যুক্তরাজ্যে এইএইচএস কর্তৃক ঝুঁকিমুক্ত ভাবে রক্ত নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা না করায় নতুন কেলেঙ্কারির জন্ম নিয়েছে। রক্ত সংক্রমণের ঘটনা হতে বহু মানুষের মাঝে নানা ধরনের রোগ ছড়িয়ে পড়েছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানা যায়। কর্তৃপক্ষ জেনেশুনে ভুক্তভোগীদের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে বলে অনেকে মতামত জানান।
পাঁচ বছরের দীর্ঘ তদন্তে দেখা যায় চিকিৎসক, সরকার এবং এনএইচএসের গাফিলতির কারণে রক্ত সংক্রমণে অনেক ব্যক্তির শরীরে এইচআইভি এবং হেপাটাইটিসের মতো মরণব্যাধি রোগ সংক্রমিত হয়ে পড়েছে।
দূষিত রক্ত হতে সুস্থ লোকের শরীরে সংক্রমিত হয়ে পড়েছে গত বিশ বছরে প্রায় ত্রিশ হাজারেরও বেশি মানুষ। যাদের মধ্যে প্রায় ৩,০০০ হাজার ইতোমধ্যে মৃত্যু মুখে পতিত হয়েছেন।
সংক্রামিত রক্ত নিয়ে তদন্তে বলা হয়েছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক, এনএইচএস সেবা কর্মী , সরকার বারবার ব্যর্থ হয়েছে মানুষদের নিরাপত্তা প্রদানে। তাই এই দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে কারণ চিকিৎসক ও এনএইচএস সরকারেরই নিয়ন্ত্রণে থাকে।
সরকার ১৯৮৩ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের শীর্ষ সংক্রামক-রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ স্পেন্স গ্যালব্রাইথের সতর্কতা উপেক্ষা করে আসছে। যেখানে ডাঃ গ্যালব্রাইথ এইচআইভি জীবাণু রক্তে আছে কিনা তা চিহ্নিত না হওয়া পর্যন্ত আমেরিকা হতে আমদানি করা সকল রক্ত প্রত্যাহারের কথা বলেছিলেন।
হেপাটাইটিসের ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য ১৯৭০ সাল থেকে ব্লাড স্ক্রিনিংয়ের প্রতি তিনি জোর দিয়ে আসছেন যদিও সরকার বা এনএইচএস তার কোন কথা গুরুত্ব সহকারে নেয় নাই।
তদন্তের সভাপতিত্বকারী স্যার ব্রায়ান ল্যাংস্টাফ বলেছেন, এই কেলেঙ্কারির মাত্রাটি ভয়াবহ ছিল এবং কর্তৃপক্ষ ঝুঁকির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ছিল খুব ধীর। এই কেলেঙ্কারীটি জীবন, স্বপ্ন, বন্ধুত্ব, পরিবার এবং আর্থিক অবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। কত লোক নিজের অজান্তেই সংক্রমিত হয়ে পড়েছে ঝুঁকির ব্যবস্থা বা ব্লাড স্ক্রিনিং না করানোর জন্য। তাই অজুহাত দিয়ে সেই হারিয়ে যাওয়া মানুষ যারা মারা গিয়েছে তাদের ফেরত পাওয়া যাবে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে বিদেশ থেকে রক্তের পণ্যগুলি অবিরত আমদানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো উচ্চ -ঝুঁকিপূর্ণ দাতাদের দেশ হতে রক্ত আমদানি, বন্দী ও মাদকাসক্তদের রক্ত প্রদানের জন্য অর্থ প্রদান করা সহ নানা ধরনের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে এই রক্ত সম্পর্কিত সংক্রমণ ঘটেছে। এই বিপর্যয় কোনও দুর্ঘটনা ছিল না বরং খামখেয়ালি আচরণ এই বিপদের সৃষ্টি করেছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে এই রক্ত সংক্রমণের ঘটনায় অনেকে শৈশব বা যুবক বয়সে মারা গিয়েছিল। যেহেতু মূল সংক্রমিত ব্যক্তিরা মারা গিয়েছিল তাই এই বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া অনেক কঠিন এবং কোনো ক্ষেত্রে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। স্যার ব্রায়ান তদন্তে জনসাধারণকে বিলম্বে ডাকারও সমালোচনা করেন।
উল্লেখ্য যে, ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে রাজনৈতিক চাপের মধ্যে পড়ে এই রক্ত সংক্রমণ বিষয়ে তদন্তের ঘোষণা করেছিলেন।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
২১ মে ২০২৪