যুক্তরাজ্যের অ্যান্ড্রু শেরিডানসহ বেশ কয়েকজন শেফের দাবি, অভিযোগ ও হুমকির কারণে রেস্তোরাঁ ও গ্রাহকদের মধ্যে বিশ্বাসের বন্ধন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।
রেস্তোরাঁ মালিকরা এখন আর “গ্রাহক সবসময় ঠিক”—এই প্রচলিত কথায় বিশ্বাস রাখছেন না। কারণ অনেকেই হুমকি দিয়ে বিনামূল্যে খাবার পাওয়ার চেষ্টা করেন, মিথ্যা অভিযোগ করেন এবং নানা কৌশল খাটান।
উত্তর ওয়েলসের অন্যতম সেরা শেফ হিসেবে বিবেচিত অ্যান্ড্রু শেরিডান জানান, তিনি এই ধরনের গ্রাহকদের নিয়ে ক্লান্ত।
তিনি বলেন, “এটা সবসময়ই ঘটে। গত সপ্তাহে, এক নারী অভিযোগ করলেন, রেস্তোরাঁর একটি পিলার বা স্বর্ণালী স্তম্ভ তার দৃষ্টিতে বাধা সৃষ্টি করেছিল।”
তিনি বলেন, “ওই নারী বললেন, খাবার, ওয়াইন ও সার্ভিস দারুণ ছিল, কিন্তু সেই স্তম্ভ তার সন্ধ্যাটি নষ্ট করেছে, তাই তিনি বিনামূল্যে খাবার ও ভাউচার দাবি করেন। অথচ এটি একটি স্টিলের কাঠামো, যা একটি ঐতিহ্যবাহী ভবনকে ধসে পড়া থেকে রক্ষা করে এবং আগে কখনো কেউ এ নিয়ে অভিযোগ করেননি।”
শেরিডানের মতে, এটি ঠিক ততটাই অযৌক্তিক, যতটা ছিল সেই গ্রাহকদের দাবি যে রেস্তোরাঁর ওয়েবসাইটে বাস লেনে গাড়ি চালানোর নিষেধাজ্ঞা উল্লেখ না থাকায়, তাদের জরিমানার টাকা রেস্তোরাঁরই পরিশোধ করা উচিত! এমনকি কেউ কেউ রাস্তাঘাটের অবস্থা ভালো নয় বলে খাবার বিনামূল্যে চেয়েছেন।
শেরিডান বলেন, “প্রত্যেকেই এখন রেস্তোরাঁ সমালোচক হয়ে উঠেছে। অনলাইনে তাদের পছন্দ না হলে সেটি জনসমক্ষে প্রকাশ করতে দ্বিধাবোধ করেন না, তা যতই অযৌক্তিক হোক না কেন।”
একবার তিনি একদল অতিথিকে মাঝপথেই চলে যেতে বলেন। তিনি ঘটনা বলতে গিয়ে জানান, “গত বছর আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায়, যখন কিছু অপরাধী আমাকে ব্ল্যাকমেইল করেছিল। তারা হুমকি দিয়েছিল, যদি আমি হাজার পাউন্ড না দিই, তবে আমার রেস্তোরাঁর অনলাইন রেটিংয়ে একতারকা পর্যালোচনা দিয়ে ভরে দেবে তারা।
তারা প্রথমে অভিযোগ করল যে, রেস্তোরাঁর অবস্থান গুগল ম্যাপে ভুল দেখাচ্ছে, অথচ তা ঠিকই ছিল। এরপর তারা আলোর ব্যবস্থা, প্লেটের ডিজাইন, এমনকি খাবার নিয়েও অভিযোগ করল।”
এখন আর শেরিডান এই ধরনের হুমকিতে বিচলিত হন না বলে জানান, “পাঁচ বছর আগে খারাপ রিভিউ নিয়ে শেফরা চিন্তিত থাকত, কিন্তু এখন শেফরা স্পষ্ট বলছেন—গ্রাহক সবসময় ঠিক নন।”
তিনি বলেন, “আমি প্রতিটি অন্যায্য, নেতিবাচক রিভিউর উত্তর দিই এবং ব্যাখ্যা করি কেন তা অযৌক্তিক।”
নটিং হিলের বিখ্যাত রেস্তোরাঁ “ডোরিয়ান”-এর মালিক ক্রিস ডি’সিলভাকে বলেন, ” আমরা ভালো ও খারাপ আচরণ চিহ্নিত করি এবং সেই অনুযায়ী গ্রাহকদের মূল্যায়ন করি। আমাদের কাছে একটি স্তরভিত্তিক ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে গ্রাহকদের পছন্দনীয়তা ও তাদের আচরণ অনুযায়ী মূল্যায়ন করা হয়।”
মিশেলিন তারকা শেফ বেন মারফি বলেন, “রেস্তোরাঁ ও গ্রাহকদের মধ্যে আস্থার বন্ধন নষ্ট হয়ে গেছে। আগে বলা হতো, ‘গ্রাহক সবসময় ঠিক’, কিন্তু এখন আর কেউ তা বলছে না।”
তিনি একবার এমন এক গ্রাহকের মুখোমুখি হন, যিনি তার খাবারের প্লেটে নিজেই প্লাস্টিকের মোড়ক রেখে সেটি বিনামূল্যে পাওয়ার দাবি করেন।
“আমরা ক্ষমা চেয়ে তার পুরো খাবার বিনামূল্যে দিই, কিন্তু বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হচ্ছিল। পরে আমি সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বুঝতে পারি, তিনি ব্যাগ থেকে প্লাস্টিক বের করে প্লেটে রেখেছিলেন!”
তাছাড়া এক গ্রাহক তার রেস্তোরাঁকে খাবারের বিষক্রিয়ার জন্য দোষারোপ করেন, যা পরে প্রমাণিত হয় সম্পূর্ণ মিথ্যা।
মারফি বলেন, “বর্ধিত খাবারের দামও বিনামূল্যে খাবার পাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে গ্রাহকদের মধ্যে।”
“রেস্তোরাঁ” ম্যাগাজিনের সম্পাদক স্টেফান চমকা বলেন, “সামাজিক মাধ্যমের কারণে গ্রাহকদের ক্ষমতা অনেক বেড়ে গেছে। এখন তারা অনলাইনে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারেন, যা ব্যবসার জন্য ভালোও হতে পারে, আবার ক্ষতিকরও হতে পারে।”
কিন্তু কিছু শেফ মিথ্যা নেতিবাচক রিভিউয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন, বিশেষ করে এই কঠিন অর্থনৈতিক সময়ে।
তবে লন্ডনের সোহার “দ্য ডেভনশায়ার” রেস্তোরাঁর মালিক ওসিন রজার্স এখনও ‘গ্রাহক সবসময় ঠিক’ এই নীতিতে বিশ্বাসী।
তিনি বলেন, “যদি আমরা শুরুতেই বলি, ‘আপনাকে আমাদের নিয়ম মেনে চলতে হবে’, তাহলে কীভাবে আমরা গ্রাহকদের স্বাচ্ছন্দ্য দেব?”
“গ্রাহকরা অভিযোগ করতেই পারেন। কখনো কখনো মানুষ খারাপ দিন কাটায়, কখনো তারা আমাদের বুঝতে পারে না—এটা তাদের অধিকার। কারণ তারা সময় ও অর্থ ব্যয় করে আমাদের রেস্তোরাঁয় আসেন।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৫ মার্চ ২০২৫