21.6 C
London
July 14, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে আইসিইউতে ভর্তি হওয়া সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী ও দরিদ্র শিশুদের মৃত্যুহার বেশি

যুক্তরাজ্যের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিকিউ – PICU) ভর্তি হওয়া সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী ও দরিদ্র পটভূমির শিশুদের মৃত্যুর ঝুঁকি শ্বেতাঙ্গ ও সুবিধাপ্রাপ্ত শিশুদের তুলনায় অনেক বেশি — এমনই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের এক গবেষণায়।

গবেষণাটি ২০০৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়কালে সারা যুক্তরাজ্যজুড়ে ১ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি গুরুতর অসুস্থ ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুর তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। এটি পরিচালনা করেছে হেলথকেয়ার কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট পার্টনারশিপ।

গবেষণায় দেখা গেছে, সংখ্যালঘু শিশুদের পিকিউতে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি হওয়ার প্রবণতা বেশি এবং মৃত্যুঝুঁকিও তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। এশিয়ান শিশুদের মধ্যে মৃত্যুহার ছিল শ্বেতাঙ্গ শিশুদের তুলনায় ৫২ শতাংশ বেশি। ২৬,০২২টি ভর্তি থেকে ১,৩৩৬টি মৃত্যু হয়েছে এশিয়ান শিশুদের মধ্যে, যেখানে শ্বেতাঙ্গ শিশুদের মধ্যে ১,৫৪,০৪১টি ভর্তি থেকে মৃত্যু হয়েছে ৪,৯৬০ জনের।

অন্যদিকে, শিশু দরিদ্রতা বেশি এমন এলাকায় বসবাসকারী শিশুদের মধ্যেও মৃত্যুঝুঁকি ১৩ শতাংশ বেশি পাওয়া গেছে। ৫৮,১১০টি ভর্তি থেকে মৃত্যু হয়েছে ২,৪৩২ জন শিশুর।

গবেষণার প্রধান লেখক ডা. হান্না মিচেল বলেন, এই বৈষম্যের পেছনে কাঠামোগত কারণ থাকতে পারে যেমন বর্ণবৈষম্য ও ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা। এগুলো শিশুদের সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিতে বাধাগ্রস্ত করে।

গবেষণার সিনিয়র লেখক অধ্যাপক পদ্মনাভন রামনারায়ণ বলেন, “এই শিশুরা স্বাস্থ্যসেবার ভেতরে ও বাইরে বৈষম্যের শিকার হতে পারে, যার ফলে তারা দেরিতে চিকিৎসা নেয় বা সাহায্য চাইতে দ্বিধা করে। ভাষার জটিলতা বিষয়টিকে আরও খারাপ করে।”

তিনি আরও বলেন, “সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর অনেক শিশুর মধ্যে জটিল বা প্রাণঘাতী রোগ বেশি দেখা যায়। দরিদ্র শিশুদের মধ্যে অ্যাজমা বা দুর্ঘটনাজনিত আঘাতের মতো গুরুতর অসুস্থতা বেশি হয়ে থাকে, এবং তারা সময়মতো চিকিৎসা নিতে পারে না।”

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, সংখ্যালঘু শিশুদের পিকিউতে গড় অবস্থানকাল ছিল ৬৬ ঘণ্টা, যেখানে শ্বেতাঙ্গ শিশুদের গড় ছিল ৫২ ঘণ্টা। এছাড়া, ছাড়পত্রের ৬০ দিনের মধ্যে আবারও পিকিউতে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ভর্তি হওয়ার হার সংখ্যালঘু শিশুদের মধ্যে ছিল ৯ শতাংশ, যেখানে শ্বেতাঙ্গ শিশুদের মধ্যে তা ছিল ৬.৮ শতাংশ।

অধ্যাপক রামনারায়ণ বলেন, “একজন শিশুর জাতিগোষ্ঠী বা পোস্টকোড তার চিকিৎসার ফলাফল নির্ধারণ করবে — এটা হওয়া উচিত নয়। জরুরি চিকিৎসায় প্রবেশাধিকার, বাধা দূর করা এবং হাসপাতাল ও কমিউনিটি কেয়ারের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।”

ব্রিটিশ সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, “এই সরকার স্বাস্থ্যগত বৈষম্য দূর করতে কাজ করছে। মানুষের ভবিষ্যৎ জীবনমান নির্ধারিত হওয়া উচিত নয় তাদের বাসস্থান বা গায়ের রঙ দেখে।”

তিনি আরও জানান, “১০ বছরের হেলথ প্ল্যানের মূল লক্ষ্যই হলো সকলের জন্য প্রথম শ্রেণির চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং পোস্টকোড ভিত্তিক বৈষম্য বন্ধ করা। ইতোমধ্যে কোটি কোটি পাউন্ড এমন এলাকায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যেখানে স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
১৪ জুলাই ২০২৫

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় বাণিজ্য অঞ্চলে যোগ দিতে পারেঃ যুক্তরাজ্যের বানিজ্য সচিব

ব্রিটিশ পুলিশ আর বিএমডব্লিউর গাড়ি পাবে না

আবাসন সমস্যার কারণে বিপর্যস্ত যুক্তরাজ্য