নতুন এক বিশ্লেষণ অনুসারে, যুক্তরাজ্যের দরিদ্রতম পরিবারগুলো তাদের আয়ের ক্রমবর্ধমান অংশ কাউন্সিল ট্যাক্সে ব্যয় করছে। এটি সেই পোল ট্যাক্সের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যা মার্গারেট থ্যাচারের পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
রেজোলিউশন ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংস্কারের ব্যর্থতা ধীরে ধীরে সেই সমস্যাগুলো ফিরিয়ে এনেছে যা “পোল ট্যাক্স” বাতিলের কারণ হয়েছিল।
রেজোলিউশন ফাউন্ডেশনের গবেষণা অনুসারে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও স্কটল্যান্ডে এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের গৃহস্থালি করের আওতায় দরিদ্রতম ২০% পরিবারের আয় থেকে ৪.৮% কাউন্সিল ট্যাক্সে ব্যয় হয়েছে, যা ২০০২-০৩ সালে ছিল মাত্র ২.৯%।
যুক্তরাজ্যে কাউন্সিল ট্যাক্স হলো ধনসম্পদের ওপর আরোপিত কিছু করের মধ্যে একটি, তবে দেশটির চারটি অঞ্চলে এটি ভিন্ন ভিন্ন নিয়মে পরিচালিত হয়।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই করব্যবস্থা গভীরভাবে ত্রুটিপূর্ণ। এর অন্যতম কারণ হলো, ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডে এই কর ১৯৯১ সালের সম্পত্তিমূল্যের ভিত্তিতে ধার্য করা হয়, যদিও গত তিন দশকে সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ওয়েলস ২০০৩ সালের মূল্যায়ন অনুসারে তার ব্যবস্থা হালনাগাদ করেছে, স্কটল্যান্ড ২০১৭ সালে উচ্চমূল্যের সম্পত্তির ওপর কর বাড়িয়েছে, এবং উত্তর আয়ারল্যান্ড এখনো পুরোনো গৃহস্থালি কর ব্যবস্থা বজায় রেখেছে, যা কাউন্সিল ট্যাক্স চালুর আগের ব্যবস্থা।
রেজোলিউশন ফাউন্ডেশন বলছে, কাউন্সিল ট্যাক্সের “প্রতিকূল” প্রকৃতি দরিদ্র পরিবারগুলোকে আয়ের তুলনায় বেশি কর দিতে বাধ্য করছে, যেখানে ধনী পরিবারগুলোর করের হার তুলনামূলক কম। ফলে, কর সংস্কার না করায় এটি দিন দিন আরও বৈষম্যমূলক হয়ে উঠছে।
সরকারি মন্ত্রীরা কিছু এলাকায় দেউলিয়াত্ব ঠেকাতে কাউন্সিল ট্যাক্স ২৫% পর্যন্ত বাড়ানোর অনুমতি দিতে পারে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম।
গবেষণা অনুসারে, দরিদ্রতম ২০% পরিবারের আয় থেকে ৪.৮% কাউন্সিল ট্যাক্সে ব্যয় হচ্ছে, যা ধনীতম ২০% পরিবারের তুলনায় তিন গুণ বেশি (১.৫%)।
এই কর বৃদ্ধির পেছনে অন্যতম কারণ হলো ২০১৩ সালে কনজারভেটিভ-লিবারেল ডেমোক্র্যাট জোট সরকারের অধীনে কাউন্সিল ট্যাক্স সুবিধার (Council Tax Benefit) বিলুপ্তি এবং বিভিন্ন অঞ্চলে কর রেয়াত ধীরে ধীরে বাতিল হওয়া।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, কর বৃদ্ধির এই প্রবণতা ধীরে ধীরে সেই সমস্যাগুলো ফিরিয়ে এনেছে, যা একসময় “পোল ট্যাক্স” বাতিলের কারণ হয়েছিল।
থ্যাচার সরকার “পোল ট্যাক্স” (আনুষ্ঠানিকভাবে “কমিউনিটি চার্জ”) চালু করেছিল, যা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের জন্য সমান হারে ধার্য হতো। এটি প্রথমে স্কটল্যান্ডে, পরে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে স্থানীয় সরকার তহবিল সংগ্রহের জন্য চালু করা হয় এবং এটি পুরোনো গৃহস্থালি কর ব্যবস্থার জায়গা নেয়। যেখানে উচ্চমূল্যের সম্পত্তির মালিকদের বেশি কর দিতে হতো। কিন্তু ব্যাপক জনঅসন্তোষ ও ট্রাফালগার স্কয়ারে দাঙ্গার কারণে এই করব্যবস্থা মার্গারেট থ্যাচারের শাসনের পতনের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৯০ সালে থ্যাচারের পদত্যাগের পর, জন মেজর সরকার ১৯৯৩ সালে “কাউন্সিল ট্যাক্স” ব্যবস্থা চালু করে, যা এক ধরনের সমঝোতামূলক ব্যবস্থা ছিল।
রেজোলিউশন ফাউন্ডেশনের অর্থনীতিবিদ ললিতা ট্রাই বলেছেন, “দরিদ্র পরিবারগুলোর বাজেটে কাউন্সিল ট্যাক্সের বোঝা ক্রমশ বাড়ছে, তারা এই ট্যাক্সের জন্য প্রায় তাদের আয়ের সমপরিমাণ পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে, যতটা তারা আয়কর দেয়। এটি এতটাই খারাপভাবে ডিজাইন করা যে এটি এখন সেই করের মতো হয়ে উঠছে, যা একসময় বাতিল করা হয়েছিল – কুখ্যাত ‘পোল ট্যাক্স’।”
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইংল্যান্ডের একাধিক কাউন্সিল আর্থিক সংকটের কারণে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে, যার ফলে কাউন্সিল ট্যাক্স ব্যবস্থা বিশেষভাবে নজরদারির আওতায় এসেছে। সামাজিক সেবার ব্যয় বাড়তে থাকায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলোর ওপর অর্থনৈতিক চাপও বৃদ্ধি পেয়েছে।
রেজোলিউশন ফাউন্ডেশন সতর্ক করে বলেছে, ভবিষ্যতে দরিদ্র পরিবারগুলোর আয়ের ওপর কাউন্সিল ট্যাক্সের বোঝা আরও বাড়তে পারে। ইংল্যান্ডে আগামী বছরে প্রাথমিক কাউন্সিল ট্যাক্স বিল ৪.৯৯% পর্যন্ত বাড়তে পারে, এবং ছয়টি কাউন্সিল (লেবার-শাসিত ব্রাডফোর্ড, নিউহ্যাম ও ট্রাফোর্ড, এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাট-শাসিত উইন্ডসর, ম্যাডেনহেড ও সমারসেট) ৯.৯৯% পর্যন্ত কর বাড়ানোর অনুমতি পাবে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫