21 C
London
May 10, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও বরিস জনসন বিতর্কিত মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন

যুক্তরাজ্যের একটি সরকারী গোপন নথি অনুযায়ী, কেন্টে ছোট নৌকায় আগতদের জন্য বিতর্কিত প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে সংঘটিত কেলেঙ্কারির তদন্তে যুক্তরাজ্যের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রীদের সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ডাকা হতে পারে। এই তথ্য দ্য গার্ডিয়ান-এর প্রতিবেদনে সামনে আসে যা একটি আইনি চ্যালেঞ্জের পর প্রকাশ্যে আসে।

ম্যানস্টন ছিল একটি প্রাক্তন সামরিক ঘাঁটি এবং যেখানে চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসা মানুষদের অস্থায়ীভাবে আটকে রাখা হতো। নথিতে বলা হয়েছে এই ঘটনা স্বরাষ্ট্র দপ্তরের জন্য ভাবমূর্তি বিনষ্টকারী হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে।

সাক্ষ্য দানে তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং ঋষি সুনাক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল, গ্রান্ট শ্যাপস এবং সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেন ওয়ালেস এবং অন্যান্য সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা ও মন্ত্রীগণ।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ম্যানস্টন আশ্রয়প্রার্থীদের গ্রহণ করা শুরু করে। ২০২২ এর গ্রীষ্ম নাগাদ এই আশ্রয়কেন্দ্রটি অতিরিক্ত চাপের মধ্যে পড়ে—১,৬০০ জনের জন্য নির্মিত স্থানে ৪,০০০ জনকে এখানে রাখা হয়।

খারাপ অবস্থার ফলে ডিপথেরিয়া ও স্ক্যাবিসের মতো সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ে এবং ইরাকের ৩১ বছর বয়সী হুসেইন হাসীব আহমেদ ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বন্দিদের নামের পরিবর্তে তাদের হাতে দেওয়া নম্বরযুক্ত ব্যান্ড দিয়ে তাদের চিহ্নিত করা হতো এই আশ্রয়কেন্দ্রে।

২০২৪ সালের শুরুতে, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি ম্যানস্টনে কী ভুল হয়েছে সে বিষয়ে একটি পাবলিক ইনকোয়ারি করার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ইয়েভেট কুপার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হলে তিনি তদন্তটি সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেন।

পরবর্তীতে কুপারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিচারিক পুনঃমূল্যায়ন (জুডিশিয়াল রিভিউ) শুরু হয়।

এই মামলার শুনানির সময়, একজন আইনজীবী একটি সরকারী নথির উল্লেখ করেন। এটি ছিল কুপারকে ম্যানস্টনের মূল বিষয়গুলোর বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া একটি তথ্য নোট।

গার্ডিয়ান, বিবিসি ও ইন্ডিপেনডেন্ট পরবর্তীতে আদালতের নিকট নথিটি প্রকাশের আবেদন করে এবং বিচারক ল্যাং ওই নথি গণমাধ্যমকে দেওয়ার আদেশ দেন।

বিচারক বলেন, “আমি সন্তুষ্ট যে তথ্য প্রকাশ হলে তা উন্মুক্ত ন্যায়বিচারকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং বিষয়টি জনস্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ।”

২৪ জুলাই ২০২৪ তারিখের ওই আট পৃষ্ঠার নথিতে ১৬ জন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর তালিকা রয়েছে যাদেরকে সম্ভাব্যভাবে সাক্ষ্য দিতে বলা হতে পারে। এতে জনসন, সুনাক, প্যাটেল, শ্যাপস, ব্র্যাভারম্যান ও ওয়ালেস ছাড়াও পাঁচজন প্রাক্তন অভিবাসন মন্ত্রী, এবং মন্ত্রিপরিষদ অফিস, এইচএম ট্রেজারি ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বর্তমান স্থায়ী সচিব, প্রাক্তন সচিব, বর্তমান ও প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল এবং বিভিন্ন বিভাগীয় কর্মকর্তা রয়েছেন।

তথ্য নোটে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতের তদন্তের প্রস্তুতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন উপদেষ্টারা পরিচালনা করছেন।

নথিতে বলা হয়েছে, স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য একটি “প্রাথমিক কালপঞ্জি” তৈরি করা হয়েছে যাতে প্রাসঙ্গিক নথি পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশ করা যায়। তাতে বলা হয়েছে, “ম্যানস্টনের পরিস্থিতি নিয়ে তদন্ত যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে পারে।”

তদন্তে পাঁচটি মূল বিষয় বিশ্লেষণ করা হবে:
১. ১৯ নভেম্বর ২০২২-এ আহমেদের হেফাজতে মৃত্যু
২. মে থেকে নভেম্বর ২০২২ পর্যন্ত প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের অবৈধ আটক
৩. অনাথ শিশুদের জন্য হোটেল ব্যবহারের অবৈধতা
৪. ২১ অক্টোবর ও ৬ ডিসেম্বরের অফিসারদের বিরুদ্ধে চুরি ও দুর্নীতির অভিযোগ
৫. নিরাপত্তা ও কল্যাণ সংক্রান্ত উদ্বেগ

আলাদাভাবে ১৮টি অভিযোগ এবং উদ্বেগ উত্থাপন করেছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন, যেমন: ক্যান্টারবুরির আর্চবিশপ, ব্রিটিশ রেড ক্রস, ইমিগ্রেশন সার্ভিস ইউনিয়ন, কারাগারে মৃত্যু সম্পর্কিত পরামর্শ প্যানেল, থানেট কাউন্সিল, NHS কেন্ট ও মেডওয়ে, HM প্রধান কারাগার পরিদর্শক, এবং অভিবাসীদের কল্যাণ বিষয়ক যৌথ পরিষদ।

তুলে ধরা অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে: জীবন হুমকিতে ফেলা, রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে অবহেলা, অবৈধ বন্দিত্ব, নির্যাতন, মানবাধিকারের লঙ্ঘন, জিনিসপত্র জব্দ, অতিরিক্ত বল প্রয়োগ, অগ্নি ও খাদ্য নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘন, টয়লেট ও হাত ধোয়ার সুবিধার অভাব।

২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে ম্যানস্টনের ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে গত মাসে সোফি কার্টরাইট কেসির নেতৃত্বে। এটি ১ জুন থেকে ২২ নভেম্বর ২০২২ পর্যন্ত ম্যানস্টনের পরিস্থিতি, আশ্রয়প্রার্থীদের প্রতি আচরণ এবং ওই সময়ে আরও কী ব্যবস্থা নেয়া যেত তা খতিয়ে দেখবে। তথ্যমতে জানা যায় কিছু শুনানি জনসম্মুখেও হতে পারে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন: “তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জুন থেকে নভেম্বর ২০২২ পর্যন্ত ম্যানস্টনের ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দেন। যা পূর্বসূরিদের প্রতিশ্রুতি ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। তদন্ত এখন চলবে এবং আমরা এটি সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করছি, তবে এই মামলা চলাকালীন সময়ে এই বিষয়ে আর মন্তব্য করা অনুচিত হবে।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
০৭ এপ্রিল ২০২৫

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যে বাড়ি নিয়ে বাড়িওয়ালাদের দুর্বৃত্তায়ন

ক্যানসার আক্রান্তের পর প্রথমবার জনসম্মুখে ব্রিটিশ রাজবধূ ক্যাথরিন

ইংল্যান্ডের এনএইচএস হাসপাতাল ট্রাস্ট লেবার সরকারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ