যুক্তরাজ্যের শিশুরা একটি “নিষ্ঠুর” অভিবাসন নীতির শিকারে পরিনত হতে যাচ্ছেন। এই কঠোর অভিবাসন নীতির কারণে “প্রধান শিকার” হতে যাচ্ছে পরিবারের ছোট শিশুরা। অনেক পরিবার এর ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে বলে প্রচারণাকারীরা মনে করছেন।
ইমিগ্রেশন নীতির পরিবর্তনের কারণে, ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে একজন ব্রিটিশ নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দাকে তাদের সঙ্গীর জন্য ভিসার আবেদন করতে হলে ন্যূনতম £২৯,০০০ উপার্জন করতে হবে, যা পূর্বে £১৮,৬০০ ছিল।
ব্রিস্টল ভিত্তিক প্রচারণাকারী সংগঠন ক্যারোলিন কুম্বসের মতে, কঠোর অভিবাসন নীতির কারণে বিচ্ছিন্ন পরিবারগুলোর শিশুরা “চাপ, দুশ্চিন্তা, দুঃখ, একাকিত্বের শিকার হচ্ছে। লেবার সরকার এই নীতির একটি স্বাধীন পর্যালোচনা চালু করেছে, যা বর্তমানে চলমান।
ইমিগ্রেশন আইনের এই পরিবর্তনটি আগের কনজারভেটিভ সরকারের একটি প্যাকেজের অংশ ছিল, যা অভিবাসন কমানোর লক্ষ্যে আনা হয়েছিল। এর মধ্যে স্কিলড ওয়ার্কার ভিসার সাথে সামঞ্জস্য আনতে আয়ের সীমা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনাও ছিল।
গত সোমবার সংসদে একটি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বেতন বৃদ্ধি বিরোধী একটি পিটিশনে এক লাখেরও বেশি মানুষ স্বাক্ষর করেছিল।
ব্রিস্টল সেন্ট্রালের এমপি কারলা ডেনিয়ার পরিবারের ভিসার আয়ের প্রয়োজনীয়তা বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমরা যা নিয়ে কথা বলছি তা আসলে ভালোবাসার উপর একটি কর – এটি একটি কুৎসিত নীতি, যা মানুষকে তারা কাকে ভালোবাসে এবং তারা কত টাকা উপার্জন করে তার উপর ভিত্তি করে বৈষম্যের শিকার করে।
এটি একটি নিষ্ঠুর ও নিকৃষ্ট নীতি। আমি সরকারকে এটি দ্রুত বাতিল করার আহ্বান জানাই।”
সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে বুধবার চ্যান্সেলর রাচেল রিভস বলেন, সরকার এ বছর একটি অভিবাসন হোয়াইট পেপার প্রকাশ করবে, যার মধ্যে উন্নত দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের আকৃষ্ট করার জন্য ভিসার পর্যালোচনাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
Reunite Families UK, যা পারিবারিক অভিবাসন সহজ করতে প্রচারণা চালায়। এরমধ্যে ৫,৭০০ জনের মতো বেশি সদস্য রয়েছে। যাদের জীবন পরিবার ভিসার স্কিম দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হয়েছে।
সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী পরিচালক ক্যারোলিন কুম্বস বলেছেন, তারা বিচ্ছিন্ন পরিবারের শিশুদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে এবং তাদের ফলাফল সরকারের পর্যালোচনার অংশ হিসেবে মাইগ্রেশন অ্যাডভাইসরি কমিটিতে পাঠিয়েছে।
তিনি বলেন, “শিশুরা পরিবার ভিসা নীতির প্রধান শিকার হচ্ছে এবং তাদের মধ্যে অনেকেই চাপ, দুশ্চিন্তা এবং একাকিত্বের শিকার।”
কিছু দম্পতি বিবিসিকে বলেছেন তারা “বছরের পর বছর ধরে একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে আটকে আছে।” কারণ তারা পরিবার ভিসার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। বিভিন্ন দম্পতিরা সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছেন, হয় আলাদা থাকতে হবে অথবা একসঙ্গে থাকার জন্য যুক্তরাজ্য ছাড়তে হবে।
কিছু দম্পতি বিবিসিকে জানিয়েছেন যে তারা বছরের পর বছর ধরে পরিবার ভিসার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় “অনিশ্চয়তার মধ্যে আটকে” ছিলেন।
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইগ্রেশন স্টাডিজের অধ্যাপক ক্যাথারিন চার্সলে বলেছেন, ব্রেক্সিটের পরে ইউকে-ইইউ দম্পতিদের ওপর প্রভাব নিয়ে তিনি গবেষণা করছেন।
ব্রেক্সিটের আগে যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী দম্পতিদের জন্য ভিসার প্রয়োজন ছিলনা। ইইউ নাগরিক ইইউ সেটেলমেন্ট স্কিমের অধীনে স্থায়ী স্ট্যাটাস সহজেই পেত।
ব্রেক্সিটের পরে ইইউ নাগরিক যুক্তরাজ্যে বসবাস এবং কাজ করার জন্য ভিসার আবেদন করতে হয়।
অধ্যাপক চার্সলে বলেন, যখন দম্পতিরা বুঝতে পারেন তাদের যুক্তরাজ্যে একসাথে থাকার জন্য একটি “ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘ পরিবার ভিসা প্রক্রিয়ার” মধ্য দিয়ে যেতে হবে এবং ন্যূনতম আয়ের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে হবে, তখন তারা প্রচন্ড ধাক্কা খান।
তিনি বলেন, “যুক্তরাজ্যের পরিবার অভিবাসন নীতিমালা ইউরোপ এবং বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে সীমাবদ্ধ। এটি বৈশ্বিকভাবে সত্যিই অস্বাভাবিক।”
সোমবারে সংসদ বিতর্কে এই কঠিন নীতিমালার পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে, কেন্টের কনজারভেটিভ এমপি এবং বিরোধী সহকারী হুইপ কেটি লাম বলেছেন, অভিবাসনের স্তর কমানো প্রয়োজন।
তিনি বলেন, “গত দুই দশক ধরে অভিবাসন অত্যন্ত বেশি ছিল এবং এখনও তাই রয়েছে। জনগণ ধারাবাহিকভাবে সরকারগুলোকে অভিবাসন কমানোর অনুরোধ করেছে। পূর্ববর্তী কনজারভেটিভ সরকার অভিবাসন রোধে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে আগের সরকারগুলোর মতো কনজারভেটিভ সরকার কার্যকর করতে পারেনি।
হোম অফিস সিদ্ধান্ত নিয়েছে ন্যূনতম আয়ের প্রয়োজনীয়তা £২৯,০০০ রাখা হবে। অন্তত যতক্ষণ না মাইগ্রেশন অ্যাডভাইজরি কমিটির পর্যালোচনা সম্পন্ন হয়, যা সম্ভবত গ্রীষ্মে শেষ হবে।
দাভোসে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে মিস রিভস বলেন, “আমরা আবারও সবচেয়ে দক্ষ ব্যক্তিদের জন্য রুটগুলি পরীক্ষা করব, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং লাইফ সাইন্স খাতে ভিসার ক্ষেত্রে। ব্রিটেন ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত, আমরা প্রতিভার জন্য উন্মুক্ত। আমাদের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সেরা উদ্যোক্তা রয়েছে, কিন্তু আমরা বৈশ্বিক প্রতিভাও আনতে চাই।”
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
২৪ ডিসেম্বর ২০২৫