বিজ্ঞানীরা এমন একটি ডিএনএ- চিহ্নিত করেছেন যারা, বন্ড ভিলেনের মতো কাজ করে। তারা ক্যান্সার ছড়াতে সাহায্য করে। এই মাইক্রোস্কোপিক এজেন্টগুলি ক্যান্সার বিরোধী ঔষধের কার্যকারিতা নষ্টেও কাজ করে বলে বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন।
জেনেটিক উপাদানের এই বিটগুলি এক্সট্রা ক্রোমোসোমাল ডিএনএ বা ecDNA নামে পরিচিত। এক্সট্রাক্রোমোসোমাল ডিএনএ(ecDNA) ক্যান্সার সৃষ্টিকারী জিন হিসাবে কাজ করে।
ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক পল মিশেল বলেছেন, “ডিএনএ’র এই বিটগুলি আমাদের দেহের ভিতরে কিভাবে আচরণ করে তার আবিষ্কার একটি গেম চেঞ্জার। আমরা বিশ্বাস করি যদি ecDNA এর কার্যক্রম বন্ধ করতে পারি, তাহলে আমরা ক্যান্সারের বিস্তারকে আটকাতে পারব।”
ডিএনএ- ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লুপ দিয়ে তৈরি, এই জেনেটিক ভিলেনরা ক্রোমোজোমের বাইরে বেঁচে থাকে যা আমাদের কোষের জেনেটিক উপাদানের প্রধান ভাণ্ডার। এই ছোট ইউনিটগুলির অস্তিত্ব ১৯৬০-এর দশকে আবিষ্কৃত ও প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু ক্যান্সার বৃদ্ধিতে তাদের প্রভাব এখন উন্মোচিত হয়েছে।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির জিনতত্ত্ববিদ হাওয়ার্ড চ্যাং বলেন, “আমরা দেখেছি যে ecDNA ক্যান্সার সৃষ্টিকারী জিন হিসেবে কাজ করে, যেগুলো কোনোভাবে একজন ব্যক্তির ক্রোমোজোম থেকে নিজেদেরকে আলাদা করে ফেলে এবং এমনভাবে আচরণ করতে শুরু করেছে যা জেনেটিক্সের স্বাভাবিক নিয়মকে এড়িয়ে যায়। তারা বন্ড ছবিতে ভিলেনের মতো আচরণ করে। প্রথম দিকে, একটি ছবিতে, আপনি বিভিন্ন বিস্ফোরণ, হত্যা এবং বিপর্যয় ঘটতে দেখেন এবং আপনি জানেন না যে সেগুলি কেন ঘটছে বা কারা দায়ী। তারপরে এক পর্যায়ে আপনি সেই ভিলেনের দেখা পাবেন যে সমস্ত খারাপ কাজের মূল হোতা বলে চিহ্নিত হয়।”
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে টিউমার কেন সৃষ্টি হয়? কিভাবে তারা একটি কোষের স্বাভাবিক জিনগুলিকে ভুলে যায়? অবশেষে সেই কোষটিকে তারা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভক্ত করে। এভাবেই সৃষ্টি হয় একটি টিউমার। এই জিনগুলি অনকোজিন হিসাবে পরিচিত।যখন মানবদেহে ক্যান্সারের চিকিৎসা শুরু হয় তখন ক্যান্সারের ওষুধের হুমকির মুখে দুর্বল জিনটি দ্রুত অদৃশ্য হয়ে পড়ে এবং ইসিডিএনএ-তে লুকিয়ে থাকে। তারপরে এটি ধীরে ধীরে পূর্ণ শক্তি নিয়ে আবার আবির্ভূত হয় এবং ক্ষতি করা শুরু করে।
এই দৃষ্টিকোণ থেকে, ecDNA শুধুমাত্র একটি ভিলেন নয়। এটি একটি অপরাধী মাস্টারমাইন্ড। লন্ডনের ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক চার্লি সোয়ান্টন বলেন, “এটি টিউমার থেকে প্রায় সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে এবং আপনি ঔষধের চিকিৎসা বন্ধ করার পরে ফিরে আসতে পারে।”
তবুও বিজ্ঞানীরা আত্মবিশ্বাসী যে তারা রোগীদের থেকে ecDNA অপসারণের উপায় খুঁজে বের করতে সক্ষম হবেন।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের ডাঃ মরিয়ম জামাল-হানজানি বলেন,
“এটি লক্ষ্য করা উচিত যে, ecDNA ক্যান্সারের জন্য দায়ী দুষ্ট জিন, তা কোনো স্বাস্থ্যকর টিস্যু নয়। তাই এটি আশা জাগায় যে যখন আমরা ecDNA-কে অপসারণের উপায় খুঁজে পাবো – ঔষধ বা কোনো ধরণের থেরাপির মাধ্যমে – তখন এটির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে না”।
জিনতত্ত্ববিদ হাওয়ার্ড চ্যাং বলেন, “আমরা এখন ecDNA এর অ্যাকিলিস হিলকে চিহ্নিত করতে চাইছি এবং একটি প্রোটিন সনাক্ত করেছি যা এটিকে একসাথে ধরে রাখতে সাহায্য করে। আমরা এমন একটি ঔষধও আবিষ্কার করেছি যা এই প্রোটিনের উপর আশাব্যঞ্জক প্রভাব ফেলে। আগামী বছরগুলিতে, আমরা আরও অনেক কিছু পরীক্ষা করব যতক্ষণ না আমরা ecDNA মোকাবেলা করার জন্য এবং এর প্রো-ক্যান্সার ক্রিয়াকলাপ বন্ধ করার জন্য সেরাটি খুঁজে পাচ্ছি। এটা সময় লাগবে কিন্তু আমি নিশ্চিত আমরা সেখানে পৌঁছতে পারব।”
এম.কে
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান