যুক্তরাজ্যে অভিবাসন এবং আশ্রয় ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসাবে, সরকার অবৈধ কর্মসংস্থান দমন করতে কঠোর নতুন আইন প্রবর্তন করতে চলেছে।
গিগ ইকোনমি অর্থাৎ ফ্রিল্যান্সারদের কর্মে নিয়োগ করা সংস্থাগুলিকে এখন কর্মীদের আইনত বাধ্যবাধকতা যাচাই করতে হবে। তাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কাজ করা ব্যক্তিরা যুক্তরাজ্যে কাজ করার যোগ্য কি না, তা যাচাই করতে নতুন নিয়ম আনতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য সরকার। এই গুরুত্বপূর্ণ যাচাই প্রক্রিয়াগুলি মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে যাচাই সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া চালু করতে যাচ্ছে সরকার।
এর ফলে প্রথমবারের মতো কর্মসংস্থান যাচাই প্রক্রিয়ার আওতা প্রসারিত করা হবে। যা নির্মাণ, খাদ্য সরবরাহ, বিউটি পার্লার, সেলুন এবং কুরিয়ার পরিষেবার মতো খাতগুলি সহ ফ্রিল্যান্সিং এবং জিরো-আওয়ার্স কর্মীদের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে অন্তর্ভুক্ত করবে।
বর্তমানে, হাজারো প্রতিষ্ঠান যারা নমনীয় কর্মসংস্থান ব্যবস্থা ব্যবহার করে তারা আইনত কর্মীদের কাজ করার অধিকার যাচাই করতে বাধ্য নয়। তবে, এখন থেকে এটি পরিবর্তন হবে।
যেসব ব্যবসা এই যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হবে, তারা ইতিমধ্যে প্রচলিত অবৈধ কর্মসংস্থানের জন্য বিদ্যমান কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হবে। যার মধ্যে প্রতিটি অবৈধ কর্মীর জন্য £৬০,০০০ পাউন্ড পর্যন্ত জরিমানা, ব্যবসা বন্ধ, পরিচালক অযোগ্য ঘোষণা এবং সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
অবৈধ কর্মসংস্থান যাচাই প্রক্রিয়ার সম্প্রসারণ সকল ব্যবসাগুলোর জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে সহায়তা করবে। যেমন, Deliveroo, Just Eat এবং Uber Eats ইতিমধ্যেই স্বেচ্ছায় যাচাই প্রক্রিয়া পরিচালনা করে নিশ্চিত করছে তাদের ডেলিভারি রাইডাররা যুক্তরাজ্যে কাজের জন্য যোগ্য।
অবৈধ কর্মসংস্থান বন্ধ করা সরকারের বৃহত্তর অভিবাসন ব্যবস্থা জোরদার করার পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যা কঠোর নিয়ম প্রয়োগের মাধ্যমে মানব পাচারকারীদের দমন করবে, যারা অভিবাসীদের মিথ্যা কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দেয়।
এই ঘোষণাটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন যুক্তরাজ্য প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক সংগঠিত অভিবাসন অপরাধ শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করছে, যেখানে ৪০টিরও বেশি দেশ মানব পাচারকারী চক্রের কৌশল মোকাবিলায় নজিরবিহীন নতুন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার বলেছেন:
“আমাদের পরিবর্তনের পরিকল্পনার অধীনে, আমরা অভিবাসন এবং আশ্রয় ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কঠোর আইন প্রবর্তন করছি এবং কঠোর প্রয়োগমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করছি যাতে অবৈধ কর্মসংস্থান রোধ করা যায় এবং অনিয়মিত নিয়োগকারীদের থামানো যায়।
অবৈধ কর্মসংস্থানের প্রতি চোখ বন্ধ করে রাখা নিষ্ঠুর মানব পাচারকারীদের সুবিধা দেয়।”
এই নতুন আইনগুলি সংগঠিত অভিবাসন অপরাধ প্রতিরোধ এবং আমাদের সীমান্তের সুরক্ষা জোরদার করার সরকারের চলমান প্রচেষ্টার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে অবৈধ কর্মসংস্থানের বিরুদ্ধে অভিযান ও গ্রেফতার বৃদ্ধির পাশাপাশি, যারা যুক্তরাজ্যে থাকার অধিকার নেই তাদের প্রত্যাবাসনের হার অর্ধ-দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ফ্রিল্যান্সিং শিল্পের প্রতিক্রিয়াঃ
জাস্ট ইট ইউকে এবং আয়ারল্যান্ডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ক্লেয়ার পয়েন্টন বলেছেন:
“জাস্ট ইট উচ্চ সুরক্ষিত কর্মসংস্থান ব্যবস্থা ও বিতরণ খাত নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অননুমোদিত কাজ প্রতিরোধ করা এর একটি প্রধান অংশ, এজন্য আমরা বায়োমেট্রিক যাচাই প্রক্রিয়া চালু করছি যাতে অবৈধ কর্মীরা দ্রুত অপসারিত হয়।”
ডেলিভারু’র মুখপাত্র বলেছেন:
“ডেলিভারু অবৈধ কর্মসংস্থান থেকে সুরক্ষিত করতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে। আমরা সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই যাতে সকল খাত একই মান বজায় রাখে।”
উবার ইট’সের মুখপাত্র বলেছেন:
“উবার ইট’স অবৈধ কর্মসংস্থান ও এর সাথে জড়িত অপরাধী নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই।”
এই যাচাই প্রক্রিয়াটি কয়েক মিনিটের মধ্যেই সম্পন্ন করা যায় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করে, যেখানে ব্যবসাগুলি ডিজিটাল আইডি যাচাই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে।
নতুন আইনগুলো নভেম্বর মাসে ঘোষিত সেই পদক্ষেপগুলোর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে, যেখানে অভিবাসন প্রয়োগকারী দলগুলিকে নতুন প্রযুক্তি সরবরাহ করা হয়েছে। মে মাস থেকে, অবৈধ কর্মসংস্থান দমনের জন্য সামনের সারির অফিসারদের দেহে পরিধানযোগ্য ক্যামেরা চালু করা হবে, যা আদালতে প্রসিকিউশনের জন্য প্রমাণ সংগ্রহের সহায়তা করবে।
এছাড়াও, জুলাই থেকে অভিবাসন প্রয়োগকারী দল ৬,৭৮৪টি অবৈধ কর্মসংস্থান সংক্রান্ত পরিদর্শন পরিচালনা করেছে এবং ৪,৭৭৯টি গ্রেফতার করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় যথাক্রমে প্রায় ৪২% বৃদ্ধি পেয়েছে।
সাম্প্রতিক আইনগত সংস্কারগুলোর মধ্যে আরও কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে, যা বিদেশি অপরাধীদের জন্য আরও কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবে। যার মধ্যে ইলেকট্রনিক ট্যাগিং, নাইট টাইম কারফিউ এবং নিষিদ্ধ অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত। এই শর্ত ভঙ্গ করলে গ্রেফতার করা হতে পারে এবং কারাদণ্ডের সম্মুখীন হতে হবে।
এই ব্যবস্থাগুলো নিশ্চিত করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবৈধ অভিবাসীদের ওপর নিবিড় নজর রাখছে এবং তাদের যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হওয়া রোধ করবে, কারণ সরকারের মূল লক্ষ্য তাদের প্রত্যাবাসন।
৩১ মার্চ ২০২৫, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেছেন।
এই শীর্ষ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ব্যবসায় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শ্রম শোষণ বিরোধী সংস্থা এবং জাতীয় অপরাধ সংস্থার শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে একটি রাউন্ডটেবিল আলোচনা হয়।
এর লক্ষ্য হল বিশ্বব্যাপী প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করা এবং সংগঠিত অভিবাসন অপরাধ চক্রগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা তীব্র করা।
সূত্রঃ ইউকে ডট গভ
এম.কে
০১ এপ্রিল ২০২৫