প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো একটি আইন বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির সরকার। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগামী বছর থেকে যুক্তরাজ্যে ফুটপাতে ঘুমানো আর অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে ফুটপাতে ঘুমানোকে অবৈধ ঘোষণা করা ‘ভ্যাগ্রেন্সি অ্যাক্ট’ বাতিলের পরিকল্পনা করছে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের মন্ত্রিসভা। আইনটি ১৮২৪ সালে ক্রমবর্ধমান ভবঘুরে সমস্যা মোকাবিলায় চালু করা হয়েছিল। উপপ্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রায়নার আইনটিকে ‘নিষ্ঠুর ও সেকেলে’ বলে অভিহিত করেছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, নতুন আইনে সংঘবদ্ধ ভিক্ষাবৃত্তি ও অনুপ্রবেশের মতো অপরাধগুলোতে নজর থাকবে।
আবাসনবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন রায়নার। তিনি বলেন, লেবার পার্টি সমাজের সবচেয়ে দুর্বলদের প্রতি প্রায় দুই শতাব্দীর অবিচারের পরিসমাপ্তি ঘটাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘কাউকে শুধু ফুটপাতে ঘুমানোর জন্য অপরাধী করা উচিত নয় এবং এই নিষ্ঠুর ও সেকেলে আইনটি বাতিল করার মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করছি যে, এমন ঘটনা আর কখনো ঘটবে না।’
১৮২৪ সালের এই আইনের অধীনে গত এক দশকে মামলা ও দোষী সাব্যস্ত হওয়ার সংখ্যা কমে এসেছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ফুটপাতে ঘুমানোসংক্রান্ত অপরাধের জন্য মোট ৭৯টি মামলা ও ৫৯টি রায় হয়েছিল—যা ২০১১ সালের সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫০টি মামলা এবং ৮১০টি রায় থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
‘ভ্যাগ্রেন্সি অ্যাক্ট’ বাতিলের বিষয়টি প্রথম ২০২২ সালে বিবেচনায় এনেছিল তৎকালীন কনজারভেটিভ পার্টির সরকার। তারা প্রথমে বিকল্প আইন পাস করতে চেয়েছিল, কিন্তু গত বছর সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের আগে তা আর সম্ভব হয়নি। কনজারভেটিভ পার্টির ‘ক্রিমিনাল জাস্টিস বিল’ পাস হলে পুলিশ ফুটপাতে ঘুমানো ‘বিরক্তিকর’ ব্যক্তিদের উঠে যেতে বাধ্য করতে ও নির্দেশ না মানলে জরিমানা করতে পারত।
লেবার সরকার জানিয়েছে, তারা ভ্যাগ্রেন্সি অ্যাক্টটিকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করার পরিকল্পনা করছে। এই ধরনের ভবঘুরে বা ফুটপাতে ঘুমানো ব্যক্তিদের নিরাপদ রাখতে পুলিশকে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দিতে চায় কিয়ার স্টারমারের সরকার।
‘ক্রাইম অ্যান্ড পুলিশিং বিল’ সংশোধনের মাধ্যমে এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে লাভজনক উদ্দেশ্যে ভিক্ষাবৃত্তি এবং অপরাধ করার উদ্দেশ্যে অনুপ্রবেশের মতো নতুন অপরাধ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
গৃহহীন বা ভবঘুরেদের নিয়ে কাজ করা দাতব্য সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে ‘ভ্যাগ্রেন্সি অ্যাক্ট’ বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিল। দাতব্য সংস্থা ক্রাইসিসের প্রধান নির্বাহী ম্যাট ডাউনি বলেন, ‘এটি একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত। এটি জীবন পরিবর্তন করবে এবং হাজার হাজার মানুষকে নিরাপত্তা থেকে দূরে, অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া থেকে রক্ষা করবে।’
তিনি এই ক্ষতিকর আইনটি বাতিল করার ক্ষেত্রে এমন পদক্ষেপের জন্য সরকারের প্রশংসা করেন।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
১১ জুন ২০২৫