ইরান ইন্টারন্যাশনাল টিভি, যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইরানী টিভি চ্যানেল বলেছে যে তেহরানের হুমকি এবং নিজেদের সাংবাদিকদের নিরাপত্তাজনিত ভয়ের কারণে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কার্যক্রম সরিয়ে নিচ্ছে।
টিভি চ্যানেলটি জানায় নিরাপত্তার কারণে যুক্তরাজ্য পুলিশের পরামর্শে তাদের লন্ডন স্টুডিও বন্ধ করতে তারা বাধ্য হয়েছে।
ইরান ইন্টারন্যাশনাল টিভি ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি ভলেন্ট মিডিয়ার মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। চ্যানেলটি ইরানে অনার কিলিং এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা সহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রতিবেদন করে।
স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড বলেছে ইরান ইন্টারন্যাশনাল টিভি তাদের কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে ‘গুরুতর উদ্বেগে’ রয়েছে। তেহরানের হুমকি থেকে নিজেদের কর্মীদের রক্ষা করতে পারবে না বলে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইরানী টেলিভিশন চ্যানেল তার লন্ডন সদর দফতর থেকে সম্প্রচার বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।
ইরান ইন্টারন্যাশনাল টিভির জেনারেল ম্যানেজার মাহমুদ এনায়াত এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। একটি ভিনদেশী রাষ্ট্র বৃটিশ মাটিতে বৃটিশ জনগণের উপর হুমকি সৃষ্টি করেছে। যার কারণে আমাদের সরে যেতে হচ্ছে। ভিনদেশী স্বৈরশাসক কেবল আমাদের টিভি স্টেশন নয় বরং বৃটিশ জনসাধারণের জন্য হুমকিস্বরুপ। আমি মনে করি এটি নিরাপত্তা এবং বাকস্বাধীনতার মূল্যবোধের উপর হামলা। আমাদের সাংবাদিকরা দিনরাত চেষ্টা করে ইরানের জনগণকে স্বাধীন ও সেন্সর বিহীন সংবাদ প্রচার করতে। আমরা এইসব কাপুরুষোচিত হুমকি নিয়ে চুপ থাকতে রাজি নই। আমরা সম্প্রচার চালিয়ে যাব।”
ইংল্যান্ড পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থা এম,আই,ফাইভ ২০২২ সালের শুরু থেকে ইরানী শাসনের শত্রু হিসাবে বিবেচিত যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ব্যক্তিদের অপহরণ বা হত্যা করার ১৫ টি চক্রান্ত ব্যর্থ করেছে। যুক্তরাজ্য পুলিশ বাহিনী ইরানের টিভি চ্যানেলের স্টুডিওর আশেপাশের অঞ্চলের উপর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছিল।
কাউন্টার টেরোরিজম পুলিশিং-এর প্রধান (সিটিপি) সহকারী কমিশনার ম্যাট জুকস এক বিবৃতিতে বলেছেন,
“গত সপ্তাহে ওই এলাকায় একজনকে গ্রেপ্তারের পর চলমান তদন্তের আলোকে বলতে চাই যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও আমরা এখন ইরান ইন্টারন্যাশনাল টিভি চ্যানেলের কোম্পানিতে কর্মরত ব্যক্তিদের নিরাপত্তার জন্য গুরুতর উদ্বিগ্ন। সাংবাদিকরা বিশ্বজুড়ে যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় এবং কিছু সাংবাদিক যুক্তরাজ্যে থাকাকালীন বিদেশী রাষ্ট্রগুলি দ্বারা যেভাবে হুমকির শিকার হয় সেইসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”
ইরানে সাম্প্রতিক সরকার বিরোধী বিক্ষোভের খবর প্রচারে ইরান ইন্টারন্যাশনাল টিভি অগ্রণী ভুমিকা পালন করে।
গত সেপ্টেম্বরে ইরানে ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনির মৃত্যুতে বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। মাহসা আমিনিকে ইরানের ইসলামিক ড্রেস কোড না মেনে চলার অভিযোগে ইরান পুলিশ আটক করে।
যুক্তরাজ্য সরকার ইরানি শাসকদের দ্বারা প্রদর্শিত “মৌলিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধার অভাব”-কে নিন্দা জানায়।এরপর থেকেই ইরান যুক্তরাজ্য শীতল সম্পর্ক অব্যাহত রয়েছে।
এম.কে
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩