বিদেশি কর্মীরা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর যুক্তরাজ্য ত্যাগ করছে, নাকি অবৈধভাবে থেকে যাচ্ছে—এ বিষয়ে কোনো তথ্যই নেই হোম অফিসের কাছে। এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছে ব্রিটিশ সংসদের একটি ক্রস-পার্টি কমিটি।
সরকারি ব্যয় তদারকির দায়িত্বে থাকা পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (PAC) জানিয়েছে, ২০২০ সালে চালু হওয়া স্কিলড ওয়ার্কার ভিসা স্কিম চালুর পর থেকে হোম অফিস কোনো ধরনের প্রস্থান তথ্য বিশ্লেষণ করেনি। অথচ ওই সময় থেকে ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত প্রায় ১১.৮ লাখ আবেদন জমা পড়েছে এই রুটে।
২০২০ সালে ব্রেক্সিটের পর পুরনো Tier 2 ভিসার জায়গায় চালু হয় এই নতুন রুট। পরে ২০২২ সালে কনজারভেটিভ সরকার কোভিড পরবর্তী স্বাস্থ্য ও কেয়ার সেক্টরের শূন্যতা পূরণের উদ্দেশ্যে ভিসা রুটটি আরও বিস্তৃত করে, যার ফলে যুক্তরাজ্যে অভিবাসনের হার রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছায়।
PAC অভিযোগ করেছে, হোম অফিস এই স্কিমে আসা লোকজনের তথ্য জানার জন্য ন্যূনতম উদ্যোগও নেয়নি। বর্তমানে তারা শুধুমাত্র বিমান সংস্থার যাত্রী তালিকার ওপর নির্ভর করছে, এবং সেটিরও কোনো বিশ্লেষণ হয়নি ২০২০ সালের পর থেকে।
প্রতিবেদন বলছে, যুক্তরাজ্য ত্যাগ করা অভিবাসীদের যথাযথভাবে রেকর্ড করার জন্য হোম অফিসের এখনো কোনো স্পষ্ট কৌশল নেই।
একই সঙ্গে, স্কিলড ওয়ার্কারদের ব্যাপক হারে শোষণ, অতিরিক্ত শ্রম এবং ঋণ দাসত্বের প্রমাণ থাকলেও হোম অফিস এসব মোকাবেলায় ধীর ও অকার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েভেট কুপার স্বীকার করেছেন, রিপোর্টের তথ্য “সঠিক” এবং অভিবাসন ব্যবস্থা এখনো যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। তিনি জানান, “পরিবর্তন একদিনে হয় না”, এবং এখন “বায়োমেট্রিক যাচাইয়ের” মাধ্যমে কর্মীদের অবস্থান শনাক্ত করার ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে কর্মস্থলে আঙুলের ছাপের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আইনগতভাবে যুক্তরাজ্যে বাস ও কাজ করছেন কি না।
হোম অফিসের স্থায়ী সচিব ডেম অ্যান্টোনিয়া রোমিও জানিয়েছেন, “ওভারস্টে” অর্থাৎ ভিসা শেষ হওয়ার পর থাকা একটি সমস্যা, যা বিভাগটি সমাধান করতে কাজ করছে।
তবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইগ্রেশন অবজারভেটরির পরিচালক ড. ম্যাডেলেইন সাম্পশন বলেছেন, এখনো পর্যন্ত হোম অফিসের প্রক্রিয়া “খুব একটা কার্যকর” নয় এবং এ সমস্যা আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
হোম অফিসের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, পাঁচ বছর আগে ভিসা শিথিল করার সিদ্ধান্তই ২০২৩ সালে প্রায় এক মিলিয়ন অভিবাসীর আগমনের কারণ হয়েছে। তবে এখন তারা সেই ভুল শুধরে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
বিভাগটির এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত রেকর্ড সংখ্যক স্পনসর লাইসেন্স বাতিল করেছি, স্কিলড ওয়ার্কারের ন্যূনতম যোগ্যতা আবার ডিগ্রি পর্যায়ে নিয়ে গেছি এবং কেয়ার সেক্টরে বিদেশি নিয়োগ বন্ধ করেছি।”
তিনি বলেন, “আমাদের ইমিগ্রেশন হোয়াইটপেপার মাধ্যমে আমরা কম অভিবাসন, বেশি দক্ষতা এবং ব্রিটিশ কর্মীদের অগ্রাধিকার দিয়ে জনগণের বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করবো।”
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
০৪ জুলাই ২০২৫