খোকন নন্দীর দুই স্ত্রী। সনাতন ধর্মাবলম্বী খোকনের প্রথম স্ত্রীও একই ধর্মের। তবে প্রথম স্ত্রী মীরা নন্দী দেবরের সঙ্গে সম্পর্ক জড়ানোর জেরে খোকনও সম্পর্কে জড়ান অন্য এক নারীর সঙ্গে। পরে ধর্ম পরিবর্তন করে মুসলিম হয়ে হাবিবা আকতার খানম নামে সেই নারীকে বিয়ে করেন খোকন।
তবে বিপত্তি ঘটে যখন হার্ট অ্যাটাক করে খোকনের মৃত্যু হয়। ২০১৪ সালের জুন মাসে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান খোকন। এরপরই তার লাশ নিয়ে শুরু হয় দুই ধর্মের দুই স্ত্রীর টানাটানি। দুই স্ত্রীই খোকনের লাশের দাবিদার হলে মামলা গড়ায় আদালতে। তবে মীমাংসা না হওয়ায় প্রায় আট বছর ধরে খোকনের লাশ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে পড়ে রয়েছে।
প্রায় ৭০ বছর বয়সী খোকনকে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ২০১৪ সালের ১৫ জুন। তিনি মারা যান ওই বছরের ২৬ জুন। প্রথমে তাঁর লাশ রাখা হয় বারডেমের হিমঘরে। সেখানে দীর্ঘ মেয়াদে লাশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় বারডেম কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানিয়ে আদালতের কাছে আবেদন করে। একই বছরের ২৩ অক্টোবর সহকারী জজ আদালত (দেওয়ানি ২৫২/১৪ ঢাকা) এক আদেশে বারডেম জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা ও তদারকিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে লাশটি সংরক্ষণের আদেশ দেন।
এরপর ১৫ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ খোকনের লাশ গ্রহণ করে। আদালত এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত দেননি, খোকন কোন ধর্মের অনুসারী ছিলেন। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেকোনো এক স্ত্রীর কাছে লাশটি হস্তান্তর করা হবে। বারডেম হাসপাতালে লাশ হিমঘরে রাখা বাবদ বিল হয়েছিল ২ লাখ ২৬ হাজার টাকা। আদালতের আদেশে যে স্ত্রী স্বামীর লাশ পাবেন, তাঁকেই এ বিল পরিশোধ করতে হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের সহকারী সেকান্দার বললেন, দীর্ঘদিন ডিপ ফ্রিজে থেকে খোকন নন্দীর লাশ শুকিয়ে যাচ্ছে। এর আগে বিভিন্ন সময় ফ্রিজ নষ্ট হয়েছে। তখন লাশ সংরক্ষণে জটিলতা তৈরি হয়েছে। তাঁরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন লাশটি সংরক্ষণের।
বারডেম জেনারেল হাসপাতালে খোকন নন্দী মারা যাওয়ার পর থেকেই জটিলতার শুরু। তাঁর দুই স্ত্রী লাশ নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী সৎকার কিংবা দাফন করতে চান। লাশ নিয়ে টানাটানি শুরু হলে তা রমনা থানা-পুলিশ ও আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
হাবিবা আকতার (৬৫) অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক। জানালেন, খোকন ১৯৮০ সালের ২ এপ্রিল প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হলফনামার মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁকে বিয়ে করেন ১৯৮৪ সালের ১৫ জুলাই। মৃত্যুর আগে খোকন হাবিবার সঙ্গেই থাকতেন বলে দাবি করেন তিনি।
খোকন নন্দীর ভাই বাবুল নন্দী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাইয়ের প্রথম স্ত্রী মিরা নন্দী। তাঁদের সঙ্গে মিরা ও তাঁর ছেলেমেয়েদের সব সময়ই যোগাযোগ আছে। খোকন তাঁর সম্পত্তি কাউকে লিখে দিয়ে যাননি। তাই সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে জটিলতা আছে। আপাতত সম্পত্তির হিসাব রাখছেন ভাইয়ের একমাত্র ছেলে। বাবুল দাবি করেন, ভাই মারা যাওয়ার পর হাসপাতালে বিল পরিশোধ করেন বউদি মিরা। তারপর দ্বিতীয় স্ত্রী লাশ নিতে চাইলে এ নিয়ে টানাটানি শুরু হয়।
মিরার আইনজীবী কিশোর রঞ্জন মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, সব নথিপত্রে খোকন নন্দী নামটিই রয়েছে। তবে খোকন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হলফনামার মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন, এ ধরনের একটি কাগজ আদালতে জমা দিয়েছেন তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী হাবিবা। কাগজটি জালও হতে পারে। হাইকোর্টে রিভিশন করা হয়েছে। রিভিশনের শুনানি হবে। তবে বলা যায়, খুব দ্রুত বিষয়টির নিষ্পত্তি হচ্ছে না।
৩ আগস্ট ২০২২
সূত্র: প্রথম আলো, ঢাকা টাইমস