TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে এসাইলাম প্রার্থীদের ইলেকট্রনিক ট্যাগ পরানোর প্রস্তাব

যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের ইলেকট্রনিক ট্যাগ পরানোর প্রস্তাব নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে। সাসেক্সের পুলিশ অ্যান্ড ক্রাইম কমিশনার (পিসিসি) কেটি বর্ন সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন, আশ্রয়প্রার্থীদের—বিশেষ করে পুরুষদের—ইলেকট্রনিক নজরদারির আওতায় আনার বিষয়টি বিবেচনা করতে।

 

কেটি বর্নের দাবি, ট্যাগিং চালু হলে আশ্রয়প্রার্থীরা আটক বা আবাসন কেন্দ্রের বাইরে আরও দূরে যাতায়াতের সুযোগ পাবেন এবং অস্থায়ী কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রেও সুবিধা হবে। তার মতে, এটি একদিকে নজরদারি জোরদার করবে, অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চলাচলের ক্ষেত্রে “বেশি স্বাধীনতা” দেবে।

এই প্রস্তাব সামনে এসেছে এমন সময়ে, যখন সরকার সাসেক্সের ক্রোবরো আর্মি ট্রেনিং ক্যাম্পে সাময়িকভাবে ৫৪০ জন আশ্রয়প্রার্থীকে রাখার পরিকল্পনা করছে। ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে উদ্বেগ রয়েছে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে ২০২৬ সালে।

হোম অফিস জানিয়েছে, ২০১৬ সালের ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী যাদের বহিষ্কারের মুখে পড়তে হচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক নজরদারি বাধ্যতামূলক হতে পারে। তবে যারা বহিষ্কারের আওতায় নেই, তাদের ওপর এমন ব্যবস্থা চাপিয়ে দিলে তা মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে পারে বা বাস্তবসম্মত নাও হতে পারে বলে মন্তব্য করেছে দপ্তরটি।

হোম অফিসের একজন মুখপাত্র জানান, যুক্তিসংগত ক্ষেত্রে বিদেশি নন—এমন অপরাধীদের ওপরও ইলেকট্রনিক ট্যাগিং প্রয়োগ করা হয়। সরকারের দাবি, জননিরাপত্তাই তাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।

সরকার আরও বলেছে, তারা সব আশ্রয় হোটেল বন্ধ করতে চায় এবং কমিউনিটির ওপর চাপ কমাতে আশ্রয়প্রার্থীদের সামরিক ঘাঁটির মতো “আরও উপযুক্ত” আবাসনে স্থানান্তর করছে। একই সঙ্গে প্রত্যেক আশ্রয়প্রার্থীর পরিচয় নিশ্চিত করতে বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা ও বায়োমেট্রিক যাচাই করা হচ্ছে।

কেটি বর্ন বলেন, হাজার হাজার মানুষ যখন আশ্রয় আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকে, তখন তাদের কেউ অপরাধের শিকার বা অপরাধে জড়িত হতে পারে—এটি অনিবার্য। তার ভাষায়, পুলিশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলো এমন মানুষকে খুঁজে বের করা, যাদের যুক্তরাজ্যে খুব কম সরকারি পরিচয় বা ডিজিটাল তথ্য রয়েছে।

২০২৫ সালের শুরুতে সাসেক্স পুলিশ নিয়মিত দোকানচুরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের নিয়ে একটি ইলেকট্রনিক ট্যাগিং পাইলট প্রকল্প চালু করে। বর্ন জানান, সেই প্রকল্পের ফলাফল ছিল “আশাব্যঞ্জক” এবং নজরদারির ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আচরণে পরিবর্তন এসেছে।

তিনি আরও বলেন, কেউ যদি ট্যাগ পরতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে সেটি পালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য বা বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার ইঙ্গিত হতে পারে। নতুন বছরের প্রস্তাব হিসেবে তিনি স্বরাষ্ট্র সচিবকে ক্রোবরোতে আসতে যাওয়া আশ্রয়প্রার্থী পুরুষদের নিয়ে একটি পাইলট প্রকল্প চালুর আহ্বান জানান।
তবে অভিবাসী অধিকার নিয়ে কাজ করা দাতব্য সংস্থা রামফেল এই প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করেছে। সংস্থাটির মতে, কোনো অপরাধের অভিযোগ ছাড়াই আশ্রয়প্রার্থীদের ট্যাগ পরানো নিষ্ঠুর ও শাস্তিমূলক, এবং এতে আরও বেশি সরকারি অর্থ বেসরকারি কোম্পানির হাতে চলে যাবে।

রামফেল বলছে, সরকার যদি সত্যিই ব্যয় কমাতে ও অপরাধ প্রতিরোধ করতে চায়, তাহলে আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় মানুষকে কাজ করার অধিকার দেওয়া উচিত। এতে তারা আনুষ্ঠানিক শ্রমবাজারে যুক্ত হতে পারবে, নিজের খরচ চালাতে পারবে এবং হোটেল বা সামরিক ব্যারাকে রাখার প্রয়োজন কমবে।

এই প্রস্তাব ঘিরে একদিকে নিরাপত্তা ও নজরদারির যুক্তি, অন্যদিকে মানবাধিকার ও মর্যাদার প্রশ্ন—দুই মেরুর টানাপোড়েন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আশ্রয়প্রার্থী নীতিতে সরকার শেষ পর্যন্ত কোন পথে এগোয়, সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে দেশটির রাজনীতি ও মানবাধিকার মহল।

সূত্রঃ বিবিসি

এম.কে

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যের টিপটনে পুরনো লিডল ভেঙে দ্বিগুণ আকারের নতুন সুপারস্টোর নির্মাণ

ডোভারে দীর্ঘ জ্যামে যাত্রীদের বেহাল দশা

অনলাইন ডেস্ক

লন্ডনে অভিবাসন ইস্যুতে পক্ষে-বিপক্ষে তীব্র বিক্ষোভ, দু’জন গ্রেফতার