যুক্তরাজ্যে গৃহহীন কিশোর-কিশোরদের অস্থায়ী আবাসে রাখা হচ্ছে যতক্ষণ না তারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়। নতুন এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কাউন্সিলগুলো কিশোর-কিশোরীদের গৃহহীনদের সাথে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো আচরণ করছে। তাদের যত্নে নেওয়ার পরিবর্তে অনুপযুক্ত অস্থায়ী আবাসে রাখছে কাউন্সিল।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলো ১৬ ও ১৭ বছর বয়সী অসহায় কিশোর-কিশোরীদের মূল্যায়ন করতে ইচ্ছাকৃতভাবে সময় বেশি নিচ্ছে। যাতে তাদের প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করা যায়। কোরাম ইনস্টিটিউট ফর চিলড্রেন নামক একটি দাতব্য সংস্থার গবেষণা অনুসারে, পরিবারে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, আসক্তি এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার মতো “ভয়াবহ” পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে আসা কিশোর-কিশোরীদের তাদের অধিকার সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছেনা সঠিকভাবে।
সংস্থাটি বলছে, আর্থিক সংকটে থাকা কাউন্সিলগুলো প্রায়ই এই শিশুদের থাকার ব্যবস্থা করতেই ব্যর্থ হয়। অথবা তাদের সাথে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে আচরণ করে। কারণ, একজন কিশোর কিংবা কিশোরী ১৮ বছর বয়সে পৌঁছালে শিশু হিসেবে কাউন্সিলের তাদের প্রতি দায়বদ্ধতা কমে যায়।
এই গবেষণা পুরো দেশের তরুণ-তরুণীদের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। যা অবজারভার পত্রিকার সাথে বিশেষভাবে শেয়ার করা হয়েছে বলে জানা যায়।
কোরাম দশ বছর আগে প্রথম এই সমস্যার কথা তুলে ধরে এবং কাউন্সিলগুলো জানেই না যে তারা আইন ভঙ্গ করছে।
কোরামের সিইও ডঃ ক্যারল হোমডেন বলেছেন:
“১৬ ও ১৭ বছর বয়সী গৃহহীন তরুণরা প্রায়শই নির্যাতন ও পারিবারিক ভাঙনের শিকার হয়। তাদের শুধু মাথার ওপর ছাদ নয় বরং যত্ন ও সহযোগিতার প্রয়োজন যা তাদের অধিকার।”
শিশু কমিশনার র্যাচেল ডি সুজা বলেছেন, যেসব শিশুকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয় তাদের গৃহহীন হিসেবে নয় বরং যত্ন প্রয়োজন এমন শিশু হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। তার কার্যালয়ের একটি গবেষণায় গত বছর দেখা গেছে, ২০২২-২৩ সালে প্রায় ৬,৫০০ জন ১৬ ও ১৭ বছর বয়সী কিশোর গৃহহীন হিসেবে রিপোর্ট করেছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে ধারণা করা হয়।
কোরাম এই ডেটা সংগ্রহ চালিয়ে যাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছে। একটি বাস্তব ঘটনা তুলে ধরতে কোরাম জানায়, স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করেছিল তারা মিনা নামের একজন কিশোরীকে সাহায্য করার জন্য। মিনা ১৭ বছর বয়সে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কারণে পরিবার ছেড়ে আসতে বাধ্য হন। থাকার কোনো জায়গা না থাকায় মিনা তার স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করেন, কিন্তু তারা তাকে ফিরিয়ে দেয়।
মিনা অবজারভার-কে বলেন, তিনি বিভিন্ন বাড়িতে সোফায় ঘুমিয়ে দিন কাটাতে বাধ্য হন। এইসময় তিনি এ-লেভেলের জন্য পড়াশোনা করছিলেন। মিনার কোনো টাকা ছিল না এবং বন্ধুর পরিবারের খাবার ও কাপড় ধার নিয়ে চলতে হত।
মিনা বলেন, “আমি খুব কষ্টে ছিলাম। বন্ধুরা দারুণ সহানুভূতিশীল ছিল, কিন্তু আমি জানতাম, ওদের কাছে চিরদিন থাকা সম্ভব নয়। ছুটি আসছিল, আর জানতাম সবাই বাড়ি চলে যাবে।”
স্কুল থেকে মিনার মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে সামাজিক সেবায় জরুরি আবেদন করা হয়, কিন্তু আবারও কাউন্সিল তাকে বিশেষ ইউনিটে প্রেরণ করার বিষয়টি অস্বীকার করে।
একজন সমাজকর্মী পরবর্তীতে তাকে কোরামের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেন। কোরাম তার অধিকার সম্পর্কে জানানোর জন্য একজন প্রতিনিধি নিয়োগ দেন। পরে একজন সলিসিটরের সাহায্যে মিনা স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে তাদের দায়িত্ব পালনে বাধ্য করেন।
পরবর্তীতে মিনা আর্থিক সাহায্য, পড়াশোনার জন্য সহযোগিতা এবং নিরাপদ আশ্রয় পান। এখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, কিন্তু অন্যান্য গৃহহীন কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে তিনি চিন্তিত।
মিনা বলেন, “ যাদের বন্ধুদের ঘরে অতিরিক্ত জায়গা নেই, তাদের কী হবে? যদি কেউ নিরাপত্তাহীনতায় ঘরে থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হয় তাদের বা কি হবে?”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
৩১ ডিসেম্বর ২০২৪