ইয়েমেনে অপহৃত জাতিসংঘের কর্মকর্তা বাংলাদেশের নাগরিক এ কে এম সুফিউল আনামকে তিন সপ্তাহেও উদ্ধার করা যায়নি, বরং তার জন্য মুক্তিপণ দাবি করেছে অপহরণকারীরা। তার সঙ্গে জাতিসংঘের আরও চারজন কর্মী অপহৃত হয়েছিলেন। একটি জঙ্গিগোষ্ঠী তাদের মুক্তিপণ হিসেবে অর্থ দাবি করেছে বলে জানিয়েছেন সুফিউলের দুই সহকর্মী।
সুফিউলের ঘনিষ্ঠ জাতিসংঘের ওই দুই কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রথম আলো জানায়, আল-কায়েদা আরব পেনিনসুলা (একিউএপি) নামে একটি জঙ্গিগোষ্ঠী এ অপহরণের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারা মুক্তিপণ হিসেবে কয়েক মিলিয়ন মার্কিন ডলার দাবি করেছে। পাশাপাশি ইয়েমেনে জেলে আটক তাদের কিছু সদস্যকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
আরও জানা যায়, জাতিসংঘের হয়ে ইয়েমেন সরকার অপহরণকারীদের সঙ্গে মুক্তিপণের বিষয়ে আলোচনা চালছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সুফিউলের পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা সুফিউলের বিষয়টি জাতিসংঘ সদর দপ্তরের গোচরে এনে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
ওই কর্মকর্তারা বলেন, এরই মধ্যে ২১ দিন হয়ে গেল সুফিউল অপহৃত হয়েছেন। এখন যদি বাংলাদেশ জোরালো উদ্যোগ না নেয়, তাহলে কত দিন সুফিউলকে আটকে থাকতে হবে, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি ইয়েমেনের আবিয়ান প্রদেশ থেকে অপহরণের শিকার হয়েছিলেন বাংলাদেশের নাগরিক। ইয়ামেনে নিয়োজিত জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তার মুখপাত্র রাসেল গিকির বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, আবিয়ান প্রদেশে ৫ কর্মীকে অপহরণ করা হয়েছে। সেই জাতিসংঘ কর্মীদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নাগরিক একেএম সুফিউল আনাম।
সুফিউল আনাম ইয়েমেনের অ্যাডেনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিভাগের ফিল্ড সিকিউরিটি কোঅর্ডিনেশন অফিসার (হেড) হিসেবে কর্মরত।
সুফিউল আনামের অপহরণের বিষয়টি তার পরিবারের সদস্যরা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন নিশ্চিত করেন। অপহৃত ব্যক্তি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল।
তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ১৯৭৭ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। অবসর নেওয়ার পর থেকে তিনি জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করছেন।
‘তাদের মুক্তি নিশ্চিত করতে ইয়েমেন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখেছে জাতিসংঘ,’ বলেন জাতিসংঘ মুখপাত্র গিকি। অ্যাডেনে অবস্থিত জাতিসংঘ কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, অপহৃতদের মধ্যে বাকী ৪ জনই ইয়েমেনের নাগরিক।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের শেষে রাজধানী সানা থেকে হুতি বিদ্রোহীরা ক্ষমতাসীন সরকারকে উৎখাত করার পর থেকেই ইয়েমেনে সহিংসতা বিরাজ করছে। পরবর্তী সময়ে সৌদি আরবের নেতৃত্বে আরব সামরিক জোট ক্ষমতাচ্যুত সরকারকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য হুতিদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র হামলা শুরু করে।
এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে হাজারো মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবতা সংকট। দেশটির জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই বর্তমানে বিদেশি ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল।
৯ মার্চ ২০২২
এনএইচ