ড. জো ওয়াইল্ডিং-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন “নো অ্যাক্সেস টু জাস্টিস ২” যুক্তরাজ্যজুড়ে চলমান অভিবাসন ও আশ্রয় সংক্রান্ত আইনি সহায়তা সংকটের ওপর আলোকপাত করেছে। এটি তার ২০২২ সালের প্রতিবেদনের হালনাগাদ সংস্করণ, যেখানে অঞ্চলভিত্তিক চাহিদা ও সেবা সরবরাহ বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
২০২২ সালের প্রতিবেদনে শুধু লন্ডনেই সামান্য পরিমাণে অভিবাসন ও আশ্রয় সংক্রান্ত আইনি পরামর্শের অতিরিক্ত সরবরাহ ছিল। কিন্তু এখন লন্ডনেও চাহিদা সরবরাহকে ছাড়িয়ে গেছে, ফলে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের প্রতিটি অঞ্চলে এই ঘাটতি বিদ্যমান। উত্তর আয়ারল্যান্ডে আশ্রয় সংক্রান্ত পরামর্শে ঘাটতি রয়েছে। স্কটল্যান্ডে সামগ্রিকভাবে ঘাটতি না থাকলেও, সেখানে পরামর্শদানের কেন্দ্রভিত্তিক (বিশেষত গ্লাসগোতে) অবস্থানের কারণে নতুন আবেদন ও শরণার্থী পরিবার পুনর্মিলনের ক্ষেত্রে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।
এই খাতে জনবল নিয়োগ ও ধরে রাখার সংকট এখনও অব্যাহত, বিশেষ করে অভিজ্ঞ সুপারভাইজারদের ঘাটতি গুরুতর সমস্যা তৈরি করছে। নতুন কর্মী প্রশিক্ষণের জন্য সুপারভাইজার অপরিহার্য হওয়ায়, তাদের অভাব সরাসরি ক্ষমতা বৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ঘাটতির ফলে আগের দুটি আইনি সহায়তা চুক্তি আবেদনের রাউন্ডে অনেক সংস্থাই অংশ নিতে পারেনি।
ড. জো ওয়াইল্ডিং উল্লেখ করেছেন, বর্তমানে যে পরিমাণ ফি নির্ধারিত আছে তা এখনও খুবই কম। প্রস্তাবিত বৃদ্ধির পরেও তা এই খাতে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট নয়। মূল্যস্ফীতির সাথে ফি যেন নিয়মিত সমন্বয় হয় – এ ধরনের কোনো ব্যবস্থার অভাবকেও একটি বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে দূরবর্তী অ্যাক্সেস নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে: ভৌগোলিক সীমা তুলে নেওয়ার ফলে কিছু আইনজীবী সহজ কেস যেমন উচ্চ স্বীকৃতির দেশ থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন বা শরণার্থী হিসেবে পাঁচ বছর থাকার পর সেটেলমেন্ট আবেদনে আগ্রহ দেখালেও জটিল কেসগুলো নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন।
এআই-বিরোধী হিসেবে, প্রতিবেদকের মতে এই খাতে এখনো জেনারেটিভ এআই-কে সমাধানের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি।
প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যব্যাপী কিছু সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আলাদাভাবে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস, স্কটল্যান্ড এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের জন্যও নির্দিষ্ট সুপারিশ রয়েছে।
হোম অফিসের জন্য সুপারিশঃ
*সব প্রক্রিয়া সরল করুন যাতে আইনি পরামর্শের প্রয়োজন কমে যায়।
*”হোস্টাইল এনভায়রনমেন্ট” নীতিমালাগুলোর প্রভাব পর্যালোচনা করুন, যেগুলো স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, জনসেবা সংস্থা ও ব্যক্তির ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং অতিরিক্ত আইনি পরামর্শের প্রয়োজন তৈরি করে।
*যেসব দেশ থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের স্বীকৃতি অনায়াসে মেলে, তাদের জন্য সহজকৃত প্রক্রিয়া চালু করুন – যাতে লেখা ফর্ম বা মূল সাক্ষাৎকারের প্রয়োজন না হয়। এতে আইনি প্রতিনিধিত্বের প্রয়োজন যেমন কমবে, তেমনি হোম অফিস কর্মীরাও জটিল কেসে মনোযোগ দিতে পারবে।
*দীর্ঘমেয়াদি অবস্থান বা পারিবারিক সম্পর্কের কারণে যেসব মানুষ যুক্তরাজ্যে থাকতে পারেন, তাদের জন্য ১০ বছরের পরিবর্তে ৫ বছরের বা দুটো ৫ বছরের আবাসিক পথ চালু করুন। এতে আইনি ও প্রশাসনিক কাজের চাপ কমবে।
*ইইউ সেটেলমেন্ট স্কিম থেকে শিক্ষা নিয়ে স্বয়ংক্রিয় নবায়ন ও আপগ্রেড পদ্ধতি প্রয়োগ করুন এবং অন্যান্য ভিসা প্রক্রিয়াও সহজ করার উপায় খুঁজে দেখুন।
আসাইলাম ও ইমিগ্রেশন ট্রাইব্যুনালের জন্য সুপারিশঃ
*ট্রাইব্যুনালে প্রতিনিধিহীন (unrepresented) আবেদনকারীর সংখ্যা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন এবং তথ্য উন্মুক্ত করুন।
*যেসব আবেদনকারী আইনজীবী ছাড়া হাজির হন তাদের কারণে ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত খরচ (শুনানির সময় বৃদ্ধি, পূর্ব-শুনানির কাজ, মুলতবি ইত্যাদি) ট্র্যাক করুন।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের জন্য সুপারিশঃ
*‘It’s a No Brainer’ প্রতিবেদনের আলোকে, এলাকার চাহিদা অনুযায়ী আইনি সহায়তা ও কেসওয়ার্ক সেবা অর্থায়নের পরিকল্পনা করুন।
*আশ্রয়প্রার্থী ও অভিবাসন সংক্রান্ত সমস্যা থাকা মানুষের আইনি প্রতিনিধিত্বের অভাব পর্যবেক্ষণ করুন – বিশেষ করে কতজন অনাথ শিশু ও আশ্রয় সহায়তা গ্রহণকারীর কোনো প্রতিনিধি নেই এবং কেউ পেতে তাদের কত সময় লাগে।
*আইনি পরামর্শ না পাওয়ার কারণে সৃষ্ট ব্যয় যেমন খাদ্য সহায়তার প্রয়োজন, হাসপাতালে থেকে যেতে বাধ্য হওয়া, জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি, রাফ স্লিপিং ইত্যাদির তথ্য সংগ্রহ করুন – যাতে এসব খাতে সঠিক সেবা নিশ্চিতে শক্তিশালী প্রমাণ তৈরি হয়।
*NRPF Connect ডেটাবেসে এখনও সদস্য না হলে, এতে যুক্ত হওয়া বিবেচনা করুন।
সূত্রঃ ফ্রি মুভমেন্ট
এম.কে
১৩ জুন ২০২৫