ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে জন হ্যারিসের একটি নিবন্ধের প্রতিক্রিয়ায় পাঠকেরা মত প্রকাশ করেছেন। যেখানে তিনি ব্রিটিশ জীবনের একটি ‘তিক্ত ও অন্যায্য অভিবাসন নীতি’ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
জন হ্যারিস তার নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন যে ২০২৪ সালের মার্চ মাসে প্রণীত নিয়ম অনুযায়ী নতুন অভিবাসী কেয়ার ওয়ার্কাররা আর তাদের ডিপেন্ডেন্টদের সঙ্গে আনতে পারবেন না।
যার ফলে যুক্তরাজ্যে আসা হাজার হাজার স্বাস্থ্য ও সেবা কর্মীকে তাদের সন্তানদের আনার অনুমতি দেওয়া হয়নি—এদের বেশিরভাগই সিঙ্গেল মা। হ্যারিস তার লেখনীতে উল্লেখ করেন, সাউথ আফ্রিকায় ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (Action for Southern Africa এবং Women of Zimbabwe কর্তৃক) উঠে এসেছে যে জিম্বাবুয়ে ও অন্যান্য দেশ থেকে আসা হাজার হাজার সিঙ্গেল মা তাদের কাজে স্থায়ীভাবে যুক্ত হলেও পরে তাদের সন্তানদের জন্য ভিসা প্রত্যাখ্যান করে যুক্তরাজ্য।
এই সিঙ্গেল মায়েরা— প্রতিদিন যুক্তরাজ্যে আমাদের আপনজনদের যত্ন নিচ্ছেন—কিন্তু বছরের পর বছর তারা তাদের সন্তানদের থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন এবং একাধিকবার ব্যয়বহুল ভিসার আবেদন করতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকক্ষেত্রে অসাধু আইনি পরামর্শদাতাদের দ্বারা শোষিতও হয়েছেন। হোম অফিস তাদের “একক দায়িত্ব” সংক্রান্ত ধারণার ভিত্তিতে আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। এটি যুক্তরাজ্যের ভিসা এবং ইমিগ্রেশন বিভাগ(UKVI) দ্বারা তৈরি একটি জটিল নীতি।
তাছাড়া UKVI কী ধরনের নথি গ্রহণ করবে সে বিষয়ে পরিষ্কার নির্দেশনা নেই, তাদের নিজস্ব নীতিমালার অসঙ্গত প্রয়োগ রয়েছে, এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে দেরি করানো হচ্ছে।
তিনি জানান এর প্রভাব সকলের জন্যই খারাপ। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জিম্বাবুয়ের এক মা দুই বছর ধরে তার দুই কন্যা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। ছয়বার আবেদন করার পর অবশেষে তিনি ভিসা পান। কিন্তু জিম্বাবুয়েতে এখনো হাজারো শিশু অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। যুক্তরাজ্য কেন কেয়ার ওয়ার্কারদের সন্তানদের দীর্ঘ সময় ধরে তাদের মায়েদের নিকট থেকে বিচ্ছিন্ন রাখছে তার কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা নেই। যা উইন্ডরাশ ঘটনার প্রতিধ্বনি হয়ে বারবার ফিরে আসছে।
প্রতিবেদনের পক্ষে মতামত দিতে গিয়ে ওয়েস্ট সাসেক্স ওয়ার্থিংয়ের স্যালি স্মিথ বলেন, আমি প্রতিবেদনের লেখক জন হ্যারিসের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। এনএইচএসের কেয়ার ওয়ার্কার খাতের এই “তিক্ত আইন” নিয়ে হ্যারিসের মতামত আমি সমর্থন করি। গত গ্রীষ্মে, আমার ৯০ বছর বয়সী মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ওয়ার্থিংয়ের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানকার ওয়ার্ড ছিল ভীষণ ব্যস্ত—রোগীদের করিডোরেও রাখা হচ্ছিল, এবং অ্যাম্বুলেন্স একের পর এক এসে পৌঁছাচ্ছিল। আমার মায়ের ওয়ার্ডে দুজন বিদেশি নার্স ছিলেন, যারা চমৎকার দক্ষতা ও সদয় ব্যবহারের মাধ্যমে সকল রোগীর সেবাদান করছিলেন।
তবে আমি আতঙ্কিত হয়ে লক্ষ্য করলাম যে কয়েকজন রোগী প্রকাশ্যে বর্ণবাদী মন্তব্য করছিলেন, এমনকি একজন উচ্চস্বরে বলছিলেন: “দেখো আমাদের এনএইচএসের-এর কী অবস্থা হয়েছে! বিদেশিরা দখল করে আছে এনএইচএস। ” এটি সত্যিই তিক্ত অভিজ্ঞতা ও হাস্যকর। আমি সেখান থেকে কৃতজ্ঞতা ও রাগ—দুই অনুভূতি নিয়েই বেরিয়ে এসেছিলাম।
জন হ্যারিসের নিবন্ধ সময়োপযোগী বলে মন্তব্য করেন লন্ডনের ওয়ারউইক হিলম্যান। তিনি বলেন অভিবাসী ও তাদের সন্তানরা শুধু এনএইচএসের-এরই মেরুদণ্ড নয় তারা আমাদের সমাজের শক্ত ভিত্তি। আমার দাঁতের যত্ন নেন একজন ভারতীয় দন্তচিকিৎসক। আমাদের ২০ বছরের ডাকপিয়ন চীনা, স্থানীয় ট্রেন স্টেশনটি ভোর রাত থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত খোলা রাখেন এক নাইজেরিয়ান নারী। আমাদের সুপারমার্কেটের ক্যাশিয়ারদের বেশিরভাগই দক্ষিণ এশীয়, আমাদের বিড়াল নিয়মিত টিকা পায় স্পেন, পোল্যান্ড ও ভারতের পশু চিকিৎসকদের কাছ থেকে। আমাদের স্থানীয় বাস চালকদের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে ঘানা, নেপাল, সোমালিয়া এবং আলবেনিয়া থেকে আসা ব্যক্তিরাও রয়েছেন।
এছাড়াও, পাঁচ বছর আগে আমি সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে আমার ফিবুলা ভেঙেছিলাম, যা দক্ষতার সঙ্গে সারিয়ে তুলেছিলেন একজন তুর্কি সার্জন। কিন্তু অভিবাসীদের নিয়ে যুক্তরাজ্যে এই অবমাননাকর চিত্রায়ণ অবশ্যই নিন্দনীয়।
লেখকঃ জন হ্যারিস
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
অনুবাদঃ এম.কে
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫