ইংল্যান্ডে কর্মরত প্রাইভেট ভাড়াটিয়াদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই ভাড়া পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে জানা যায়।
শেল্টারের জরিপে দেখা গেছে, হাউজিং সংকট চাকরিজীবীদের জন্যও দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে।
ইংল্যান্ডে প্রাইভেট ভাড়াটিয়াদের মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কর্মজীবী তাদের বাড়ি ভাড়ার অর্থ পরিশোধ করতে সমস্যায় পড়ছেন। ইউগভ দ্বারা পরিচালিত একটি জরিপে এই সকল তথ্য উঠে এসেছে। যা দেখিয়েছে কীভাবে হাউজিং সংকট চাকরিজীবীদের জন্য আর্থিক দুর্দশা সৃষ্টি করছে।
জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৩২% কর্মজীবী সহজেই তাদের ভাড়া পরিশোধ করতে সক্ষম। অন্যদিকে, ৪০% কখনো কখনো সমস্যায় পড়েন এবং ২৩% নিয়মিত সমস্যার সম্মুখীন হন।
৩% কর্মজীবী জানিয়েছেন যে তারা তাদের ভাড়ার অর্থ পরিশোধে পিছিয়ে পড়েছেন। এই তথ্য সাম্প্রতিক সরকারি পরিসংখ্যানের সঙ্গেও মিলে যায়, যেখানে দেখা গেছে ৫% ভাড়াটিয়া আর্থিক সমস্যায় আছেন বা অতীতে ছিলেন।
এ পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন ও দাতব্য সংস্থাগুলো একত্রে যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী র্যাচেল রিভসকে আগামী বছরের বাজেটে সামাজিক হাউজিং প্রকল্পের জন্য বিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তারা যুক্তি দিয়েছেন যে, কম খরচে ভাড়ার বাড়ি নির্মাণের মাধ্যমে প্রাইভেট সেক্টরে চাহিদার চাপ কমানো সম্ভব, যা বর্তমানে ভাড়া বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
আইকিয়া যুক্তরাজ্যের প্রধান নির্বাহী পিটার জেল্কেবি, শেল্টারের প্রধান নির্বাহী পলি নাইট, এবং ইউনাইট ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শ্যারন গ্রাহামের মতো ২৩ জন পরিচালক, প্রধান নির্বাহী এবং সাধারণ নির্বাহী একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে:
“ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ট্রেড ইউনিয়ন এবং তৃতীয় খাতের সংস্থা হিসেবে আমরা একত্রে উদ্বেগ প্রকাশ করছি যে সামাজিক হাউজিংয়ের ঘাটতি আমাদের সমাজ, ব্যবসা এবং কর্মশক্তি ও উৎপাদনশীলতায় ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলছে।”
এতে আরও বলা হয়েছে:
“ ইউগভের জরিপে উদ্বেগজনকভাবে দেখা গেছে, কর্মরত প্রাইভেট ভাড়াটিয়াদের দুই-তৃতীয়াংশ, যা প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ তারা ভাড়ার টাকা পরিশোধে সমস্যায় পড়ছেন বা পিছিয়ে রয়েছেন।
২০২৫ সালে আমাদের অবশ্যই এই হাউজিং সংকট সমাধানে গুরুত্ব দিতে হবে, যা আমাদের দেশ এবং অর্থনীতিকে পেছনে টেনে ধরছে। আমরা একত্রে আপনার কাছে আহ্বান জানাচ্ছি যে, আসন্ন বাজেটে প্রতি বছর ৯০,০০০টি সামাজিক ভাড়ার ঘর নির্মাণের জন্য বিনিয়োগ করুন, যা ১০ বছরের জন্য চালু থাকবে।
সামাজিক ভাড়ার হাউজিং হলো একমাত্র প্রকৃতভাবে সাশ্রয়ী হাউজিং, কারণ এর ভাড়া স্থানীয় আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইতিহাস এবং গবেষণা উভয়ই প্রমাণ করে যে, বড় মাত্রায় সামাজিক হাউজিং বিনিয়োগ এবং কাউন্সিল হাউস নির্মাণ ছাড়া সরকার ১৫ লক্ষ বাড়ি নির্মাণের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারবে না।”
লেবার দল দেশের হাউজিং সংকট মোকাবেলায় সংসদীয় মেয়াদের মধ্যে ১৫ লক্ষ বাড়ি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তারা পরিকল্পনা সহজতর করতে এবং জমি কেনার প্রক্রিয়া সহজ করার উদ্যোগ নেবে।
তবে র্যাচেল রিভসের উপর সামাজিক হাউজিংয়ে অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধির চাপ রয়েছে। প্রচারকরা সতর্ক করেছেন যে, কাউন্সিল এবং হাউজিং অ্যাসোসিয়েশনগুলো প্রতিবছর অতিরিক্ত বিলিয়ন পাউন্ড বাজেট না পেলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না।
শেল্টার এবং ন্যাশনাল হাউজিং ফেডারেশনের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে প্রতি বছর ৯০,০০০ নতুন সামাজিক ভাড়ার ঘর নির্মাণ করতে হবে। এর খরচ হবে ১১.৫ বিলিয়ন পাউন্ড। তবে প্রতিবেদনের লেখকরা দাবি করেছেন যে এই ব্যয় তিন বছরের মধ্যে পুষিয়ে নেওয়া যাবে।
রিভস জুন মাসে বাজেট পর্যালোচনায় জানান দেবেন, সাশ্রয়ী বাড়ি প্রকল্পে তিনি আগামী কয়েক বছরে কত টাকা বরাদ্দ দেবেন। পূর্ববর্তী সরকার ২০২৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ১১.৫ বিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ করেছিল। কিন্তু সেই অর্থ ইতোমধ্যেই ফুরিয়ে গেছে। ফলে অর্থমন্ত্রী অক্টোবরে বাজেটে অতিরিক্ত ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ দিয়েছেন।
রিভস আরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, আগামী পাঁচ বছরে প্রতিবছর সামাজিক হাউজিংয়ের ভাড়া মুদ্রাস্ফীতির চেয়ে এক শতাংশ বেশি বৃদ্ধি করবেন। যাতে হাউজিং অ্যাসোসিয়েশনগুলোর আর্থিক অবস্থা উন্নত করা যায়।
তবে হাউজিং সেক্রেটারি অ্যাঞ্জেলা রেনার জুন মাসে নতুন অর্থ বরাদ্দ ঘোষণার সময় সাশ্রয়ী বাড়ি প্রকল্পের আকার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন।
রেনা লেবার পার্টির সম্মেলনে বলেছেন, সরকার যথেষ্ট সামাজিক হাউজিং নির্মাণে একটি “নৈতিক দায়িত্ব” পালন করছে। তিনি ইতোমধ্যেই এমন নীতি ঘোষণা করেছেন, যা ভাড়াটিয়াদের নিজেদের কাউন্সিলের ঘর কেনা আরও কঠিন করবে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪