ইউরোপীয় ইউনিয়নের বহিঃসীমান্ত দিয়ে অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধ করার অংশ হিসেবে রোমানিয়া ও বুলগেরিয়ার সঙ্গে দুটি পাইলট প্রকল্প ঘোষণা করেছে ইউরোপীয় কমিশন৷
সোমবার পাইলট প্রকল্প দুটির বিষয়ে ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইউরোপের বহিঃসীমান্ত নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বুলগেরিয়া-তুরস্ক সীমান্তকে কঠোর নজরদারির মধ্যে নিয়ে আসাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে৷
এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে অভিবাসন প্রত্যাশীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে ক্যামেরা স্থাপন, যানবাহন টহল এবং ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণসহ বহুপাক্ষিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণকে জোরদার করা হবে৷
ইউরোপীয় কমিশনের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক কমিশনার ইলভা ইয়োহানসন বলেছেন, সীমান্ত সুরক্ষা বাড়ানোর পাশাপাশি এর অর্থ হবে, ‘‘আশ্রয় প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করা এবং অনিয়মিত অভিবাসীদের আরও তাড়াতাড়ি নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াকে কার্যকর করা৷’’
পাইলট প্রজেক্ট দুটিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত সুরক্ষা সংস্থা ফ্রন্টেক্স এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ইউরোপোল একসঙ্গে কাজ করবে৷
ইইউ কমিশন জানিয়েছে, ইউরোপে আশ্রয় যোগ্যদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ এবং অনিয়মিতদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াকে জোরদার করা গুরুত্বপূর্ণ৷
গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নে আসা অভিবাসন প্রত্যাশীদের মধ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা বেড়েছে৷ এমনকি, চলতি বছরেও আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ এ বছর এখন পর্যন্ত ২০ হাজারেরও বেশি অভিবাসন প্রত্যাশী সমুদ্রপথে ইটালিতে পৌঁছেছেন৷ গত বছরের এই সময়ে এসেছিলেন মাত্র ছয় হাজার ৩৭৯ জন৷ আর ২০২১ সালে সংখ্যাটি ছিল ছয় হাজার ৬৭জন৷
১৫ মার্চ একটি কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তিতে সই করেছে রোমানিয়া এবং বুলগেরিয়া৷ যা দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিকে আরো শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ এই দুটি দেশই সেনজেনভুক্ত হওয়ার চেষ্টায় আছে৷
রোমানিয়ান সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, অর্থনীতিসহ বিভিন্নখাতে সহযোগিতার অংশ হিসাবে ডানিয়ুব নদী এবং কৃষ্ণ সাগরে পরিবহন অবকাঠামো প্রকল্পে একযোগে কাজ করছে রোমানিয়া এবং বুলগেরিয়া৷
সেনজেন জোনে যোগ দিতে উদগ্রীব দুই দেশের মধ্যে অংশীদারত্ব চুক্তি সইয়ের সময় রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্লাউস ইওহানিস বলেন, ‘‘অনিয়মিত অভিবাসনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত৷’’
ফেব্রুয়ারির শুরুতে তুরস্কের সঙ্গে বুলগেরিয়ায় সীমান্ত জোরদার ও প্রসারিত করতে ইউরোপীয় কমিশনের কাছে অর্থ সহযোগিতা চেয়েছিলেন বুলগেরিয়ার প্রেসিডেন্ট রুমেন রাদেভ৷ ওই সময় ইউরোপীয় সংবাদ মাধ্যম এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, তুরস্ক-বুলগেরিয়ার ওই সীমান্তটির দৈর্ঘ্য ১৩০ কিলোমিটার৷ ওই প্রসঙ্গে বুলগেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ‘‘ইইউতে অনিয়মিত প্রবেশকে ন্যূনতম পর্যায়ে আনতেই সীমান্ত সুরক্ষা বাড়ানো ও প্রসারিত করা প্রয়োজন৷’’
সংবাদ মাধ্যমটি আরো জানিয়েছে, তুরস্কের সঙ্গে সীমান্ত বেড়া সুরক্ষিত করতে ইইউর জরুরি তহবিল থেকে দুইশো কোটি ইউরো বুলগেরিয়াকে দিতে সুপারিশ করেছে অস্ট্রিয়া সরকার৷ সীমান্তে নজরদারি ও টহল বাড়ানোর অংশ হিসেব যথেষ্ট পরিমাণ নজরদারি সরঞ্জামও পেয়েছে বুলগেরিয়া৷ তবে সীমান্ত প্রাচীর নির্মাণ নিয়ে আপত্তি আছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের৷ ফলে, বুলগেরিয়ার প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবে তারা না বলে দিয়েছে৷
বুলগেরিয়ার প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রপতি রাদেভ ফেব্রুয়ারিতে বলেছিলেন, ‘‘সীমান্ত সুরক্ষায় আমাদের কাছে ভাল সরঞ্জাম থাকার পরেও একটি প্রশ্ন থেকে যায়৷ সেটি হলো, অভিবাসন প্রত্যাশীরা যদি কোনোভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ফেলে, তাহলে আমরা তাদের সঙ্গে কী আচরণ করব?’’
এই বিষয়টি তুলে ধরেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো সংস্থাগুলো৷ তারা বলছে, ইউরোপের বহিঃসীমান্তের অনেক দেশ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিবন্ধন এবং আশ্রয়ের আবেদনের অনুমতি দেওয়ার বদলে তাদের অবৈধভাবে ফেরত পাঠায় বা পুশব্যাক করে৷
ফেব্রুয়ারিতে অভিবাসন প্রত্যাশীদের অনেকে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বুলগেরিয়ার সীমান্তরক্ষীরা তাদের সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয় এবং মারধরের পাশাপাশি নৃশংস আচরণ করে৷ তবে অভিযোগটি অস্বীকার করেছে বুলগেরিয়ান কর্তৃপক্ষ৷
বুলগেরিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান ডেমেরজায়িভ বলেন, ‘‘অভিবাসন চ্যালেঞ্জকে সমন্বিতভাবে মোকাবিলা করা ও এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকার ক্ষেত্রে এই পাইলট প্রকল্পটি আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ৷’’
ইউরোপীয় কমিশনের দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘‘এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে আশ্রয় আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি করা এবং আশ্রয় অযোগ্যদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর কাজটি গতিশীল হবে৷ এটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও এর সদস্য রাষ্ট্রের নিরাপত্তা আরো জোরদার হবে৷’