যুক্তরাজ্যে এনএইচএসের ব্যাকলগের কারণে ঘটছে চিকিৎসায় বিলম্ব। যার ফলশ্রুতিতে কয়েকশো লোক তাদের দৃষ্টি হারিয়েছে বলে একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ পায়।
অ্যাসোসিয়েশন অফ অপ্টোমেট্রিস্টস (এওপি) দ্বারা প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে এনএইচএস ইংল্যান্ডের পরিসংখ্যানগুলি দেখায়, ২০১৯ সাল থেকে চোখের পরীক্ষার জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষার কারণে অনেক রোগী দৃষ্টিশক্তি প্রায় হারাতে বসেছে। প্রায় কয়েকশ লোক এই দীর্ঘ প্রতীক্ষার লাইনে আছেন।
একটি সংস্থার জরিপে দেখা যায়, প্রায় কয়েকশ রোগী অতীব জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন নতুবা চোখের মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। তাছাড়া আরও কিছু রোগী রয়েছেন যাদের সমস্যা অতীব জরুরি না হলেও চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
এওপি জানায়, এমন অনেকেই আছে যারা দীর্ঘ অপেক্ষার জন্য চিকিৎসা সেবা নিতে অনীহা দেখায় কিন্তু তাতে চোখের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া খুবই স্বাভাবিক। ইংল্যান্ডে চক্ষু ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্টের ব্যাকলগটি এনএইচএসের দ্বিতীয় বৃহত্তম যার পরিমান ৬২৮৫০২ টি দাঁড়িয়েছে।
এওপি সতর্ক করে দিয়েছে, প্রায় অর্ধেকের বেশি চক্ষু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এনএইচএস ব্যাকলগের জন্য অকারণে দৃষ্টি হারাতে পারেন অনেক রোগী।
একটি জরিপে দেখা যায় গত দু’বছরে ম্যাকুলার ফাংশন বা চোখের এক ধরনের জটিলতার চিকিৎসার জন্য অর্ধেকেরও বেশি ব্রিটিশ অ্যাপয়েন্টমেন্টের অপেক্ষায় আছেন। জরিপ করা ৪৯৮ জনের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের এই অপেক্ষা কালীন সময়ে চোখের দৃষ্টি ক্ষমতার ক্ষতি হয়েছে বা হ্রাস পেয়েছে।
আই চ্যারিটি ম্যাকুলার সোসাইটির চিফ এক্সিকিউটিভ ক্যাথি ইয়েলফ বলেছেন, চিকিৎসা পাচ্ছে না তাই অন্ধ হয়ে যেতে পারে এই চিন্তায় লোকেরা “আতঙ্কিত”।
এওপি যুক্তরাজ্য সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানায়। এনএইচএসের উপর চাপ কমাতে কমিউনিটি অপ্টোমেট্রিস্ট সেবা চালু করারও পরামর্শ দেয়।
এওপি চিফ অ্যাডাম সাম্পসন বলেছিলেন, “ম্যাকুলার অবক্ষয়ের মতো রোগের ক্ষেত্রে চোখের ভালো চিকিৎসা সেবা রয়েছে। তবে অনেক হাসপাতালের সেই সেবা প্রদানের সক্ষমতা নেই। এরজন্য আরও প্রচুর চক্ষু বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন রয়েছে। এটি খুবই মর্মান্তিক যে রোগীরা অপেক্ষা করে বসে আছেন একটি এপয়েন্টমেন্টের জন্য। কিন্তু দীর্ঘ প্রতীক্ষার কারণে এদের অনেকেই দৃষ্টি শক্তি হারাবেন।”
ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ এণ্ড স্যোশাল কেয়ার জানায়, এনএইচএস তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং খুব দ্রুতই ব্যাকলগ ক্লিয়ার হয়ে যাবে। ২০২৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে একটা সমাধান আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস। তারা বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার প্রায় ৮ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করছে নতুন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও চক্ষু বিষয়ক কর্মী বাহিনী গড়ে তোলার জন্য। ২০২৩ সালের মধ্যে আরও নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে এবং বিদ্যমান চক্ষু বিভাগের কর্মীদের উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
উল্লেখ্য যে বৃটিশ গণমাধ্যমের এক রিপোর্টে দেখা যায় তৃতীয় বিশ্বের দেশিগুলোতেও মাত্র ১০ ডলারের বিনিময়ে একদিনের ভিতরেই চক্ষু বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হওয়া যায়। সেক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ পাওয়া অনেক কঠিন।