1 C
London
January 3, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

ইংল্যান্ডে গৃহহীন পরিবারদের বড় শহর থেকে সরিয়ে নিতে কাজ করছে সরকার

যুক্তরাজ্যে গৃহহীন পরিবারগুলোকে কম সময়ের নোটিশে বড় শহর হতে দূরবর্তী শহরে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে যুক্তরাজ্য কাউন্সিল সমূহ।

ইংল্যান্ডের কাউন্সিলগুলো গৃহহীন পরিবারগুলোকে বড় শহর এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ড থেকে স্থায়ীভাবে সরিয়ে সস্তা এলাকায় বসবাসের ব্যবস্থা করতে পুনর্বাসন কোম্পানিগুলোকে কোটি কোটি টাকা দিচ্ছে বলে জানা যায়। এই পদ্ধতিকে একটি “জাতীয় কলঙ্ক” বলে অভিহিত করা হয়েছে। যা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে উঠে আসে।

গার্ডিয়ানের স্থানীয় সরকার ব্যয়ের তথ্য বিশ্লেষণ দেখিয়েছে যে, যুক্তরাজ্যের দুটি বৃহত্তম শহর লন্ডন ও বার্মিংহাম এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের একাধিক স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ২০২০ সাল থেকে সস্তা এলাকায় স্থানান্তর করার জন্য কোম্পানিগুলোকে £৫.২ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি দিয়েছে।

এসব কোম্পানি সস্তা ভাড়ার ঘর খুঁজে বের করার চেষ্টা করে, যেখানে ভাড়া এবং লোকাল হাউজিং এলাউন্সের হার সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে, দেশটির বেশিরভাগ এলাকায় ভাড়ার হার লোকাল হাউজিং এলাউন্সের হারকে ছাড়িয়ে গিয়েছে।

এইসব গৃহহীন পরিবারের স্থানান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এই সকল পরিবারদের স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে তাদের প্রাইভেট রেন্টেড সেক্টরে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং স্থায়ীভাবে পুনর্বাসিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাধারণত, এই প্রক্রিয়ার পর তাদের মূল কাউন্সিলের সঙ্গে কোনো সংযোগ থাকে না, ফলে বাড়ি ফিরে যাওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে।

লন্ডনে, যেসব পরিবার ব্যয়বহুল অস্থায়ী আবাসনে বসবাস করছে, তাদের অনেক সময় মাত্র ২৪ ঘণ্টার নোটিশে দেশের অন্য প্রান্তে নতুন বাড়ি নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে জরুরি আশ্রয় থেকে বের করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয় বলে জানা যায়।

বিশেষজ্ঞরা “সামাজিক পরিচ্ছন্নতা” এবং “জাতিগত, জোরপূর্বক স্থানচ্যুতি” নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের এমন এলাকায় স্থানান্তর করা হয়, যা মূলত শ্বেতাঙ্গপ্রধান এবং যেখানে তাদের পরিচিত কেউ নেই। উত্তর-পূর্ব ইংল্যান্ডের এমপিরা বলছেন, এসব মানুষদের খুবই দরিদ্র এলাকায় স্থানান্তর করা হচ্ছে, যেখানে অতিরিক্ত কোনো সহায়তা দেওয়া হচ্ছে না।

স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় জড়িত কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি রিলকএইট ইউকে। লন্ডন এবং বার্মিংহাম সিটি কাউন্সিল ২০২০ সাল থেকে কোম্পানিটিকে অন্তত £৩ মিলিয়ন পাউন্ড দিয়েছে। এর মধ্যে ৪০% অর্থ গত বছরেই দেওয়া হয়েছে।

রিলকএইট ইউকে জানিয়েছে, তারা নতুন এলাকা অনুযায়ী বাড়ি ভাড়া, পরিবহন, আসবাবপত্র এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করে। যার খরচ কাউন্সিলগুলো পরিশোধ করে।

ডারহাম কাউন্টি কাউন্সিল বলেছে, লন্ডনের গৃহহীন মানুষদের তাদের এলাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে, তবে কাউন্সিলের কাছে এটি আগে থেকে জানা ছিল না। নর্থান ইকো’র রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছর লন্ডন থেকে অন্তত ২৪টি পরিবার ডারহামে স্থানান্তরিত হয়েছে, যাদের কেউ কেউ কেবল একটি চাবি এবং একটি ঠিকানা নিয়ে এসেছে।

এমপি মেরি কেলি ফয় বলেন, “পরিবারগুলোকে এমন এলাকায় ফেলে দেওয়া হচ্ছে, যেখানে কোনো চলমান সহায়তা নেই। এটি শুধু তাদের জন্যই নয়, এমন দরিদ্র সম্প্রদায়গুলোর জন্যও চরম অন্যায়।”

২০১০ সাল থেকে স্থানীয় সরকারগুলোর তহবিল ৪৬% কমেছে। এর সঙ্গে সামাজিক বাসস্থানের সংখ্যা হ্রাস, সস্তা ব্যক্তিগত আবাসনের অভাব এবং গৃহহীনতার তীব্র বৃদ্ধি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।

 

২০১৩ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ইংল্যান্ডে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং হাউজিং অ্যাসোসিয়েশনগুলোর মালিকানাধীন সামাজিক বাসস্থানের সংখ্যা দ্রুত কমছে। অক্টোবরে, সেভিল’স-এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, লন্ডনের মাত্র ৫% বাড়ি লোকাল হাউজিং এলাউন্স অনুযায়ী ভাড়ায় পাওয়া যায়।

কাউন্সিলগুলো সরকারের প্রতি লোকাল হাউজিং এলাউন্সের হার বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে, যা অস্থায়ী আবাসনের খরচ কমাবে এবং গৃহহীনতা রোধে সহায়ক হবে। তবে সরকার ঘোষণা করেছে, ২০২৬ সাল পর্যন্ত লোকাল হাউজিং এলাউন্সের হার স্থগিত থাকবে।

ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেইনার সম্প্রতি কাউন্সিলগুলোকে “অপ্রত্যাশিত স্থানান্তর” বন্ধ করার জন্য সতর্ক করেছেন এবং তাদের আইনি দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
০১ জানুয়ারি ২০২৫

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যের নটিংহ্যাম কাউন্সিলের দেউলিয়া ঘোষণা

যুক্তরাজ্যের নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্রান্ট শ্যাপস

ব্রিটেনের গৃহহীনরা পাচ্ছেন ২০৩ মিলিয়ন পাউন্ডের সহায়তা