ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি গাদ্দাফির অর্থকাণ্ডে ফৌজদারি ষড়যন্ত্রে দোষী সাব্যস্ত হয়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। প্যারিসের আদালতের এই ঐতিহাসিক রায় ফরাসি রাজনীতিতে বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আদালত সারকোজিকে প্যাসিভ দুর্নীতি ও বেআইনি নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহের অভিযোগ থেকে খালাস দিলেও তাকে পাঁচ বছরের সাজা ভোগের নির্দেশ দিয়েছে। এর মধ্যে তাকে কারাগারেই সময় কাটাতে হবে, এমনকি আপিল করলেও। পাশাপাশি তাকে ১ লাখ ইউরো জরিমানাও গুনতে হবে। রায় ঘোষণার সময় আদালতকক্ষে উপস্থিত সবাই স্তব্ধ হয়ে যান।
২০০৭ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির কাছ থেকে বিপুল অর্থ নেওয়ার অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কের মুখে ছিলেন সারকোজি। অভিযোগপত্রে বলা হয়, অর্থের বিনিময়ে তিনি গাদ্দাফিকে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেতে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বিচারক নাথালি গাভারিনো জানান, সারকোজি তাঁর ঘনিষ্ঠদের মাধ্যমে লিবিয়ান কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। তবে প্রমাণের ঘাটতির কারণে তাঁকে বেআইনি তহবিলের সরাসরি সুবিধাভোগী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করা যায়নি।
রায় ঘোষণার পর আদালতের বাইরে সারকোজি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, এই রায় আইনের শাসনের জন্য “অত্যন্ত ভয়াবহ”। তিনি আরও বলেন, “যদি আমাকে জেলে যেতে হয়, আমি মাথা উঁচু করেই যাব।”
২০১৩ সালে তদন্ত শুরু হয়, গাদ্দাফির ছেলে সেইফ আল-ইসলাম অভিযোগ করার পর। পরে লেবানিজ ব্যবসায়ী জিয়াদ তাকিয়েদ্দিন দাবি করেন, সারকোজির প্রচারণা “বহুলভাবে” ত্রিপোলি দ্বারা অর্থায়িত হয়েছিল, এবং পাঁচ কোটি ইউরোর লেনদেন তিনি লিখিত প্রমাণসহ প্রকাশ করেন।
এ মামলায় সারকোজির ঘনিষ্ঠ দুই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ক্লদ গেয়াঁ দুর্নীতির দায়ে দোষী প্রমাণিত হন, আর ব্রিস অর্তফোকে ফৌজদারি ষড়যন্ত্রে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। অন্যদিকে, সারকোজির স্ত্রী কার্লা ব্রুনি-সারকোজির বিরুদ্ধেও প্রমাণ লুকানো ও প্রতারণার সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে, যদিও তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে সারকোজির জন্য এটি প্রথম কারাভোগ হতে যাচ্ছে। তবে এর আগে তিনি আরও দুটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ২০২১ সালে বিচারককে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়ে তিনি প্রথম ফরাসি সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে কারাদণ্ড পান। আবার ২০২৪ সালে নির্বাচনী ব্যয়ের সীমা অতিক্রম ও তা গোপনের মামলায়ও এক বছরের সাজা হয়।
ফরাসি ইতিহাসে এই প্রথমবার একজন সাবেক প্রেসিডেন্টকে প্রকৃত কারাদণ্ড ভোগ করতে হতে যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি শুধু সারকোজির রাজনৈতিক জীবনের জন্য নয়, বরং ফরাসি বিচারব্যবস্থার জন্যও এক অভূতপূর্ব অধ্যায়।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫