রিফর্ম ইউকের নেতা নাইজেল ফ্যারাজ তীব্র রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়েছেন হ্যাম্পশায়ারের মেয়র পদে দলের প্রার্থী ক্রিস প্যারিকে বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে। সাবেক রয়্যাল নেভি রিয়ার অ্যাডমিরাল ক্রিস প্যারি ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ল্যামিকে লক্ষ্য করে “ক্যারিবিয়ানে ফিরে যাওয়া” এবং তার “আনুগত্য” নিয়ে মন্তব্য করার পর থেকেই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছেন। লন্ডনে জন্ম ও বেড়ে ওঠা ল্যামির বিরুদ্ধে এমন বক্তব্যকে ব্যাপকভাবে বর্ণবাদী হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
সমালোচনার মুখেও ক্রিস প্যারি তার অবস্থান থেকে সরে আসেননি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি তার মন্তব্যের সাফাই দিয়ে বলেন, “বাড়ি হলো যেখানে হৃদয় থাকে।” একই সঙ্গে তিনি কুখ্যাত ডানপন্থী সাবেক রাজনীতিক ইনক পাউয়েলকে “অপূর্ণ” বলে উল্লেখ করেন। ১৯৬৮ সালে পাউয়েলের ‘রিভারস অব ব্লাড’ ভাষণ যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে বর্ণবাদের অন্যতম প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হলেও নাইজেল ফ্যারাজ অতীতে তাকে নিজের “রাজনৈতিক নায়ক” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
ক্রিস প্যারির অতীত মন্তব্যের তালিকাও নতুন করে আলোচনায় এসেছে। তিনি কৌতুক অভিনেতা স্যার লেনি হেনরির বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেন, বার্মিংহামকে “ব্যর্থ উপনিবেশ” বলেন এবং শহরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সংকট নিয়ে জরুরি কোবরা বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্তকে তাচ্ছিল্য করেন। এছাড়া তিনি নারী সহকর্মীদের অবমাননাকর ভাষায় আক্রমণ করেছেন এবং ভবিষ্যতে সংসদ মুসলিম এমপিতে ভরে যাবে—এমন মন্তব্যও করেছেন।
এই প্রেক্ষাপটে লেবার পার্টির চেয়ার আনা টারলি স্পষ্ট ভাষায় নাইজেল ফ্যারাজের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ক্রিস প্যারির বর্ণবাদী ও আপত্তিকর মন্তব্যের পরও তাকে বহাল রাখা লজ্জাজনক এবং এটি প্রমাণ করে যে ফ্যারাজ তার দলে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনিচ্ছুক। লেবারের দাবি, হ্যাম্পশায়ারের স্থগিত মেয়র নির্বাচনের আগেই প্যারিকে প্রার্থী পদ থেকে সরিয়ে দল থেকে বহিষ্কার করা উচিত।
এদিকে নাইজেল ফ্যারাজ নিজেও অতীতে বর্ণবাদ ও ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। যদিও তিনি দাবি করেছেন যে এসব মন্তব্যে তার কোনো বিদ্বেষপূর্ণ উদ্দেশ্য ছিল না, তবুও সাম্প্রতিক সময়ে এসব অভিযোগ নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে। একই সময়ে রিফর্ম ইউকের আরেক নেতা ইয়ান কুপার প্রথম প্রজন্মের অভিবাসীদের সংসদ সদস্য হওয়ার বিরোধিতা করায় দল থেকে বহিষ্কৃত হলেও ক্রিস প্যারির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ডেভিড ল্যামি এসব মন্তব্যের জবাবে প্রকাশ্যে নাইজেল ফ্যারাজকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, তিনি কখনো বর্ণবাদের কাছে নত হবেন না এবং এটিকে স্পষ্টভাবেই বর্ণবাদ হিসেবে চিহ্নিত করবেন। তার ভাষায়, ফ্যারাজের উচিত তার দলকে পরিষ্কার করা এবং ব্রিটিশ রাজনীতিতে “১৯৫০-এর দশকের ঘৃণার রাজনীতি” বন্ধ করা।
রিফর্ম ইউকের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে ক্রমবর্ধমান সমালোচনার মধ্যেই প্রশ্ন উঠছে—দলীয় শৃঙ্খলা ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নাইজেল ফ্যারাজ আসলে কোন পথে হাঁটছেন।
সূত্রঃ দ্য ইনডিপ্যান্ডেন্ট
এম.কে

