প্যালেস্টাইন অ্যাকশন–সংশ্লিষ্ট অনশনকারীদের শারীরিক অবস্থা মারাত্মকভাবে অবনতির দিকে যাওয়ায় তাদের পরিবার ও সমর্থকেরা যুক্তরাজ্যের বিচারমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে জরুরি বৈঠকের দাবি জানিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই অনশন ইতোমধ্যে কয়েকজন বন্দিকে গুরুতর অসুস্থ করে তুলেছে এবং পরিস্থিতিকে জীবন-মৃত্যুর সংকটে নিয়ে গেছে।
সোমবার অনশন বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছালে অনশনকারীদের পক্ষে আইনজীবীরা বিচার মন্ত্রণালয়ে একটি আইনি চিঠি পাঠান। চিঠিতে বলা হয়, বৈঠক আয়োজন না করে মন্ত্রণালয় নিজস্ব অনশন ব্যবস্থাপনা নীতিমালা লঙ্ঘন করছে। নীতিমালা অনুযায়ী, অনশন বন্ধে সহায়ক হতে পারে—এমন ব্যক্তিদের নিয়ে জরুরি পর্যালোচনা বৈঠক করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
রোববার একসঙ্গে তিনজন অনশনকারী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে কেসার জুহরা (২০) ও আমু গিব (৩০) টানা ৫১ দিন ধরে খাবার গ্রহণ করছেন না, আর কামরান আহমেদ (২৮) রয়েছেন অনশনের ৪৩তম দিনে। আহমেদের ক্ষেত্রে এটি তৃতীয়বারের মতো হাসপাতালে ভর্তি হওয়া, যা তার শারীরিক অবস্থার ভয়াবহতা স্পষ্ট করে।
কামরান আহমেদের বোন শাহমিনা আলম বলেন, তার ভাইয়ের অবস্থা এখন জরুরি পর্যায় ছাড়িয়ে গেছে। তিনি বিচারমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এখনো মানবিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আছে। অনশনকারীদের আইনজীবী বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসে তিনি চাইলে এই সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারেন।
১৯৮১ সালের আইরিশ রিপাবলিকান অনশন ধর্মঘটের প্রসঙ্গ টেনে আলম সতর্ক করে বলেন, ইতিহাস যেন আবার নিজেকে পুনরাবৃত্তি না করে। তখন ববি স্যান্ডসসহ ১০ জন অনশনকারীর মৃত্যু হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতেও এখনই পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে একই ধরনের অনুশোচনার মুখোমুখি হতে হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
অনশনকারীদের স্বজনদের অভিযোগ, বন্দিদের হাসপাতালে নেওয়া হলেও পরিবারকে নিয়মিত কোনো তথ্য জানানো হচ্ছে না। কেসার জুহরাকে সম্প্রতি এইচএমপি ব্রনজফিল্ড থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নেওয়া হলেও তিনি বর্তমানে কোথায় আছেন বা কী চিকিৎসা পাচ্ছেন—সে বিষয়ে তার নিকটাত্মীয়দের কাছে স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই।
প্রিজনার্স ফর প্যালেস্টাইনের প্রতিনিধি ফ্রান্সেস্কা নাডিন বলেন, অনশনকারীরা কারাগারের ভেতরে ভয়াবহ কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন এবং তাদের জীবন যে কোনো মুহূর্তে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। তিনি জানান, বন্দিদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকারকে আইনি পদক্ষেপের মুখোমুখি করতেও তারা পিছপা হবেন না।
সব অনশনকারীই বর্তমানে বিচার শুরুর অপেক্ষায় রিমান্ডে রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—প্রতিবাদ কর্মসূচির সময় অবৈধ প্রবেশ ও সম্পত্তি ক্ষতিসহ বিভিন্ন অপরাধ। বিচার শুরুর আগেই তাদের অনেককে এক বছরের বেশি সময় কারাগারে থাকতে হয়েছে, যা নিয়েও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, বন্দিদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে সরকারের ভেতরে উদ্বেগ থাকলেও বিচারমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক আয়োজনের বিষয়ে চরম সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। আদালতের জটের কারণে বহু বন্দি দীর্ঘ সময় রিমান্ডে থাকেন—এই বাস্তবতায় একটি দৃষ্টান্ত তৈরি হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ।
বিচার মন্ত্রণালয়ের দাবি, কারাগারে অনশন নতুন কোনো বিষয় নয় এবং বন্দিদের চিকিৎসা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দীর্ঘদিনের প্রক্রিয়া চালু রয়েছে। তবে অনশনকারীদের পরিবার বলছে, কেবল নিয়মের কথা বললেই চলবে না—এই মুহূর্তে প্রয়োজন দ্রুত মানবিক ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে

