যুক্তরাজ্যে ইসলামবিদ্বেষের ঘটনা ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সরকার একটি নতুন সংস্থাকে তহবিল দিয়েছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক আচরণ মনিটর করার জন্য। ব্রিটিশ মুসলিম ট্রাস্ট (BMT) নামের এই নতুন সংস্থাটি ২০২৫ সালের মাঝামাঝি হতে কার্যক্রম শুরু করবে বলে জানিয়েছে হাউজিং, কমিউনিটিস অ্যান্ড লোকাল গভর্নমেন্ট মন্ত্রণালয়।
এই ঘোষণা এসেছে এমন এক সময়ে, যখন সরকারের সঙ্গে পূর্ববর্তী ইসলামফোবিয়া মনিটরিং সংস্থা ‘টেল মামা’-র সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। প্রায় ১৩ বছর ধরে £৬ মিলিয়ন অনুদানপ্রাপ্ত টেল মামা’র বিরুদ্ধে গত মার্চে সরকারি অর্থ ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও পূর্ববর্তী কনজারভেটিভ সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সরকারের অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে মুসলিম পার্লামেন্ট সদস্য শাইস্তা গহির সংস্থাটির বিরুদ্ধে তদন্ত দাবি করেন, যদিও কোনো আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হয়নি। সংস্থাটি সব অভিযোগ অস্বীকার করে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এপ্রিল থেকে মে মাসে এই বিতর্ক তীব্র আকার ধারণ করে, যখন টেল মামা ছয় মাসের জন্য সরকারের প্রস্তাবিত আর্থিক সহায়তা প্রত্যাখ্যান করে এবং লেবার সরকারের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী ওয়াজিদ খানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতিসহ প্রতিদ্বন্দ্বীদের ‘ষড়যন্ত্রমূলক প্রচারণা’র অভিযোগ আনে।
নতুন মনোনীত সংস্থা ব্রিটিশ মুসলিম ট্রাস্ট গঠিত হয়েছে আজিজ ফাউন্ডেশন এবং রানদিরি চ্যারিটেবল ট্রাস্ট-এর যৌথ উদ্যোগে। সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সমাজকর্মী আকিলা আহমেদ, যিনি ব্রিটিশ মুসলিম নেটওয়ার্কের (BMN) সহ-প্রতিষ্ঠাতাও।
সরকারি তহবিলের আওতায় BMT একটি শক্তিশালী রিপোর্টিং ব্যবস্থা গড়ে তুলবে, যা অনলাইন ও অফলাইনে সংঘটিত ইসলামবিদ্বেষী ঘটনা নথিভুক্ত করবে। পুলিশের কাছে রিপোর্ট না হওয়া ঘটনাগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে এই ব্যবস্থায়। এছাড়া, সংস্থাটি ভুক্তভোগীদের সরাসরি সহায়তা, ঘৃণামূলক অপরাধ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কমিউনিটির ভেতরে রিপোর্টিংয়ের প্রবণতা বাড়াতে কাজ করবে।
BMT জানিয়েছে, তাদের কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ দায়িত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে এবং এটি ব্রিটিশ মুসলিম নেটওয়ার্ক থেকে পৃথক একটি উদ্যোগ।
আকিলা আহমেদ এক বিবৃতিতে বলেন, “অনেকদিন ধরে ইসলামবিদ্বেষকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। আমরা এই পরিস্থিতি বদলাতে এসেছি—মুসলিম সম্প্রদায়ের কণ্ঠস্বর তুলে ধরতে এবং ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়াতে।”
লর্ড খান বলেন, “বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ইসলামবিদ্বেষ অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সমাজে সহনশীলতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে BMT-এর সঙ্গে কাজ করতে আমরা প্রস্তুত।”
সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, এই নতুন তহবিলের লক্ষ্য হলো ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এবং ইসলামবিদ্বেষের পরিবর্তিত রূপের মোকাবিলা করা, যা বর্তমানে রেকর্ড সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২১ জুলাই ২০২৫