আগামী মাসে জাতিসংঘের এক সম্মেলনে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বানে লেবার সরকারের উপর ভেতর ও বাইরের চাপ ক্রমেই বাড়ছে। দলটির প্রবীণ নেতারা বলছেন, এই স্বীকৃতি শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকে জোরদার করবে এবং চলমান উত্তেজনার মাঝে নৈতিক নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
হলোকাস্ট থেকে বেঁচে ফেরা লেবার দলের প্রবীণ পার্লামেন্ট সদস্য লর্ড আলফ ডাবস বলেন, ফিলিস্তিনিদের “আত্মসম্মান” ফিরিয়ে দিতেই রাষ্ট্র স্বীকৃতি জরুরি। তিনি বলেন, “তাৎক্ষণিক কিছু না ঘটলেও প্রতীকী স্বীকৃতি তাদের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করবে। প্রতীকেরও গুরুত্ব আছে।”
সাবেক মন্ত্রী পিটার হেইন বলেন, “আলোচনার পরে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বললে ইসরায়েলের অবৈধ দখল চিরস্থায়ী হয়ে যাবে। স্বীকৃতি হওয়া উচিত শান্তি আলোচনার ফল নয়, বরং তার প্রেরণা।”
আগামী ১৭ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত জাতিসংঘে অনুষ্ঠিতব্য দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বিষয়ক সম্মেলনের প্রস্তুতিমূলক বৈঠকে সৌদি আরব অন্যান্য দেশকে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানায়। তাদের বক্তব্য, “শান্তির পূর্বশর্ত হিসেবে এই স্বীকৃতি বিবেচনা করা উচিত, শান্তির ফল নয়।”
এই সম্মেলনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে পারে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ গত মাসে ইঙ্গিত দেন যে প্যারিস ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে পারে, তবে সেটি জাতিসংঘের জুন সম্মেলনের অংশ হিসেবেই হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ল্যামি পার্লামেন্টে জানান, ফ্রান্সের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে তিনি বলেন, “যে কোনও স্বীকৃতি শুধু প্রতীকী নয়, বাস্তব ফলাফল আনবে – সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।”
দ্য গার্ডিয়ান গত সপ্তাহে জানায়, ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের ধারণা ফ্রান্স এখনই স্বীকৃতি দেবে না। যুক্তরাজ্য বলছে, তারা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে, তবে সেটি হবে ‘সর্বোচ্চ প্রভাব’ সৃষ্টির সময়ে।
লেবার পার্টির সংসদ সদস্যদের মধ্যেও চাপ বাড়ছে। এ মাসের শুরুতে ৬৯ জন এমপি ও ছয়জন লর্ড প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি চিঠি পাঠান, যেখানে বলা হয়, “এটি একটি অনন্য সুযোগ” ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার। এই চিঠিটি “লেবার ফ্রেন্ডস অফ প্যালেস্টাইন অ্যান্ড দ্য মিডল ইস্ট”-এর চেয়ার সারা ওয়েন এবং অ্যান্ড্রু প্যাকসের উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল। চিঠিতে বর্তমান সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীও স্বাক্ষর করেন।
জুনের জাতিসংঘ সম্মেলনের ধারণাপত্রে ফ্রান্স ও সৌদি আরব জানায়, এই সম্মেলনের লক্ষ্য নতুন করে আলোচনা নয়, বরং “দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন করা।”
এই আহ্বান আরও জরুরি হয়ে উঠেছে ফিলিস্তিনি ভূমিতে বেআইনি বসতি, একতরফা দখল, সহিংসতা, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের প্রেক্ষাপটে।
লেবার এমপি ও পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সদস্য অ্যালেক্স ব্যালিঞ্জার বলেন, “যুক্তরাজ্যের এখনই নীতিগত নেতৃত্ব দেখানোর সময়। আমরা আর মুখে শুধু দুই রাষ্ট্রের কথা বলে বাস্তবে তার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারি না।”
সাবেক ছায়ামন্ত্রী ও ফিলিস্তিন অধিকারকর্মী আফজাল খান বলেন, “লেবারের আন্তর্জাতিকতাবাদী মূল্যবোধ অনুযায়ী এখনই কাজ করার সময়। এই স্বীকৃতি হবে শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রথম ধাপ, বেআইনি বসতি স্থাপন ও অবরোধ বন্ধে সহায়ক এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কূটনৈতিক ও মানবিক পথ উন্মুক্ত করবে।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “যুক্তরাজ্য দেরি করতে করতে বিশ্বজুড়ে ১৪৭টি দেশ ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২৪ মে ২০২৫