আগামী সপ্তাহ থেকেই স্টুডেন্ট ভিসা বা বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা নিয়মের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। সরকারি তথ্য অনুসারে, নতুন করে রেকর্ডসংখ্যক অভিবাসী প্রবেশের কারণে চাপের মুখে পড়েছে দেশটির আবাসন ও অবকাঠামো খাত।
আগামী শনিবার ২৩ মার্চ থেকেই স্টুডেন্ট ভিসা ও স্নাতক ভিসার জন্য ইংরেজি ভাষার দক্ষতা কঠোর করতে যাচ্ছে দেশটি। এ ছাড়া বারবার নিয়ম ভাঙলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী নিয়োগ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোকে সাময়িক বরখাস্ত করার ক্ষমতা পাবে সরকার।
অস্ট্রেলীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লেয়ার ও’নিল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘নতুন এ পদক্ষেপগুলো অভিবাসনের মাত্রা কমিয়ে আনবে। এর পাশাপাশি অভিবাসন কৌশলে আমাদের ভেঙে পড়া সিস্টেম ঠিক করার প্রতিশ্রুতিও পূরণ হবে।’ প্রাথমিকভাবে অস্ট্রেলিয়ায় কাজ করতে আসা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে একটি নতুন ‘প্রকৃত শিক্ষার্থী যাচাই’ ব্যবস্থা চালু করা হবে। এ ছাড়া আরও বেশি সংখ্যক ভ্রমণ ভিসায় মেয়াদ না বাড়ানোর শর্ত আরোপ করা হবে।
গত বছর পূর্বতন সরকার প্রবর্তিত কোভিড সময়কার সুযোগ-সুবিধাগুলো বন্ধ করতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়ার পরে নতুন এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে। কোভিডের সময় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কর্মঘণ্টার ওপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, করোনা মহামারিতে কঠোর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ আরোপের কারণে প্রায় দুই বছর ধরে বিদেশি শিক্ষার্থী ও শ্রমিকদের দেশে প্রবেশ করতে দেয়নি অস্ট্রেলিয়া। এতে দেশটিতে দক্ষ কর্মীর অভাব দেখা দেয়। ঘাটতি পূরণে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গুলোকে কর্মী নিয়োগে সহায়তা করতে ২০২২ সালে বার্ষিক অভিবাসন সংখ্যা বাড়ায় অস্ট্রেলিয়া।
কিন্তু বিদেশি কর্মী ও শিক্ষার্থী সংখ্যা আকস্মিক বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশটির সংকুচিত হয়ে আসা আবাসন বাজারের ওপর চাপ বেড়ে যায়।
আজ বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিট অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা ৬০ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড ৫ লাখ ৪৮ হাজার ৮০০ জনে দাঁড়িয়েছে, যা ২০২৩ সালের জুনের ৫ লাখ ১৮ হাজার অভিবাসীর চেয়েও বেশি।
সামগ্রিকভাবে, অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যা ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২ কোটি ৬৮ লাখে দাঁড়ায়। যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে রেকর্ডের দ্রুততম গতি।
মূলত ভারত, চীন ও ফিলিপাইন থেকেই এই রেকর্ড পরিমাণ অভিবাসী অস্ট্রেলিয়ায় যায়। এতে শ্রমিকসংখ্যা এবং মজুরি চাপ কমলেও, ইতিমধ্যে সংকুচিত আবাসন বাজারের ওপর চাপ বেড়েছে। নির্মাণ ব্যয় বাড়ার সঙ্গে রেকর্ড পরিমাণে কমেছে ভাড়া বাড়ির সংখ্যা।
ও’নিল বলেন, গত সেপ্টেম্বর থেকে সরকারের পদক্ষেপের কারণে অভিবাসীর সংখ্যা কমেছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভিসা অনুদান আগের বছরের তুলনায় ৩৫ শতাংশ কমিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে বার্ষিক অভিবাসী গ্রহণের সংখ্যা ২ লাখ ৫০ হাজারে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
গত ১১ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে ১০ বছর মেয়াদি নতুন অভিবাসন পরিকল্পনা ঘোষণা করেন ক্লেয়ার ও’নিল। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আগের সরকারই অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন ব্যবস্থাকে ‘হ য ব র ল’ অবস্থায় রেখে গেছে। নতুন পরিকল্পনা অনুসারে, বিদেশি শিক্ষার্থী এবং স্বল্প দক্ষ কর্মী ভিসার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে। কঠোরতা বাড়বে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম ইংরেজি ভাষা দক্ষতার ওপর।
সূত্রঃ রয়টার্স
এম.কে
২২ মার্চ ২০২৪