8.1 C
London
November 18, 2024
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে নির্বাচনঃ ভুমিধস জয়ের সামনে স্টারমার?

ব্রিটিনের নির্বাচনে লেবার পার্টির পরিসংখ্যান খুব একটা সুখের নয়। ১১৮ বছর বয়সী এই রাজনৈতিক দলটি মাত্র ৩৩ বছর ক্ষমতায় থাকতে পেরেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ক্লিমেন্ট অ্যাটলি, হ্যারল্ড উইলসন এবং টনি ব্লেয়ার ছাড়া দলটির কোনো নেতাই তেমন একটা জৌলুস ছড়াতে পারেন নি।

অবশ্য খুব শিগগিরই হয়ত এই তালিকায় নাম লেখাতে যাচ্ছেন স্যার কিয়ার স্টারমার। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে কনজারভেটিভ পার্টির সামনে সময় খুবই কম। অন্যদিকে, জরিপ বলছে, লেবার পার্টির জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে।

সবশেষ ১৯৯৭ সালে লেবার পার্টি টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে ভুমিধস বিজয় অর্জন করেছিল। সেটি ছিল ব্লেয়ারের প্রথম নির্বাচন। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তখনের সাথে এখনের পার্থক্য হলো, সেবার ব্লেয়ার যে জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন, স্টারমারের ক্ষেত্রে তেমনটা চোখে পড়ছে না।

ব্লেয়ার লেবার পার্টিকে আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন। পূর্বসুরিদের তুলনায় ব্লেয়ারের চলন-বলন ছিল একেবারেই আলাদা। ভোটার কাছে যাওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি যে কৌশল নিয়েছিলেন তা লেবার পার্টিতে আগে কখনোই দেখা যায়নি। স্টারমার এক্ষেত্রে অনেকটাই আলাদা। তিনি উঠে এসেছেন লেবার পার্টির হালকা বামপন্থি ঘরানা থেকে। রাজনৈতিক বাঁক বদলের ক্ষেত্রে তার মধ্যে শেখার আগ্রহ দেখা যায়।

একজন নেতা তার দলেরই প্রতিচ্ছবি, ২০২৪ সালে লেবার পার্টির ক্ষেত্রে যেটা দেখা যাচ্ছে। ১৯৯৭ সাল থেকে সময় ও পরিস্থিতিও ভিন্ন। এবারের জরিপে বলা হচ্ছে, লেবার পার্টি ৬৫০টি আসনের মধ্যে ৪৮৪টি আসন পেতে যাচ্ছে। আর এর মাধ্যমে ১৯৯৭ সালে লেবার পার্টির সাবেক নেতা টনি ব্লেয়ার ৪১৮ টি আসন পেয়ে যে ভূমিধস বিজয় পেয়েছিল সেই রেকর্ড ভাঙতে যাচ্ছেন স্টারমার। যদি এটা সত্যি হয় তাহলে এটি হবে ইতিহাসের রেকর্ড।

১৯৯৭ সালে টনি ব্লেয়ার ছিলেন তিন বছর যাবদ লেবার পার্টির নেতা এবং জরিপগুলোতে কখনোই তাকে প্রতিপক্ষের চেয়ে পিছিয়ে যেতে দেখা যায়নি। ১৯৯২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ব্ল্যাক ওয়েডনেস ডে’তে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে কনজারভেটিভ পার্টির খ্যাতি মিলিয়ে যায়। অবশ্য ১৯৯৭ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ায়। প্রবৃদ্ধি এবং কর সংগ্রহ বৃদ্ধির সম্ভাবনার কথাও তখন বলা হয়। এ বিষয়গুলো ব্লেয়ার সরকারের শুরুটা অনেকটাই মসৃণ করেছিল।

লেবার পার্টির পূর্বসূরি নেইল কিননক এবং জন স্মিথের কিছু কর্মকাণ্ডের কারণেও সুবিধা পেয়েছিলেন ব্লেয়ার। তারা দলের বামপন্থি ধারায় কাটছাট এনে নতুন সব পলিসি তৈরি শুরু করেছিলেন।

স্টারমারের সামনে এমন কোনো বাড়তি সুবিধা নেই। তিনি প্রায়ই বলে থাকেন, এমন কিছু চেষ্টা করছেন যা করতে কিননক, স্মিথ ও ব্লেয়ারের চার মেয়াদ সময় লেগেছিল। লেবার নেতা হিসেবে তার মেয়াদ, যে কোনো মানদণ্ডেই অসাধারণ।

স্টারমার লেবার পার্টির নেতৃত্বে আসেন ২০২০ সালে। তার পূর্বসূরি জেরেমি করবিনের সময় নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের মুখে পড়ে লেবার পার্টি। ১৯৩৫ সালের পরে এমনটা আর হয়নি। স্টারমার যেদিন নেতৃত্বে আসেন সেদিনও বোরিস জনসনের নেতৃত্বে থাকা কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ে লেবার পার্টি ২০ পয়েন্টে পিছিয়ে ছিল।

এর কিছু সময় পরেই ব্রিটেন করোনা মহামারির কারণে লকডাউনে চলে যায়। স্টারমার এ সময় চার দেওয়ালের ভেতর থেকেই দলকে নেতৃত্ব দেন। সে এক কঠিন সময় ছিল। আর এখন এটা মোটামুটি নিশ্চিত যে স্টারমারই হতে যাচ্ছেন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।

ব্লেয়ার নীতি তৈরিতে বছরের পর বছর কাজ করেছেন আর সেগুলোকে যথেষ্ট গুরুত্বের সাথেই বিবেচনা করা হতো কারণ তিনি যে ক্ষমতায় থাকছেন সর্বজনীন ধারণা এমনই ছিল। অন্যদিকে, স্টারমারের পথ এতোটা সহজ ছিল না। অর্থায়ন নিতে তাকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে এবং সরকারে যেতে সহায়ক নীতি তৈরিতেও তাকে অনেক কাজ করতে হয়েছে।

২০০৫ সালের নির্বাচনের টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসে লেবার পার্টি। সেই নির্বাচনের প্রচারের সময় টনি ব্লেয়ার জানতে চেয়েছিলেন, বিউরিতে কি অবস্থা। বিউরি হলো দক্ষিণপূর্ব ইংল্যান্ডের একটি শহর। শহরটিতে তখন রাজনৈতিক ঝড় বইছে। এটা এমন জায়গা যা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের ফল নির্ধারণ করে। শহরটি এক সময় শিল্প নির্ভর ছিল কিন্তু পরে সেবা ভিত্তিক অর্থনীতিতে পরিণত হয়। এর অর্থ হলো এই শহরের বাসিন্দারা সব সময় এমন দলকে ভোট দিয়েছে যারা নির্বাচনে জয় পেয়েছে। সে সময় উত্তর দেওয়া হয়েছিল, লেবার পার্টির জন্য বিউরিতে সমর্থন দেখা যাচ্ছে কিন্তু বিষয়টা খুব সহজ হবে না। ২০২৪ সালে এসে শহরটির দুটি আসনেই সমর্থন কনজারভেটিভ থেকে লেবারের দিকে ভারী হচ্ছে।

ব্রিটেনের রাজনীতি হলো দুটি ঘোড়ার মধ্যে প্রতিযোগীতা, যদি একটি দুর্বল হয় তাহলে আরেকটি জিতবে। আর এটাই স্টারমারের জন্য ভূমিধস বিজয় অর্জনের মোক্ষম সুযোগ।

সূত্রঃ সিএনএন

এম.কে
০৪ জুলাই ২০২৪

আরো পড়ুন

ব্রিটেনের রাস্তায় অন্ধ যাত্রীকে ফেলে যাওয়ায় ট্যাক্সি চালকের শাস্তি

নিউজ ডেস্ক

যুক্তরাজ্যে অভিবাসীদের বাসস্থানের জন্য কঠোর হচ্ছে সরকার

লন্ডনে বাড়ির চেয়ে বাড়ছে ভাড়াটেদের সংখ্যা