যুক্তরাজ্যে প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্ধারিত ব্লু ব্যাজ ব্যবস্থায় এখন রেকর্ড পরিমাণ জালিয়াতি ঘটছে। ব্যাজ চুরি, জাল তৈরি, মৃত ব্যক্তিদের ব্যাজ ব্যবহার এবং পরিবারের সদস্যদের অনুপস্থিতিতে তাদের ব্যাজ ব্যবহার—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তাদের দাবি, বর্তমানে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি ভুয়া ব্যাজ বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে।
হ্যাম্পশায়ারের পল স্লোয়ি পরিচালিত ব্লু ব্যাজ ফ্রড ইনভেস্টিগেশন (BBFI) সংস্থা জানিয়েছে, অনলাইনে শত শত পাউন্ডে ভুয়া ও চুরি হওয়া ব্যাজ বিক্রি হচ্ছে। এসব ব্যাজ দিয়ে মানুষ অবৈধভাবে ফ্রি পার্কিং সুবিধা নিচ্ছে। তিনি আরও কঠোর নজরদারি ও আইন প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে মামলা ও শাস্তির মাধ্যমে অপব্যবহারকারীরা নিরুৎসাহিত হয়।
ব্লু ব্যাজ ব্যবস্থার অধীনে প্রতিবন্ধীরা অন-স্ট্রিট পে-অ্যান্ড-ডিসপ্লে বেইতে বিনামূল্যে পার্ক করতে পারেন এবং হলুদ লাইনে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত গাড়ি রাখতে পারেন। এছাড়া, তারা লন্ডনের দৈনিক £15 কনজেশন চার্জ থেকেও অব্যাহতি পান। দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে ঘণ্টাপ্রতি £5.90 পর্যন্ত পার্কিং খরচের কারণে ব্লু ব্যাজ চোর ও প্রতারকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
এ অপব্যবহারের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে প্রকৃত প্রতিবন্ধীদের। সারেতে বসবাসকারী মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস রোগী স্টিভ সোয়ার জানিয়েছেন, প্রায়ই দেখা যায় প্রতিবন্ধী বেইগুলোতে বৈধ ব্যাজ ছাড়া গাড়ি পার্ক করা থাকে। তিনি বলেন, “গাড়ি ছাড়া আমি হয়তো ৯০% সময় ঘরের ভেতর কাটাতাম। অথচ এখন প্রতিদিন ভাবতে হয়, আমার ব্যাজ চুরি হয়ে যেতে পারে।”
ইস্ট সাসেক্স কাউন্টি কাউন্সিলের তদন্তে দেখা গেছে, প্রতি পাঁচটি ব্লু ব্যাজের একটি অপব্যবহৃত হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিবারের সদস্যরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে ব্যাজ ব্যবহার করেন, আবার মৃত আত্মীয়ের ব্যাজ ব্যবহার করার ঘটনাও ধরা পড়েছে।
কেন্টের এরিকা নর্থ, যিনি এমএস রোগী ও বিবিসি চিলড্রেন ইন নিডে কাজ করেন, জানিয়েছেন তার এলাকায় প্রতিবন্ধী বেইয়ের চাহিদা এত বেশি যে সকাল ১০টার মধ্যেই প্রায় সবগুলো ভর্তি হয়ে যায়। তিনি বলেন, “ব্লু ব্যাজ কোনো বিশেষ সুবিধা নয়, এটা আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ।”
অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে অনেক প্রতিবন্ধী গাড়িতে বিশেষ লক ব্যবহার করছেন, যাতে ব্যাজ চুরি না হয়। সারি কোয়ালিশন অব ডিসেবল্ড পিপলের প্রধান নিকি রবার্টস বলেন, “মানুষ ভাবে না, ভুয়া ব্যাজ ব্যবহারে প্রকৃত প্রতিবন্ধীরা কতটা বিপাকে পড়ছেন। অথচ এটি তাদের জন্য জীবনরক্ষাকারী।”
আইন অনুযায়ী, বৈধ ব্যাজ ছাড়া প্রতিবন্ধী বেইতে পার্ক করলে জরিমানা করা হয়। অন্যের ব্যাজ ব্যবহারকে জালিয়াতি হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এতে সীমাহীন জরিমানা বা সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। গত ডিসেম্বর ব্রাইটন ও হোভে ব্লু ব্যাজ জালিয়াতি দমন করতে নতুন কর্মসূচি চালু করা হয়েছে।
তবে সীমিত সম্পদ ও অন্যান্য অগ্রাধিকারের কারণে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সবক্ষেত্রে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নিতে পারছে না। Disabled Motoring UK চ্যারিটি বলছে, কাউন্সিলগুলোকে আরও বেশি সম্পদ দিতে হবে। পরিবহন দপ্তর জানিয়েছে, তারা স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করছে এবং পুলিশের সঙ্গে কাজ করছে। পাশাপাশি চুরি হওয়া ব্যাজ বাতিল ও অপব্যবহার রোধে নতুন ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫