যুক্তরাজ্যের হোম সেক্রেটারি শাবানা মাহমুদ ঘোষণা করেছেন, দেশের আশ্রয় ব্যবস্থা “নিয়ন্ত্রণের বাইরে” চলে গেছে এবং এটি দেশকে বিভাজিত করছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি আশ্রয় ব্যবস্থার সর্বাত্মক সংস্কারের একটি বিস্তৃত নীতি–প্যাকেজ উন্মোচন করেছেন, যা ডেনমার্কের বিতর্কিত মডেলের অনুসরণে তৈরি।
সরকারের নতুন নীতিতে শরণার্থীদের স্থায়ী বসবাসের স্বয়ংক্রিয় অধিকার তুলে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে পাঁচ বছর পর যেসব শরণার্থী অনির্দিষ্ট মেয়াদি বসবাসের অনুমতি (ILR) পেতে পারেন, সেই সুযোগ আর থাকবে না। আগামি সময়ে তাদের প্রতি আড়াই বছর অন্তর যুক্তরাজ্যে থাকার আবেদন নবায়ন করতে হবে। পরিস্থিতি নিরাপদ হলে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থাও থাকবে—এটি ইউক্রেনীয় নাগরিকসহ সব গোষ্ঠীর জন্য প্রযোজ্য হবে।
মাহমুদ জানিয়েছেন, অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশকারীদের জন্য স্থায়ী বসবাস পেতে অপেক্ষার সময় বাড়িয়ে ২০ বছর করা হবে। যদিও এটি শুধু নতুন আগতদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। তার দাবি, অবৈধ অভিবাসন দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে এবং বৈধ অভিবাসীদের প্রতি মানুষের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে।
তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে আশ্রয় নেওয়া অনেকেই আইনের তোয়াক্কা না করেও বিভিন্ন রকম সুবিধা পাচ্ছেন, যা ব্রিটিশ নাগরিকদের তুলনায় বেশি। আইন ভঙ্গ করলেও বা নিয়ম না মানলেও তাদের আবাসন হারানোর ঝুঁকি নেই—এটিকে তিনি “অন্যায় এবং অসঙ্গত” বলে আখ্যা দেন। কাজ করার অধিকার থাকা সত্ত্বেও কাজ না করে রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও নতুন নীতিতে কড়াকড়ি আসছে।
তিনি ঘোষণা করেন, আশ্রয়প্রার্থীদের আবাসন ও আর্থিক সহায়তার বিষয়টি এখন থেকে বাধ্যতামূলক না হয়ে “discretionary”, অর্থাৎ ঐচ্ছিক হবে। যারা কাজ করতে সক্ষম অথবা যাদের নিজেদের সম্পদ আছে, তাদের রাষ্ট্রীয় সহায়তা থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে।
এদিকে, সমালোচনা করে শ্যাডো হোম সেক্রেটারি ক্রিস ফিলপ বলেন, এগুলো “সঠিক দিকের ছোট পদক্ষেপ”, কিন্তু সরকারের আরও কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োজন। তিনি অবৈধ অভিবাসনের ক্ষেত্রে “শূন্য সহনশীলতা” এবং বৈধ অভিবাসনেও কোটার দাবী জানান।
লিবারেল ডেমোক্র্যাট নেতা এড ডেভি সতর্ক করে বলেন, সরকার যদি ভুল সিদ্ধান্ত নেয়, তবে প্রকৃত শরণার্থীরা কাজ, ব্যবসা ও ট্যাক্সের মাধ্যমে ব্রিটিশ অর্থনীতিতে যে অবদান রাখে, তা বাধাগ্রস্ত হবে। এটি দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে।
রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী এনভার সলোমন বলেন, এই নীতি শিশু ও তরুণদের জন্য “বিধ্বংসী” হতে পারে। তার মতে, স্কুলে পড়ুয়া, সমাজে মানিয়ে নেওয়া বাচ্চাদের হঠাৎ উপড়ে ফেলা মানসিকভাবে মারাত্মক আঘাত সৃষ্টি করবে এবং তাদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা ও ক্যারিয়ার ঝুঁকিতে ফেলবে।
ফ্রিডম ফ্রম টর্চারের সাইল রেনল্ডস পরিবার পুনর্মিলন নীতিতে কঠোরতার সমালোচনা করে বলেন, এটি শরণার্থীদের ওপর অমানবিক চাপ সৃষ্টি করবে। যুদ্ধ ও নির্যাতন থেকে পালানো মানুষদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা মানবিক নীতির পরিপন্থী।
এদিকে হোম অফিস জানিয়েছে, অবৈধভাবে আগতদের বয়স নির্ধারণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করা হবে। মুখের ছবি বিশ্লেষণে বয়স অনুমান করার এই প্রযুক্তি “কম খরচে বেশি নির্ভুল”—যদিও মানবাধিকার সংস্থাগুলো আশঙ্কা করছে, ভুল মূল্যায়নে শিশুদের প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে ধরে নেওয়া হলে তারা গুরুতর ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় সহায়তা পাচ্ছেন প্রায় ১ লাখ মানুষ, যার মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এখনো হোটেলে থাকছেন। লেবার সরকার ২০২৯ সালের মধ্যে হোটেল ব্যবস্থার অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে

