17.2 C
London
November 24, 2024
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)শীর্ষ খবর

আশ্রয়প্রার্থীদের বয়স যাচাইয়ের আইন করছে যুক্তরাজ্য

অপ্রাপ্তবয়স্ক বলে মিথ্যা তথ্য দেয়া ঠেকানো এবং সন্দেভাজন আশ্রয়প্রার্থীদের বয়স নিশ্চিত করার জন্য তাদের হাড় এবং দাঁতের এক্স-রে করার বিধান রেখে একটি আইন তৈরি করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য৷ মঙ্গলবার এ ঘোষণা দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার৷

যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে অভিবাসন খুবই আলোচিত ও বিতর্কিত একটি বিষয়৷ তবে অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে দেশটির সরকার৷

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই সপ্তাহে মন্ত্রণালয় আইনটি পার্লামেন্টে উত্থাপন করবে৷ তারপর সংসদে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে এটি অনুমোদন করা হবে৷ এই আইনের মধ্য দিয়ে, এক্স-রে করার মাধ্যমে আশ্রয়প্রার্থীদের বৈজ্ঞানিকভাবে বয়স নির্ধারণের অনুমতি পাবে যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষ৷

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরবর্তীতে আইনটিকে আরো নির্দিষ্ট করতে চায়৷ এর মধ্য দিয়ে দাঁত, হাত ও কব্জির এক্স-রে এবং হাঁটু ও গলার হাড়ের এমআরআই করে বয়স নির্ধারণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে চায় তারা৷

এ ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষা সাধারণত ইউরোপীয় দেশগুলোতে করা হয়৷ কিন্তু কিছু সংগঠন ও স্বাস্থ্যবিদেরা অবশ্য এসব পরীক্ষার ফল নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন৷

যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ‘‘বয়স নিশ্চিত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া৷ কারণ, প্রাপ্তবয়স্ক অনেক আশ্রয়প্রার্থী নিজেদের অপ্রাপ্তবয়স্ক পরিচয় দিয়ে সুবিধা নিতে চায়৷ আর যারা সত্যিই অপ্রাপ্তবয়স্ক, তাদের বয়স নিশ্চিত করা গেলে তাদের জন্য বিদ্যমান সুবিধাগুলো নিশ্চিত করা যাবে৷’’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, ২০১৬ থেকে এ বছরের জুনের মধ্যে ১১ হাজার ২৭৫ জন আশ্রয়প্রার্থীর ঘটনা পাওয়া গেছে, যেখানে বয়স নিয়ে বিতর্ক ছিল৷ এসব ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচ হাজার ৫৫১ জন প্রাপ্তবয়স্ক বলে প্রমাণিত হয়েছে৷

প্রতি বছর উত্তর ফ্রান্স থেকে ছোটো নৌকায় চড়ে বিপজ্জনক ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে হাজার হাজার অভিবাসী আসেন যুক্তরাজ্যে৷ এই অনিয়মিত আগমন থামাতে বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার৷

ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসা অভিবাসন প্রত্যাশীদের ঠেকানোর ‘শেষ অস্ত্র’ হিসেবে অনিয়মিত অভিবাসন আইন করেছে যুক্তরাজ্য সরকার৷ নতুন এই আইন ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসাকে ‘আইন বর্হিভূত’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে৷ ফলে, যারা এই অভিবাসন রুট দিয়ে যুক্তরাজ্যে আসবেন, তারা দেশটিতে আশ্রয় চাওয়ার অধিকার হারাবেন৷

শুধু তাই নয়, এই আইনের আওতায় চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিজ দেশে অথবা নিরাপদ তৃতীয় দেশে কিংবা যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর আগে যে দেশ হয়ে এসেছেন, সেসবের কোনো একটি দেশে ফেরত পাঠাতে পারবে সরকার৷

ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের ৫৭টি দেশকে নিরাপদ মনে করে যুক্তরাজ্য৷ তবে কাউকে নিরাপদ তৃতীয় দেশে ফেরত পাঠাতে হলে সেই দেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের চুক্তির প্রয়োজন হবে৷ আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডার সঙ্গে ইতিমধ্যেই সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে ফেলেছে দেশটি৷

কিন্তু, আশ্রয়প্রার্থীদের নিজ দেশে না রেখে পূর্ব আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায় পাঠাতে যুক্তরাজ্য সরকারের নেয়া পরিকল্পনাকে আইন বর্হিভূত উল্লেখ করে রায় দিয়েছে দেশটির আদালত৷ ফলে আটকে গেছে ঋষি সুনাকের নেতৃত্বাধীন সরকারের নেয়া এই উদ্যোগ৷

এদিকে, দেশটির আশ্রয় আবেদন গত দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ শুধু তাই নয়, আশ্রয়আবেদন যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দিতে গিয়েও হিমশিম খাচ্ছে দেশটির সরকার৷ কারণ, নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা অর্থাৎ ব্যাকলগ গত জুনে রেকর্ড ছাড়িয়েছে৷

হোম অফিস অর্থাৎ দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালেয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শেষ ১২ মাসে অনিয়মিত পথে যুক্তরাজ্যে আসা অভিবাসীদের মধ্যে ৭৮ হাজার ৭৬৮ জন আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন৷ আগের ১২ মাসের তুলনায় যা অন্তত ১৯ শতাংশ বেশি৷

সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকা আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা এক লাখ ৩৪ হাজার৷ আর নির্ভরশীলদের অন্তর্ভুক্ত করা হলে সেই সংখ্যাটি হয় এক লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৭৷ গত ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছিলেন, ২০২৩ সালের মধ্যেই এই ব্যাকলগ শেষ করতে চান তিনি৷

কারণ, আগামী বছর যুক্তরাজ্যে জাতীয় নির্বাচন৷ তার আগেই অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার হিসেবে নিয়েছেন রক্ষণশীল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক৷

এম.কে
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আরো পড়ুন

ভাষা বুঝতে না পারায় ‘ভীতিকর ও মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্য’ ফেসবুকে

বাংলাদেশের ৫ বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাজ্যের কালো তালিকায়

গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা বদলে দেবে অ্যাপেলের ‘কারপ্লে’