যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের আবেদন যে হারে পড়ছে আবেদন যাচাই বাছাই সেই হারে হচ্ছে না৷ ফলে চলতি বছরের শুরুতে সরকারি হিসেব জানাচ্ছিল, এক লাখ ৭৫ হাজারের বেশি আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে৷ তার মধ্যে কয়েক হাজার অভিভাবকহীন শিশুর আশ্রয়ের আবেদনও রয়েছে৷
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, দেশটিতে আশ্রয়ের আবেদন করা কয়েক হাজার অভিভাবকহীন শিশু অনিশ্চিত জীবনযাপন করছে৷ কেননা, তাদের আশ্রয়ের আবেদন এখনও চূড়ান্ত হয়নি৷ তাদের কেউ কেউ কয়েক বছর ধরে অপেক্ষায় রয়েছে৷
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, আশ্রয় আবেদন সুরাহার আশায় ২০২০ সালেই সাড়ে সাত হাজারের বেশি শিশু এক বছরের বেশি সময় ধরে অপেক্ষায় ছিল৷ যেসব শিশু পরিবারের কোনো সদস্য বা অভিভাবক ছাড়াই অন্য কোনো দেশে আশ্রয় নেয়ার জন্য পৌঁছায় তাদেরকে অভিভাবকহীন শিশু হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷
যুক্তরাজ্যের শরণার্থী পরিষদ এক বিবৃতিতে লিখেছে, ‘‘আমরা এই শিশুদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে জেনেছি যে তারা নিজেদের কোনো দোষের কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়নি৷ তারা এখানে পৌঁছানোর সময় গভীরভাবে মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত ছিল, কারো কারো শারীরিক আঘাতও ছিল৷’’
আবেদন প্রক্রিয়া যাচাই বাছাইয়ে দীর্ঘ সময় লাগার বিষয়টি এই শিশুদের উপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে বলেও মনে করছে শরণার্থী পরিষদ৷
‘‘আমাদের সঙ্গে কথা বলা শিশুরা জানিয়েছে যে তারা উদ্বেগ, ভীতি এবং একাকিত্ব অনুভব করছে৷ এবং আমরা তাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন,’’ জানিয়েছে পরিষদ৷
পরিসংখ্যান বলছে, যুক্তরাজ্যে বর্তমানে আশ্রয় আবেদন যাচাই বাছাইয়ের অপেক্ষায় থাকা শিশুদের মধ্যে ৫৭ জন পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছে৷ ২০২০ সালে এই সংখ্যা ছিল পাঁচ জন এবং ২০২২ সালে ৩৫ জন৷
যুক্তরাজ্য শরণার্থী পরিষদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দেশটিতে আশ্রয় আবেদনের ফল পেতে অপেক্ষায় থাকা অভিভাবকহীন শিশুর সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার ১৫২ জন৷ তাদের অধিকাংশই সুদান থেকে এসেছে এবং তাদের বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে৷
সুদানে গত ১৫ এপ্রিল থেকে দেশটির সরকারি বাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনী ব়্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত চলছে৷ জাতিসংঘের হিসেবে দেশটির ৫৮ লাখ বাসিন্দা সংঘাতের কারণে ইতোমধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন৷
আফ্রিকার উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় এই দেশটির ৪৭ শতাংশ জনসংখ্যাই শিশু৷ দেশটির তরুণ সম্প্রদায়ের এক তৃতীয়াংশ, যাদের বয়স ১৫ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে, তারা বেকার৷ বিশেষ করে বয়সে অপেক্ষাকৃত তরুণ পুরুষেরা বেশি সংখ্যক বেকার৷
সুদানের পাশাপাশি ইরান, ইরিত্রিয়া, আফগানিস্তান, ভিয়েতনাম, ইরাক, আলবেনিয়া, ইথিওপিয়া এবং সিরিয়া থেকে আসা অনেক অভিভাবকহীন শিশুও যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের আবেদন করেছে৷
এম.কে
১২ নভেম্বর ২০২৩