‘উইন্ডরাশ’ কেলেঙ্কারির পুনরাবৃত্তির ভয়ে মানুষকে মেয়াদোত্তীর্ণ পরিচয়পত্র ব্যবহার করার অনুমতি দিতে! যাচ্ছে ইউকে সরকার।
ই-ভিসা সিস্টেমে ত্রুটির কারণে যাত্রীদের মেয়াদোত্তীর্ণ পরিচয়পত্র ব্যবহার করে যুক্তরাজ্যে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হবে বলে একজন মন্ত্রী গার্ডিয়ান-কে জানিয়েছেন।
মাইগ্রেশন মন্ত্রী সীমা মালহোত্রা জানান, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে ‘উইন্ডরাশ’ কেলেঙ্কারির মতো আরেকটি ঘটনার ভয়ের কারণে সরকার নতুন ডিজিটাল ইমিগ্রেশন সিস্টেমে পুরোপুরি রূপান্তরের পরিকল্পনা স্থগিত করেছে।
ই-ভিসা আবেদনকারীদের অভিযোগের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারা অভিযোগ করেছেন যে, নতুন ডিজিটাল ইমিগ্রেশন সিস্টেমে প্রবেশ করতে না পারায় তারা যুক্তরাজ্যে ফিরে আসার অধিকার প্রমাণ করতে পারছেন না।
৩১ ডিসেম্বর থেকে যুক্তরাজ্যে থাকার অধিকারের প্রমাণস্বরূপ বেশিরভাগ নথি, যেমন বায়োমেট্রিক রেসিডেন্স পারমিট আর বৈধ হবে না।
হোম অফিস সূত্র জানিয়েছে, শত শত যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা বিদেশ থেকে এই সিস্টেমে প্রবেশ করতে হিমশিম খাচ্ছেন এবং এজন্য তারা নিজ দেশে ফিরে আসতে পারছেন না। অনেক অভিবাসী কর্মী অভিযোগ করেছেন যে, ই-ভিসা ছাড়া তারা কর্মসংস্থান বা বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে পারছেন না।
সীমা মালহোত্রা বলেন, “আমি একাধিক উদ্বেগের কথা শুনেছি, যার মধ্যে রয়েছে ই-ভিসার দিকে রূপান্তরের ফলে বয়স্ক ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এবং তারা নিজেদের অধিকার প্রমাণ করতে অক্ষম হতে পারে। আমি জানি, আন্তর্জাতিক ভ্রমণও বিশেষ উদ্বেগের বিষয়, বিশেষ করে উৎসবের সময়ের আগে।”
তিনি আরও বলেন, “এই উদ্বেগগুলোর প্রতিফলন ঘটিয়ে আমি পরিবর্তন এনেছি। এর মধ্যে রয়েছে এয়ারলাইনগুলোর সঙ্গে কাজ করা, যাতে ৩১ ডিসেম্বর বা তার পরে মেয়াদোত্তীর্ণ বায়োমেট্রিক রেসিডেন্স পারমিট বা ইইউ সেটেলমেন্ট স্কিম (EUSS) বায়োমেট্রিক রেসিডেন্স কার্ডগুলোকে ৩১ মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত বৈধ প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা হয়।”
ফেলথাম ও হেস্টন আসনের সাংসদ মালহোত্রা আরো বলেন, ই-ভিসায় প্রবেশাধিকার না থাকলে অভিবাসী সম্প্রদায়গুলো তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
নতুন লেবার সরকার ‘উইন্ডরাশ’ কেলেঙ্কারির ভুল সংশোধন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তিনি জানান, “অভিবাসী সম্প্রদায়গুলোর জন্য এটি একটি বাস্তব ভয় যে, হোম অফিস সিস্টেমে কিছু ভুল হলে সেটি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। এ কারণেই আমরা বিষয়গুলো শোনার ব্যাপারে এতটাই মনোযোগী।”
নতুন বছরের সময় এয়ারলাইনগুলোর নথি যাচাই করতে সাহায্য করার জন্য হোম অফিস একটি ২৪-ঘণ্টার হেল্পলাইন চালু করছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সেটেলমেন্ট স্কিম (EUSS), দক্ষ কর্মীদের জন্য ভিসা এবং ব্রিটিশ জাতীয় (বিদেশি) ভিসার জন্য আবেদনকারীদের জন্য ই-ভিসা সিস্টেম কয়েক বছর ধরে চালু রয়েছে।
১ জানুয়ারি থেকে বায়োমেট্রিক নথি পুরোপুরি বন্ধ করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ৩১ অক্টোবর ২০২৪-এর পর থেকে হোম অফিস আর বায়োমেট্রিক রেসিডেন্স পারমিট ইস্যু করা বন্ধ করে দিয়েছে।
পূর্ববর্তী সরকার এপ্রিলে ঘোষণা করেছিল যে নতুন বছরের দিন থেকে ই-ভিসার পূর্ণ বাস্তবায়ন শুরু হবে। তৎকালীন কনজারভেটিভ মন্ত্রী টম পার্সগ্লোভ বলেছিলেন, এটি “কে এখানে বসবাস, কাজ বা অধ্যয়ন করতে আসে তা নিশ্চিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে, সীমান্ত সুরক্ষা শক্তিশালী করবে এবং অভিবাসন ব্যবস্থার অপব্যবহার প্রতিরোধ করবে।”
মালহোত্রা বলেন, “আমি এখনও বিস্মিত যে কনজারভেটিভরা ১ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক ছুটির দিনে, সবচেয়ে বড় অভিবাসন নথি পরিবর্তন চালু করার জন্য কেন বেছে নিল? এটি একটি বিশাল ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।”
দ্য থ্রিমিলিয়ন নামক ইইউ নাগরিকদের বৃহত্তম গ্রাসরুটস গ্রুপের প্রধান নির্বাহী আন্দ্রেয়া ডুমিত্রাচে এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তিনি সতর্ক করেছেন যে নতুন বছরের সময় এখনও ভ্রমণ বিশৃঙ্খলা হতে পারে।
তিনি বলেন, “হোম অফিসের সামনে একটি বিশাল কাজ রয়েছে। ভ্রমণ বিশৃঙ্খলা এড়াতে, তাদের একটি অসাধারণ সংগঠিত এবং পর্যাপ্ত সম্পদসমৃদ্ধ যোগাযোগ প্রচারাভিযান পরিচালনা করতে হবে, যাতে এয়ারলাইনগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ নথি গ্রহণ করে।”
“মানুষের দায়িত্ব হওয়া উচিত নয় এয়ারলাইনগুলোকে রাজি করানো। এটি স্পষ্ট যে বর্তমান সিস্টেমটি উপযুক্ত নয়।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০৪ ডিসেম্বর ২০২৪