চলতি বছরের ৯ মার্চ থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত দফায় দফায় পরিবর্তন আনা হয়েছে ব্রিটিশ অভিবাসন আইনে। গত পাঁচ মাসে বড় ধরনের তিন দফা পরিবর্তন এনেছে যুক্তরাজ্যের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ, হোম অফিস। এসব পরিবর্তনের মূল লক্ষ্য যুক্তরাজ্যে আসা বিদেশি শিক্ষার্থীরা।
এতোদিন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে স্নাতকোত্তর কোর্সে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা সঙ্গে করে তাদের স্পাউস এবং ১৮ বছরের কম বয়সী সন্তানদের নিয়ে আসতে পারতেন। কিন্তু চলতি বছরের ৯ মার্চ হোম অফিস ইমিগ্রেশন আইনে যে পরিবর্তন আনে সেখানে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে স্নাতকোত্তর কোর্সে আসা শিক্ষার্থীরা তাদের স্পাউস ও সন্তানদের আর নিয়ে আসতে পারবেন না।
সাম্প্রতিক সময়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্সে আশা শিক্ষার্থীরা যুক্তরাজ্যে এসে তাদের কোর্স শেষ না করেই ওয়ার্ক পারমিটে ভিসা পরিবর্তন করতে পারতেন। কিন্তু ১৭ জুলাই বেলা তিনটা থেকে কোনো শিক্ষার্থী তাদের কোর্স সম্পূর্ণভাবে শেষ না করা পর্যন্ত আর ভিসা পরিবর্তন করতে পারবেন না বলে হঠাৎ আইন জারি করে হোম অফিস।
ওয়ার্ক পারমিটে ভিসা পরিবর্তন করতে হলে তাদের অবশ্যই কোর্স শেষ করে যেতে হবে। ১৯ জুলাই এই আইনেরই আরেকটি সংযোজন এনেছে হোম অফিস। এই সংযোজনে বলা হয়েছে, যেসব শিক্ষার্থী ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যে তাদের স্পাউস সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন, সেসব স্পাউস চাইলে তাদের ভিসা ওয়ার্ক পারমিটে পরিবর্তন করতে পারবেন।
কিন্তু যুক্তরাজ্যে প্রবেশের সময় মূল আবেদনকারী শিক্ষার্থী তার কোর্স শেষ না করা পর্যন্ত তার স্পাউসের ডিপেনডেন্ট হতে পারবেন না।
ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির অভিবাসন নীতি অনুযায়ী যুক্তরাজ্যের নেট অভিবাসীর সংখ্যা বছরে এক লাখের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার অংশ হিসেবে অভিবাসন আইনে এমন পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
হায়ার এডুকেশন স্ট্যাটিসটিকস এজেন্সির এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২১–২২ সালে যুক্তরাজ্যে মোট বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২৮ লাখ ৬২ হাজার ৬২০ জন; যা ২০২০–২১ সালে ছিল ২৭ লাখ ৫১ হাজার ৮৮৫ জন। এক বছরে সংখ্যাটি ৪ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ বেড়েছে।
হায়ার এডুকেশন স্ট্যাটিসটিকস এজেন্সির পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১–২২ সালে যুক্তরাজ্যে ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৯৭০ জন নতুন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা নিতে এসেছেন; যা ২০২০–২১ সালে ছিল ৬ লাখ ৫ হাজার ১৩০ জন। যা আগের বছরের তুলনায় ১২ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ হাজার ৭০০ জন।
যুক্তরাজ্যের একজন ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রতিবছর যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে ৪২ বিলিয়ন পাউন্ডের যোগান দেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা। হঠাৎ করে কোনো পূর্বাভাস ছাড়া আইনে পরিবর্তন আনলে শিক্ষার্থীরা বিপদে পড়ে যান। যখনই যুক্তরাজ্য সরকার অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে, তখন বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাজ্যে প্রবেশের পথ সহজ করে দেয়। কিন্তু সংকট থেকে উত্তরণের পর তারা এ ব্যবস্থাকে কঠিন করে দেয়। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য সরকারের এ ধরনের আচরণের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
এম.কে
০৫ আগস্ট ২০২৩