অপরাধী ও অবৈধ অভিবাসীদের আইনি ফাঁকফোকর কাজে লাগাতে দেবে না। এজন্য মানবাধিকার আইন ও আপিল ব্যবস্থায় সংস্কার আনার প্রক্রিয়া চলছে, যাতে প্রত্যাবাসনের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো যায়।

সরকারের দাবি, যুক্তরাজ্যে যেকোনো বিদেশি নাগরিক কারাদণ্ড পেলে তাকে দ্রুততম সময়ে প্রত্যাবাসনের জন্য চিহ্নিত করা হয়। তবে বাস্তব চিত্র বলছে, নীতিগত ঘোষণা ও বাস্তব প্রয়োগের মধ্যে এখনও বড় ধরনের ব্যবধান রয়ে গেছে।

সূত্রঃ জিবি নিউজ

এম.কে

আরো পড়ুন

ভিসা ও কাগজপত্র জটিলতায় যুক্তরাজ্য থেকে ফেরত পাঠানো হলো বাংলাদেশিদের

লন্ডন পুলিশ প্রধানের পদত্যাগের দাবি

নিউজ ডেস্ক

যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন খাতে শ্রমিক সংকটের আশঙ্কা