সৌদি আরবের প্রভাবশালী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ডিসেম্বরে রিয়াদে স্থানীয় সাংবাদিকদের একটি অফ-দ্য রেকর্ড ব্রিফিংয়ে জড়ো করেছিলেন। সেখানে তিনি এক অবাক করা বার্তা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন দেশটির কয়েক দশকের মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত ‘সৌদি আরবের পিঠে ছুরিকাঘাত করেছে’।
বৈঠকে উপস্থিত ব্যক্তিদের মতে, সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, ‘তারা দেখবে আমি কী করতে পারি’।
৩৭ বছর বয়সী যুবরাজ ও তার এক সময়ের পরামর্শদাতা আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্য হচ্ছে। যা মধ্যপ্রাচ্য এবং বৈশ্বিক তেলের বাজারে ভৌগলিক ও অর্থনৈতিক শক্তির প্রতিযোগিতার প্রতিফলন। দুটি দেশের রাজ পরিবারের এই দুই সদস্য আরব বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে প্রায় এক দশক সময় নিয়েছেন। এখন তারা মধ্যপ্রাচ্যে কে প্রভাবশালী, তা নিয়ে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছেন। বর্তমানে অঞ্চলটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, উপসাগরীয় দেশ দুটির বিরোধ ইরানকে মোকাবিলায় একটি ঐক্যবদ্ধ জোট গঠন, ইয়েমেনের ৮ বছর ধরে চলমান সংঘাত এবং মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণকে কঠিন করে তুলতে পারে।
বাইডেন প্রশাসনের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, অঞ্চলটির নেতা এবং গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার জন্য দুই উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তি রয়েছেন। কিছু মাত্রায় তারা এখনও একত্রে কাজ করছেন। কিন্তু এখন তাদের কেউ-ই একই নৌকায় থাকতে স্বস্তিবোধ করছেন না। মোট কথা, তাদের একে অপরের মুখোমুখি থাকা আমাদের জন্য সহযোগিতামূলক নয়।
এক সময় ঘনিষ্ঠ ছিলেন এই দুই ব্যক্তি। সৌদি যুবরাজ এমবিএস এবং ৬২ বছর বয়সী আমিরাতের প্রেসিডেন্ট এমবিজেড নামে পরিচিত। তাদের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বলেছেন, ছয় মাসের বেশি সময় ধরে তারা একে অপরের সঙ্গে কথা বলেননি এবং পর্দার আড়াল থেকে বিরোধ প্রকাশ্য হচ্ছে।
ইয়েমেনে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। এই বিষয়টি দেশটির সংঘাত অবসানের উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তেলের মূল্য বাড়াতে সৌদি আরবের চাপে হতাশ আমিরাত। এটি আবার তেল উৎপাদনকারীদের সংগঠন অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ বা ওপেক-এ নতুন ফাটল ধরাচ্ছে।
দুই দেশ ক্রমেই অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে। তেলের ওপর সৌদি আরবের নির্ভরশীলতা কমাতে এমবিএসের পরিকল্পনা অনুসারে, আমিরাতের দুবাই থেকে বিভিন্ন কোম্পানির সদর দফতর রিয়াদে স্থানান্তরের চাপ দিচ্ছে সৌদি আরব। দীর্ঘ দিন ধরে দুবাই পশ্চিমাদের কাছে অনেক বেশি আধুনিক মনোভাবাপন্ন হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে আসছে। সৌদি যুবরাজ টেক সেন্টার স্থাপন, আরও বেশি পর্যটককে আকৃষ্ট করা এবং লজিস্টিক কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন। অথচ দীর্ঘ দিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত পরিচিত। মার্চ মাসে তিনি রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নতুন একটি এয়ারলাইন কোম্পানি চালুর ঘোষণা দিয়েছেন। যা দুবাইয়ের উচ্চতর র্যাংকিংয়ে থাকা এমিরেটসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে।
অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবের ক্ষেত্রে, ২০২১ সালে ইংল্যান্ডের ফুটবল ক্লাব নিউক্যাসল কিনেছে সৌদি আরব। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ফুটবল তারকাদের পেছনে বিনিয়োগ করছে দেশটি। যেমনটি করে আসছিল ম্যানচেস্টার সিটি–যে ক্লাবের মালিক আবুধাবির রাজ পরিবারের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ইতোমধ্যে দলটি ইংলিশ লিগ ও ইউরোপের শীর্ষ প্রতিযোগিতা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে।
উপসাগরীয় কর্মকর্তাদের মতে, আমিরাতের প্রেসিডেন্ট এমবিজেড সৌদি আরবের রাজপরিবারের এক সদস্যের ওপর বিরক্ত। সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর্মকর্তারা মনে করে তিনি গুরুতর কিছু ভুল করেছেন।
এম.কে
১৯ জুলাই ২০২৩