ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে হাজার হাজার মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অকারণে মারা যাচ্ছে। প্রথম বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় যুক্তরাজ্যে ক্যান্সারে মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি বলে প্রতিবেদন হতে জানা যায়।
ক্যান্সার রিসার্চ ইউকের সমীক্ষা অনুসারে, গত ৫০ বছরে ক্যান্সার রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণে পিছিয়ে পড়েছে যুক্তরাজ্য। চিকিৎসা বিলম্ব এবং রোগ নির্ণয়ে ধীরগতি হওয়াতেই মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ছে ইউকেতে।
আন্তর্জাতিক গবেষকদের মতে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নরওয়ে, ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডের তুলনায় যুক্তরাজ্য ক্যান্সার চিকিৎসায় অনেক পিছিয়ে আছে। ক্যান্সার চিকিৎসায় এই সাত দেশের মধ্যে যুক্তরাজ্যের অবস্থান সাতে।
ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে জানিয়েছে, ২০৪০ সালের মধ্যে প্রতি বছরে যুক্তরাজ্য প্রায় ২০,০০০ মৃত্যু এড়ানো সম্ভব হতে পারে। যার জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের উচিত একটি জাতীয় ক্যান্সার কাউন্সিল তৈরি করা।
প্রতিবেদন অনুসারে রোগ নির্ণয়ের গতি বাড়ানোর জন্য ২০২৯ সালের মধ্যে ১৬ হাজার পূর্ণকালীন দক্ষ ক্যান্সার কর্মীদের নিয়োগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এনএইচএস ইতিমধ্যে ২০২৮ সালের মধ্যে ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে ৭৫% ডায়গোনোসিস সম্পন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে। তবে দাতব্য সংস্থার মতে এনএইচএস তাদের টার্গেট বাস্তবায়নে সক্ষম হবে না।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ক্যান্সার একটি সমাধানযোগ্য সমস্যা। তিন দশক আগে যুক্তরাজ্য এবং ডেনমার্ক বিস্তৃতভাবে একই হারে ক্যান্সারের ফলাফলের উন্নতি করছিল। তবে ডেনমার্ক ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে গেলেও যুক্তরাজ্য এগিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রাক্তন জাতীয় ক্যান্সার পরিচালক অধ্যাপক স্যার মাইক রিচার্ডস বর্তমানে এনএইচএস ইংল্যান্ডের পরামর্শক হিসাবে কাজ করছেন। তিনি একটি ব্রিফিংয়ে বলেন, বেঁচে থাকার হার উন্নত করতে অনেক কাজ করার দরকার ছিল। ফুসফুসের ক্যান্সার নিয়ে রিচার্ডস বলেন, এনএইচএসের প্রয়োজন সিটি স্ক্যানার, রেডিওগ্রাফার, রেডিওলজিস্ট ও বক্ষ সার্জন।
ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে বলেছে, পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের এক বছরের মধ্যে সরকারের তামাকজাত পণ্য বিক্রির বয়স বাড়ানো উচিত। তাছাড়া চর্বি, লবণ এবং চিনির বিরোপ প্রভাব নিয়ে টিভি এবং অনলাইন বিজ্ঞাপনে প্রচুর মনযোগ দেয়াও প্রয়োজন।
ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে’র প্রধান নির্বাহী মিশেল মিচেল বলেছেন, “ ক্যান্সার আমাদের সময়ের একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। হাজার হাজার ক্যান্সার রোগীদের মৃত্যু এড়ানো সম্ভব। তবে তার জন্য সঠিক নেতৃত্ব, রাজনৈতিক ইচ্ছা, বিনিয়োগ এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতে সংস্কারের প্রয়োজন।
উল্লেখ্য যে, যুক্তরাজ্যে প্রতি দশজন ক্যান্সার রোগীর মধ্যে চারজনের রোগ প্রতিরোধযোগ্য ছিল। অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং ধূমপানের কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্যান্সারের রোগী। তাই সময় থাকতে সচেতন হওয়া সম্ভব হলে ক্যান্সার প্রতিরোধে উন্নত দেশের অবস্থানে নিজেদের নিয়ে যেতে পারবে যুক্তরাজ্য।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২৮ নভেম্বর ২০২৩