যুক্তরাজ্যে ইমিগ্রেশন আইনের আসন্ন পরিবর্তন কার্যকর হতে যাচ্ছে মার্চ মাসের মাঝামাঝি হতে, তাছাড়া এপ্রিল মাসেও কিছু পরিবর্তন হবে বলে সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়। আসন্ন পরিবর্তন কার্যকর হবার আগেই অনেক নিয়োগকর্তারা স্কিলড ওয়ার্কার আবেদন সম্পন্ন করতে চান। বিধায় আবেদনের এক লম্বা সারি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। নতুন ইমিগ্রেশন আইনানুযায়ী প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলি বিদেশী কর্মীদের নিয়োগের সাথে সম্পর্কিত ব্যয়গুলি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে পারে।
যুক্তরাজ্যের নিয়োগকর্তারা ইতোমধ্যে বিদেশি শ্রমিকদের চাকুরির অফার প্রত্যাহার করতে শুরু করেছেন। ইমিগ্রেশন আইনজীবীরা বলেছেন এপ্রিল মাস থেকে দক্ষ শ্রমিক ভিসায় নিয়োগপ্রাপ্ত লোকদের অনেক বেশি বেতন দিতে হবে। যার হার অনেক বেশি, বিধায় এনএইচএসের মতো প্রতিষ্ঠানও বিপাকে পড়তে পারে। কারণ বর্তমান তথ্যমতে দেখা যায় এনএইচএস সম্পূর্ণ বিদেশি কর্মীদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
এই সকল বিষয় বিবেচনায় এনে অনেক নিয়োগকর্তা স্কিলড ওয়ার্কারদের নিয়োগের পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে এসেছেন। তাছাড়া যাদের ভিসা শেষ হবার পথে তাদের ভিসা রিনিউ আবেদনও এগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। যদিও হোম অফিস ভিসা জালিয়াতি এবং শ্রম অপব্যবহার রোধে নিয়োগকর্তাদের উপর নজরদারি বাড়িয়ে দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞ আইনজীবীদের মতে, নির্বাচনের আগে কনজারভেটিভ সরকার তাদের ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি পূরণে মাইগ্রেশনের উপর কঠোর হবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শেষ মূহুর্তে কঠিন নীতি বাস্তবায়নের পূর্বে তাই সকলে সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক।
ল’ ফার্ম কিংসলে নেপলির বিজনেস ইমিগ্রেশনের প্রধান নিকোলাস রোলসন জানান, ” নিরাপদ ব্যবস্থার নীচে আশ্রয় নিতে পাখির দলের মতো ঝাঁক বেঁধে আবেদনের স্তুপ জমা হচ্ছে। নিয়োগকর্তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বিধায় একটি হযবরল অবস্থার সম্মুখীন হতে যাচ্ছে পুরো ব্যবস্থা। নতুন নিয়মের বিশদ ব্যাখ্যা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা ব্যবসায়ের উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।”
গত ডিসেম্বরে, স্বরাষ্ট্রসচিব জেমস ক্লেভারলি জানিয়েছিলেন, স্কিলড ওয়ার্কার ভিসার জন্য বছরে মূল বেতন এপ্রিল থেকে ২৬,২০০ পাউন্ড থেকে ৩৮,৭০০ পাউন্ডে উন্নীত হবে। এই বৃদ্ধির ফলে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন খাতের মাইগ্রেশনের হার কমবে।
ম্যাগরাথ শেলড্রিকের ব্যবস্থাপনা অংশীদার বেন শেলড্রিক বলেন, আমরা একটি প্রভাব লক্ষ্য করছি সকল সেক্টর জোড়েই। বিদেশি স্কিলড ওয়ার্কাররা চাকুরি হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
তিনি তাদের প্রতিষ্ঠানের একজন ক্লায়েন্টকে উদ্ধৃত করে বলেন, আমাদের ক্লায়েন্ট তাদের জুয়েলারি ব্যবসায় ভারত থেকে বিশেষজ্ঞ জুয়েলার নিয়োগের পরিকল্পনা করেছিল যা নতুন আইনের কারণে বাদ দিতে বাধ্য হয়। তাছাড়া অন্যরা অনেকে যুক্তরাজ্যে স্নাতক সম্পন্ন করা ছাত্রদের নিয়োগের বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করছে।
উল্লেখ্য যে, হোম অফিস বিদেশি শ্রমিকদের উপর নির্ভরতা কমাতে নতুন আইন আনতে যাচ্ছে। তাদের নতুন আইন যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠানদের বিভিন্ন পরিস্থিতির মুখে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে। যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের কাজের প্রতি অনীহা এবং বিভিন্ন ধরনের চাকুরির প্রতি অনীহা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সেক্টরকে নিদারুণ সমস্যায় ফেলতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্রঃ দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস
এম.কে
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪