6.4 C
London
December 23, 2024
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

সুনাকের ‘বালির দুর্গ’ কতোদিন টিকে থাকবে

সফল একটা সপ্তাহ পার করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সুসংবাদ সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনেরা বলছেন, ঋষি সুনাককে তারা মনে করিয়ে দিয়েছেন, বালির ওপর তার এই দুর্গ নির্মিত।

যুক্তরাজ্যের জন্য সুসংবাদটি হচ্ছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এ সপ্তাহে বলেছে, যুক্তরাজ্য মন্দার পথে নেই। দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ও জ্বালানির দাম পড়তির দিকে। এমন কি ঋষি সুনাকের চাওয়ার চেয়ে এই হার যথেষ্ট ভালো।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যুক্তরাজ্যের সবকিছু এখনো ঠিকঠাকমতো চলছে না। তবে ঋষি সুনাকের পূর্বসূরি লিজ ট্রাস যে জট পাকিয়েছিলেন আর অর্থনৈতিক যে জুয়া খেলেছিলেন, তাতে এক দশকের মধ্যে ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের মূল্য সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছিল। ঋষি সুনাক দাবি করতে পারেন, পূর্বসূরির কাছ থেকে যে অস্থির পরিস্থিতিতে তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তিনি সেই নড়বড়ে জাহাজকে কিছুটা সুস্থির করতে পেরেছেন।

 

 

 

 

তবে ঋষি সুনাকের জন্য দুঃসংবাদ হচ্ছে, তার দল কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যে এখনো চরম বিভক্তি রয়েছে। দলের সদস্যদের মধ্যে এখনো নানা বিষয় নিয়ে বনিবনা হচ্ছে না। তারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পরস্পরের বিপক্ষে লড়ছেন।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ঋষি সুনাক ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক নমনীয় অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সুনাক, জনসন ও ট্রাসের কাছাকাছি থাকা রক্ষণশীলদের থেকে বিভিন্ন কারণে দূরে সরে আছেন। রক্ষণশীল ডানপন্থীদের মতে, ঋষি সুনাক নীতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।

এ কারণেই কনজারভেটিভ পার্টির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে দুর্বল হয়ে পড়েছেন ঋষি। এই সপ্তাহে দুটি বিষয় ঘটেছে, যা কিছু রক্ষণশীলদের মনে করিয়ে দেয়, কত দ্রুত সবকিছু ঘুরে যেতে পারে।

 

 

 

 

প্রথমটি হচ্ছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যানের সঙ্গে কী করা হবে, তার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঋষি। সুয়েলা স্বীকার করেন, গাড়িতে গতিসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগে জরিমানা গোনার হাত থেকে রক্ষা করতে তিনি বেসামরিক কর্মকর্তাদের সাহায্য চেয়েছিলেন। সুনাক সিদ্ধান্ত দেন, সুয়েলার কার্যকলাপ মন্ত্রিসভার কোড ভাঙেনি। অথচ নিয়ম অনুযায়ী আইন ভাঙার অপরাধে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে হতো। সুনাক দ্রুত তাকে সুরক্ষা দিয়েছেন। কারণ, সুনাক জানেন তিনি সুয়েলার কাছে দুর্বল। সুয়েলার সঙ্গে তিনি লড়াইয়ে পারবেন না। তাকে পছন্দ করেন না এমন অনেকেই সুয়েলার সঙ্গে রয়েছেন।

এর আগে গত সপ্তাহে লন্ডনে সুনাকবিরোধী এক সম্মেলনে বক্তব্য দিয়েছিলেন সুয়েলা ব্রেভারম্যান। ভবিষ্যতে কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বে আসতে চান তিনি। তাই সুনাকের কথার তোয়াক্কা না করেই ওই প্ল্যাটফর্মে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন সুয়েলা ব্রেভারম্যান।

দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, আবার বরিস জনসনের আলোচনায় ফিরে আসা। করোনার সময় বরিস জনসন নিয়ম ভেঙেছিলেন বলে যে তথ্য সামনে এসেছে, পুলিশের প্রতিবেদনে বিষয়টি তার চেয়ে বেশি গুরুতর। পুলিশ বলছে, যতটুকু বিষয় সামনে এসেছে, জনসন তার চেয়ে আরও বেশি আইন ভঙ্গ করেছেন। বরিসের মিত্ররা বিষয়টিকে ভালোভাবে নেননি। তারা এ জন্য সুনাককেই দুষছেন। তাদের অভিযোগ, সবকিছুর পেছনে তিনিই রয়েছেন। তবে ঋষি সুনাকের মুখপাত্র এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

 

 

 

 

 

ঋষি সুনাকের কিছু মিত্র ব্রেভারম্যানকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে আনায় সুনাকের সমালোচনা করেন। একবার মন্ত্রিত্বের কোড লঙ্ঘনের জন্য তাকে ট্রাসের সরকার থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে সবাই জানে। পরবর্তী নির্বাচন আসার আগে নেতৃত্বের যেকোনো শীর্ষ পদে আসতে সবার আগে যিনি মন্ত্রিত্ব ছাড়বেন, তিনি ব্রেভারম্যান। কনজারভেটিভ পার্টি যদি কোনো কারণে ক্ষমতা হারায়, তবে সে পরিস্থিতিও আসতে পারে।

কনজারভেটিভ পার্টির একজন জ্যেষ্ঠ পার্লামেন্ট সদস্য বলেন, ঋষি সুনাক ক্ষমতায় এসেছেন, তিনি দুর্বল তা জেনেই। বরিস জনসন ও লিজের মতো ততটা শক্তিশালী তিনি নন, সেটাও তিনি জানেন।

ওই সদস্য আরও বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে, সুনাকের মতো খুব দুর্বল লোক ইতিমধ্যে দলের অনেক ক্ষতি করে ফেলেছে। তিনি বরিস বা লিজের ছায়া থেকে বেরিয়ে নিজের মতো করে একটা সরকার গড়তে পারবেন না।

 

 

 

 

কনজারভেটিভ পার্টির একজন সাবেক পরামর্শক বলেন, যদি জরিপে উন্নতি না হয়, তবে সুনাকের ঝুঁকি বাড়তে পারে। পার্লামেন্ট সদস্যরা যদি ভাবতে শুরু করেন, পরবর্তী নির্বাচনে জেতা যাবে না, তবে তাদের মধ্যে কেউ কেউ দল ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন। দল এত দিন ধরে যে ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছে, তা ভেঙে পড়বে।

নির্বাচনী ওই পরামর্শক বলেন, ‘আমরা শীর্ষ পদ থেকে কাউকে নেতৃত্বের জন্য বেছে নিই। কিন্তু ব্রেভারম্যানের মতো কেউ যদি ইতিমধ্যে পরবর্তী নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার কথা ভাবতে শুরু করেন, তবে পরের নির্বাচনে যা হতে যাচ্ছে, তা বাজে উদাহরণ হয়ে দাঁড়াবে।’

ঋষি সুনাক ক্ষমতায় এসেছিলেন সরকারে আরও বেশি পেশাদার পদ্ধতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে। যুক্তরাজ্যে আগের তিন বছরে যা দেখা যায়নি সুনাকের ধীর ও অবিচল ব্যবস্থাপনা শৈলী ভোট বাড়াতে পারে এটাই ছিল কনজারভেটিভ পার্টির বিশ্বাস। এইজন্য এই মুহূর্তে কেউ তাকে পদ থেকে সরানোর চেষ্টাকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে না।

 

 

 

 

আবার যুক্তরাজ্যে রাতারাতি কোনো পরিবর্তন আসবে বা বরিস জনসন আবার ক্ষমতায় ফিরছেন—এমন কথাও কেউ ভাবছে না। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত ঋষি সুনাক দায়িত্বে থাকুন, তা অনেকের চাওয়া। তার হাত ধরে অর্থনীতি চাঙা হোক, এটাও চাইছে অনেকে। তবে পরামর্শক জানান, কনজারভেটিভ পার্টির কদর্য রূপ সামনে আসতে শুরু করলে এতে দলাদলি ফিরে আসবে এবং এর ফলে নির্বাচনী পরাজয়ও হতে পারে কনজারভেটিভ পার্টির।

এ সপ্তাহে কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যরা এসব কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। একজন পার্লামেন্ট সদস্য বলেছেন, আধুনিক কনজারভেটিভ পার্টি পতন থেকে তিন ধাপ দূরে রয়েছে মাত্র।

এম.কে
০৪ জুন ২০২৩

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের টানতে শুরু হয়েছে নানা প্রচারণা

সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজে অংশ নিতে না পারায় ক্ষমা চাইলেন প্রিন্সেস অব ওয়েলস

ব্রিটেনের বিমানবন্দরগুলোতে নতুন ব্যবস্থা